প্রত্যয় পশ্চিমবঙ্গ ডেস্ক : সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় আপত্তি জানিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সোমবার তাঁর সরকার এক নির্দেশিকায় জানায়, এবার দুর্গাপুজো বাড়িতেই করুন। কোনও প্যান্ডেল তৈরি করা যাবে না, বা বিসর্জনে শোভাযাত্রা করা যাবে না। অথচ, এই সরকারই রামলীলায় বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে। বলেছে, উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন উৎসব রামলীলা। তাই সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে এই উৎসব পালন করা যেতেই পারে।
ঠিক এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। অনেকে বলছেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার কি সবাইকে রামভক্ত বানাতে চায়? তাই কি এই নির্দেশিকা? তা হলে তো অন্য রাজ্যগুলিতে করোনা পরিস্থিতিতে রামলীলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন উৎসব জাতীয় উৎসবের মতো করে হয়। যেমন পশ্চিমবাংলায় দুর্গাপুজো, মহারাষ্ট্রে গণেশ পুজো, বিহারে ছটপুজো (সূর্য পুজো), ওড়িশায় রথযাত্রা প্রভৃতি। এই উৎসবগুলিতে সেই সেই রাজ্যের মানুষ আনন্দ–উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। কিন্তু ভারত যেহেতু একটি দেশ। তাই সেই দেশের সব রাজ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ বাস করেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন রাজ্যের উৎসব অন্য রাজ্যগুলিতেও সেই সেই রাজ্যের মানুষ নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী করে থাকেন।
পশ্চিমবাংলার বহু মানুষ উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত। কেন না, বহুকাল আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশে বহু বাঙালি বাস করেন। তাঁরা সাড়ম্বরে শারদোৎসবও করে থাকেন। সেই হিসেবে উত্তরপ্রদেশে সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলও মাঠে নেমে পড়েছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচন। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী বলে উল্লেখ করতে শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টির আঁচ যে বিজেপির ওপর মহলেও গিয়ে পৌঁছেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল মঙ্গলবার। অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন ওই দলের জাতীয় স্তরের অনেক নেতাই। গোপনে তাঁরা এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কাছ থেকে এই বিতর্কে কোনও ইতিবাচক সাড়া এখনও পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এদিন সরাসরি টুইট করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে উদ্দেশ্য করে। পরিষ্কার লিখেছেন, ‘দুর্গাপুজো বাড়িতে করার যে নির্দেশ উত্তরপ্রদেশ সরকার দিয়েছে, তা অন্যায় এবং অবাস্তব। কারণ, দুর্গাপুজো সর্বজনীন। যে ভাবে উত্তরপ্রদেশ সরকার সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে রামলীলা পালনের নির্দেশ দিয়েছে, ঠিক সেই ভাবে দুর্গাপুজো করার জন্যেও বাঙালিকেদের অনুমতি দেওয়া হোক। না হলে এই ঘটনা বাঙালির প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে। উত্তরপ্রদেশের বাঙালি হিন্দুরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে তাদের নির্দেশিকা পর্যালোচনা করার যে অনুরোধ জানিয়েছে, তা করেই বাঙালি হিন্দুদের দুর্গোপুজো আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হোক।’
এখন দেখার স্বপন দাশগুপ্তের এই টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, অথবা জবাব দেয়!