বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : নবান্ন অভিযান করতে গিয়ে আক্রান্ত বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের কর্মীরা। বামেদের তরফে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের লাঠিচার্জে বহু বাম কর্মী–সমর্থক জখম হয়েছেন। তারই প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট৷
বৃহস্পতিবার এ কথা ঘোষণা করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘আশা করব, নিজেদের পরিবারের ছাত্র ও যুবদের কথা ভেবে তৃণমূল সমর্থকরাও এই বনধে অংশ নেবেন।’ তাঁর অভিযোগ, এ দিন পুলিশি হিংস্রতায় বাম ছাত্র–যুব সংগঠনের বহু সমর্থক আহত হয়েছেন৷ গুরুতর আহত হয়ে অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি৷ পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদেই রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ বামেদের ডাকা এই বন্ধ সমর্থন করেছে কংগ্রেসও।
শুক্রবার বাম যুবদের নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কলকাতার ধর্মতলা চত্বর। অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের যুব কর্মীরাও। পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামানে বেশ কয়েক জন বাম ও কংগ্রেসের যুব কর্মী–সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপন, বেকারত্ব দূর করার দাবি–সহ একাধিক ইস্যুতে বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বাম এবং কংগ্রেসের ১০টি ছাত্র ও যুব সংগঠন। কলেজ স্ট্রিট থেকে মৌলালি হয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রোড ধরে একটি মিছিল পৌঁছয় ডোরিনা ক্রসিংয়ে। নবান্ন অভিযানে যাওয়ার কথা থাকলেও মিছিল এখানেই আটকে দেয় পুলিশ।
ডোরিনা ক্রসিংয়ে বাম যুবরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। ধুন্ধুমার বাঁধে ধর্মতলায়। অভিযোগ, তখন আধলা ইট ছুড়তে শুরু করেন বাম যুবরা। পালটা জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। তাড়া করে বাম কর্মী–সমর্থকদের পেটাতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি নেয় গোটা এস এন ব্যানার্জি রোড। কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো হয়। ঘটনায় কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও। এই ঘটনায় কার্যত অচল হয়ে যায় মধ্য কলকাতা। একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত জমায়েতে অশান্তি শুরু হয়।
এদিন বিকেলে সুজনবাবু বলেন, ‘বাম ছাত্র ও যুবরা ন্যায্য দাবি তুলেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, যাহা নবান্ন, তাহাই ছাপ্পান্ন। সেটাই প্রমাণ করে ছাড়ল পুলিশ। দিল্লিতে পেরেক পুঁতে একদিকে কৃষকদের রোখার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ছাত্র ও যুবদের ওপর লাঠি চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের নবান্ন অভিযানে ছাত্র ও যুবদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের মারে আহত অন্তত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’ এই পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে বামেরা। আরএসএস মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল বা শক্তি বাদ দিয়ে সব দলকে এই হরতাল সমর্থনের আহ্বান জানান সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, ‘আমরা বামফ্রন্ট এবং সমস্ত সহযোগীর সঙ্গে কথা বলেছি, শুক্রবার ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ও হরতাল পালন করা হবে। ওরা মিছিলের গতিপথ স্তব্ধ করতে চেয়েছে। শুক্রবার এ রাজ্যের মানুষ রাজ্যকে স্তব্ধ করবে।’ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এক বিবৃতি জারি করে বৃহস্পতিবারের ঘটনার সঙ্গে জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার তুলনা করে বলেছেন, ‘নবান্ন অভিযানে গিয়ে পুলিশের অত্যাচারে বাম সংগঠনগুলির প্রায় ১৫০ ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন।’ ইতিমধ্যে বামেদের ডাকা ধর্মঘট সমর্থন করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এক বিবৃতিতে এদিনের আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন।
অন্যদিকে, হরতালে জোর করে অবরোধ, দোকানপাট বন্ধ করা বা গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করা হলে পুলিশ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিন্হা রায়। শহরের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাড়ে তিন হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।