1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  4. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  5. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  6. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  7. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  8. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan : Rakibul Hasan
  9. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  10. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  11. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  12. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  13. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  14. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  15. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  16. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  17. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  18. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  19. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  20. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  21. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  22. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  23. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  24. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  25. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  26. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  27. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  28. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  29. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  30. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  31. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক
বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্প “ ঝরোনা” - দৈনিক প্রত্যয়

বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্প “ ঝরোনা”

  • Update Time : রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৬৬ Time View

ঝরোনা..
(সত্যের সাথে কিছুটা কল্পনার মিশেল)

শনিবার। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, একটু পরেই মাগরিবের আজান হবে। বাইরে উঠোনের তারে থাকা কয়েকটা শুকনা কাপড়ের দিকে হাত বাড়াচ্ছিলেন মারুফা বেগম। ঝর্না নাই, তাই এই কাজটা তার নিজেরই করতে হচ্ছে। তার মাথায় কাপড় দেওয়া, অবশ্য সবসময়ই তার মাথায় কাপড় দেওয়া থাকে। বয়স তার পঁয়ষট্টি হতে চলল। বড় ছেলে বিকেল বেলা তার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের গেলো, ঢাকা যেয়ে রাতের বাসেই নওগাঁ যাবে। তিনি উঠানে বেশ কিছুক্ষণ ধরে উঠানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। ছেলের বউ আর দুই সন্তানও চলে গেছে তার বাবার বাড়ি। আর দুই ছেলে ঢাকায় তাদের কর্মস্থলে। সব কাপড় নিয়ে শেষ কাপড়টার দিকে যখন হাত বাড়ালেন তখনই শুনতে পেলেন সেই কন্ঠ। ঝরোনা.. ঝরোনা…।। শীতল, তীক্ষ্ণ, অশিরিরি একটা কণ্ঠ। কাপড় তুলে নেওয়া শেষ না করেই পড়িমরি করে দৌড়ে ছুটে গেলেন ঘরের দিকে। পিছনে ঝুলতে থাকলো ফেলে যাওয়া টাওয়াল তার।

একদিন আগের ঘটনা। আড্ডা দিয়ে ঘরে ফিরছিল রায়হান। আগামী কাল আবার তার কর্মস্থল নওগাঁয় ফিরে যাবে সে। বন্ধুদের সাথে গত দুই সপ্তাহ দেখা হয়নি তার। তাই আজ তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ঘরে ফিরছিল সে। রাত তেমন একটা হয়নি, মোটে দশটা বাজে। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে অনেক বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। মানুষজন, রিকশা কোন কিছুই নেই। দোকানগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে ফেরার পথে বড় রাস্তা ঘেঁষা চারফুট উঁচু দেওয়াল ঘেরা কবরস্থান পরে। কবরস্থানটা আগে শহরে এক পাশেই ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শহর এর পরিধি বেড়ে যাওয়ায় কবরস্থানটা শহরের ভিতরেই পরে গেছে এখন। রায়হানকে সব সময় এই কবরস্থানের পাশ দিয়েই যাওয়া আসা করতে হয়। কিন্তু কখনই কোন কিছু তার মনে হয়নি বা ভয় লাগেনি। কিন্তু আজকের ঘটনা আলাদা। আজ মিজানকে আসরের নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে। মিজানের বাড়ি তার এলাকা থেকে একটু দূরে। তার জানাজা এলাকার মসজিদে হলেও কবর এখানে হয়। গ্রামের কবরে নাকি পানি উঠেছে। আজ কবরস্থানের কাছে আসার পর তার হৃদপিণ্ড খুব জোড়ে জোড়ে পাম্প করতে লাগলো, তার পা দুটো যেন অসাড় হয়ে আসছে কোনভাবেই সে হাঁটতে পারছে না সে। বাতাসের বেগ বাড়তে শুরু করেছে, হালকা বজ্রপাত হচ্ছে। কবরস্থানে যেন আরও জোড়ে বাতাস বইছে, তার মনে আতংক ভর করেছে, কবরস্থানকে অন্য সময়ের চেয়ে আরও বেশি অন্ধকার লাগছে তার কাছে। কেন এমন লাগছে সে বুঝতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারছে তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে সে দৌড় দিলো। কোন রকমের জোরে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে বাড়ি পৌঁছে জোরে জোরে দরজায় করাঘাত করতে লাগলো। মারুফা বেগম এতো জোড়ে শব্দ শুনে তার রুম থেকে বের হয়ে সামনের বারান্দার গেট খুলে উঠানে নেমে মেইন গেঁট খুললেন। রায়হান সাথে সাথেই ঢুকে পড়ল, গেইটে ঝুলানো তালাটা টেনে গেট লাগিয়ে দিলো। মাকে ঠেলে নিয়ে বারান্দায় গেইট দিয়ে ঢুকে তালা লাগিয়ে ঘরে ঢুকে মেইন দরজা লক করে তার রুমে চলে গেলো। অবাক ও চিন্তিত মায়ের কোন প্রশ্নের উত্তরই সে দিলনা।

পরদিন শনিবার। বিকেলে ঢাকায় চলে যাবে সে। টুকটাক কেনাকাটা করতে পাড়ার দোকানে গিয়েছিলো রায়হান। একটু পরেই হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলো সে।মারুফা বেগম উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি হয়েছে তোর কি হয়েছে?
রায়হান হাঁসফাঁস করতে করতে কোন রকম উত্তর দিল
: শুনেছেন মিজানের লাশ গায়েব, আজ সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
: কি বলিস!
: হ্যাঁ ওর বাবা সকাল বেলা কবর জিয়ারত করতে এসে কবর ফাঁকা, কিছুই নেই।
ধড়াস করে উঠলো মারুফা বেগমের বুকের ভিতর। মিজানের জন্যে কষ্ট হচ্ছিল তার, সাথে কিছুটা ভয়।

মারুফা বেগমের বাড়িটার পরিধি বিশাল জায়গা নিয়ে হলেও মুল বাসাটা ছোট। উঁচু দেওয়াল ঘেরা বাড়িটার অনেকটা জায়গা জুড়ে বাগান,আর তার এক কোনায় তার ছোট বাসা। বাগানে বড় বড় সব ফলের গাছ। মারুফা বেগমের স্বামী এসব গাছ নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন। ভোগ করতে পারেননি কিছু, তার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আশে পাশে অনেক বহুতল বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ঘন গাছ পালার জন্য বাইরে থেকে থেকে ভিতরের কিছুই দেখা যায়না বললেই চলে। দিনের বেলাতেও বাড়িটাতে একটা গা ছমছমে ভাব থাকে। বলতে গেলে এ বাড়িতে তিনি একাই থাকেন।
তার বড় ছেলে দুই এক সপ্তাহে বাড়ি আসে। বউ আর তাদের ছোটো দুই ছেলে মেয়েও তখন বাড়ি আসে। বউ চাকরি করে বলে একই শহরে বাবার বাড়ি থাকে, স্বামী চলে গেলে সেও চলে যায়, তার বোনেরা বাচ্চাদের দেখা শোনা করে। মারুফা বেগমের অন্য সন্তানেরা মাসে একবার আসার চেষ্টা করে। তাই বেশির ভাগ সময় এই নীরব বাড়িটায় একাকীই থাকতে হয় তাকে। তাকে একা পেয়ে কোন কাজের মহিলাই ঠিক মত কাজ করে না। কেউ কেউ তো বাড়ির গিয়ে এক সপ্তাহের আগে ফিরে না।
মারুফা বেগম সব দিনই ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে পরেন। অজু করে নামাজ পরেন। এরপর দীর্ঘ সময় কোরান পরেন, দোয়া দুরুদ পরেন। তারপর আরও কিছু নফল নামাজ পড়ে চা খান। কিন্তু ঘরে কাজের মেয়েটা থাকা সত্ত্বেও চা রেডি পান না কখনই। এই মেয়েটাকে সকাল আটটায় ডাকতে শুরু করলে নয়টার আগে উঠেনা কখনো, তাই মারুফা বেগমের সকালের নাস্তা খেতেও অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই তিনি প্রায়ই রান্নাঘর ফ্রিজ খুঁজে নিজেই কিছু খেয়ে নেন। আগের মেয়ে টাকে নিয়েও তার একই সমস্যা ছিল। এই মাস খানেক হলো নতুন আসা ঝর্না নামের মেয়েটা আরও বেশি যন্ত্রণা করছে। বছর বাইশ তেইশ হবে বয়স, চেহারা ছবি খারাপ না, বিয়ে হয়েছিলো। পাঁচ বছরের একটা ছেলেও আছে। স্বামী দোকানদার। স্বামী নাকি তাকে পছন্দ করেনা, মারধর করে, টাকা পয়সা চায়, কিন্তু চায় না শুধু তাকে। মাস তিনেক ধরে বাপের বাড়িতে আছে সে। তার ছেলে তার স্বামীর সাথে গ্রামেই থাকে। ঝর্নার বাবা বেঁচে নেই, ভাইয়ের সংসারে মা আছে। অবস্থা তেমন ভালো না। তাই ঝর্নাও বোঝা না হয়ে থেকে শহরে বাসা বাড়িতে কাজে চলে এসেছে গ্রামেরই এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে। কিন্তু কাজে তার মনোযোগ কই। কাজের চেয়ে আরামেই দিন কাটছে তার।

রায়হানের ফোন এসেছে। কে যেন আসবে নারকেল গাছ পরিষ্কার করতে। বর্ষার আগেই কাজটা করার কথা থাকলেও করা হয়নি। মারুফা বেগম রান্নাঘরে গেলেন ঝর্নাকে খুঁজতে। কিন্তু ঝর্না কোথায়? তেইশ বছরের তরুণী মেয়ে, প্রজাপতির ডানা তার, ঘুরে বেড়াচ্ছে উঠোনে। গেইটে নক হলো, বিশাল কালো গেইট, বাইরে থেকে নোটিশ করার মত। ঝর্না দরজা খুলে দিলো। বছর পঁচিশের শ্যাম বর্ণের একটা ছেলে একটু উঁকি দিলো।
সালাম দিয়ে বলল : চাচি ভাইজান কি কিছু কইসে আপনেরে নাইরল গাস কাডার কতা? মারুফা বেগম মাথা নাড়িয়ে ভিতরে আসতে বললেন। ছেলেটার পড়নে মলিন একটা জিনস আর গেঞ্জি, চেহারা ভালোই। ঝর্নাকে রান্না ঘরে পাঠিয়ে ছেলেটাকে নারকেল গাছ গুলি দেখিয়ে তিনি নিজেও ঘরের ভিতরে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর টাকা নিয়ে ফিরে মারুফা বেগম দেখেন ঝর্না আর ছেলেটা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, ছেলেটা কি যেন বলছে আর ঝর্না হাসিতে লুটিয়ে পড়ছে। একটু রাগ হলো মারুফা বেগমের, রান্নাঘর থেকে কখন বের হলো ঝর্না ! রান্নাঘর থেকে উঠানে বের হবার আরেকটা দরজা আছে। সেদিক দিয়েই বের হয়েছে সে, তাই দেখতে পাননি তিনি।
হালকা রাগের সুরে বারান্দা থেকে ডেকে বললেন এই ছেলে এখানে এসো, কি যেন নাম তোমার?
চাচি আমার নাম মিজান।
টাকা নাও মিজান, ঝর্না গেট বন্ধ করে দাও।

এরপর থেকেই কাজকর্ম থেকে পুরোপুরি মন উঠে গেলো ঝর্নার। ঠিকমতো রান্না করে না, ঘর পরিষ্কার করে না। উঠানে পরে থাকে, ডাকলেও কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তার নিজের ফোনে কথা বলে প্রায়ই। মারুফা বেগম এখন দুপুরের খাওয়াও টাইম মতো খেতে পান না। খুবই যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে গেছেন তিনি। কেন এত ব্যস্ত থাকে, কার সাথে কথা বলে সে কোন আইডিয়া করতে পারেন না তিনি।
দিন গেল আরও কিছু। মারুফা বেগম জোহরের নামাজ পড়ছিলেন, কিন্তু মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বারবার। ঝর্না গেছে গোসল করতে। উঠানের এককোণে আলাদা একটা বাথরুম আছে। একটানা ফোনর রিং বেজেই চলছিল ঝর্নার। আবার মনে হলো বাইরের গেইটে কেউ হালকা ভাবে নক করছে আর ডাকছে ঝরোনা…. ঝরোনা..। সুনসান নীরব বাসা, গাছের একটা পাতা পরলেও শোনা যায়। মারুফা বেগম মনে হয় এবার কিছু একটা আঁচ করতে পারলেন।
ঝর্না গোসল শেষ করে ফিরে এলে মারুফা বেগম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কে তোমাকে এতো ফোন করে, তোমার স্বামী না তোমার সাথে যোগাযোগ করে না। আর কেউ তোমার নাম ধরে ডাকছিল বাইরের রাস্তা থেকে। কে সে?
কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল ঝর্না, বললঃ খালাম্মা এইতা কিতা কইন আমারে কেডা ফোন করবো? কেডা আমারে ডাকবো? এই নো কেডা আমারে চিনে?
আর কথা বাড়ালেন না তিনি, ওর সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই বুঝে গেলেন তিনি।
দিন গেল আরও কিছু দিন। উঠানো হাঁটাহাঁটি করছিলেন মারুফা বেগম হঠাৎ শুনতে পেলেন গেঁটে খুব হালকা করে টোকা দিলো কেউ এবং সেই সাথে নিচু কণ্ঠস্বরে কেউ ডাকল ঝরোনা….. ঝরোনা…..। সাথে সাথেই গেট খুলে ফেললেন এবং যা দেখলেন তার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। গেইটে দাঁড়িয়ে আছে মিজান। প্রচণ্ড রাগ হলো তার। তাহলে এই মিজানের সাথেই ফোন কথা বলে ঝর্ণা! কিন্তু তিনি সে মানুষ না তিনি রেগে গেলে উঁচু গলায় কথা বলবেন বা কাউকে রাগ দেখাবেন। তিনি শুধু বললেনঃ তুমিই তাহলে ঝর্নাকে কে ফোন করো আর এখানে এসে ডাকাডাকি করো? মিজান মাথা নত করে রাখল, লজ্জা লজ্জা ভাব তার মধ্যে।
তিনি আরো বললেন তুমি কি জানো ঝর্নার স্বামী আছে বাচ্চা আছে ? মিজান এখনও চুপ করে থাকলো, তার জানা আছে কি জানা নেই মারুফা বেগম বুঝতে পারলেন না। মারুফা বেগম এবার নিজেই চুপ করে গেলেন। আর কি বলবেন খুঁজে পাচ্ছিলেননা। রাস্তা দিয়ে এলাকার কয়েকজন যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে গেল। মারুফা বেগম চাচ্ছেন না কোন ঝামেলা হোক। কিন্তু ওদের মাঝে বয়স্ক একজন জিজ্ঞেস করেই ফেলল
: আপা কিছু হয়েছে? মারুফা বেগম কি উত্তর দিবেন প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলেন না, তারপর বলেই ফেললেন
: দেখেন তো এই ছেলেটা আমার বাসার কাজের মেয়ে কে ফোন করে, বাসার সামনে এসে ডাকাডাকি করে। মিজানের মাথা আরও নত হয়ে গেলো। মুরুব্বি গোছের একজন বললেন
: দেখো আমি কিন্তু তোমার বাবারে চিনি। আমরা তোমাকে না করলাম তুমি যেন এই বাসার সামনে আর না আসো, ফোনও করবানা। তোমার বাবা মাকে কিন্তু জানিয়ে দেবো। মিজান এখনও চুপ করে থাকলো।

ফোন আসা বন্ধ হয়নি, মাঝে মাঝে ঝর্না কে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে চরম হাসি হাসি মুখে সে কথা বলে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে একটু একটু রাগারাগি করছে। মারুফা বেগম বুঝে গেলেন ঝর্নাকে ফেরত পাঠাতে হবে, বড় রকম ঝামেলা বাধানোর আগেই এবং ঝর্নাকে না জানিয়েই।

ঝর্নার ভাই এলো খবর পেয়ে, রেগে আছে সে। বোনকে আবার ফিরিয়ে নিতে হবে। বোনের ঘটনা তার মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে। মারুফা বেগম ঝর্নাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। তিনি আর সমস্যা বাড়াতে চান না। ঝর্না বাসা থেকে পালিয়ে গেলে তিনি নিজেই বিপদে পড়তেন। নতুন কোন মেয়ে আসার আগে তাকে কিছু দিন একাই থাকতে হবে।

বর্ষাকাল এখন। যখন তখনি ঝড় বৃষ্টি আসে। খুব একটা কাজ পাওয়া যায় না বললেই চলে। মিজানকে অনেক রকম কাজই করতে হয়। আজকের মিজানের ডাক এসেছে একটা বড় বাগান থেকে। ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে, কেটে সরিয়ে দিতে হবে। মন তেমন ভালো নাই তার। দুদিন ধরে ফোন বন্ধ পাচ্ছে ঝরোনার। যোগাযোগ করার কোন উপায় নেই। ওই বাড়ির সামনে দিয়ে দুই একবার ঘুরেও এসেছে সে, কিন্তু ডাকার সাহস পায়নি। বাগানে ঢুকল মিজান। বেশ কিছু গাছের ডাল ভেঙে গাছের সাথে লেগে আছে। আবারও ঝর্নার কথা মনে হলো তার। আকাশ আবার গভীর কালো মেঘে ছেয়ে গেলো, দেখতে দেখতে অন্ধকার হয়ে গেলো চারদিক। দমকা হাওয়া বইতে লাগলো। কড় কড় করে বাজ পড়তে শুরু করলো। মিজান ঝর্নার চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। বাজের শব্দে তার চিন্তায় ব্যাঘাত হলো, বাগান থেকে বের হয়ে আসবে কিনা ভাবল। কিন্তু মিজানের ভাবনা শেষ হতে পারেনি। এবার প্রচন্ড জোড়ে কান ফাটিয়ে বাজ পড়লো, সেই বজ্রপাতে মিজানের সকল চিন্তা এবং সাথে মিজান নিজেও জ্বলে গেল।

মিজানের বাড়িতে শোকের ঝড় বইছে। মিজানের মা একটু পর পর মূর্ছা যাচ্ছে, আর বাবা কপাল চাপড়ে কাঁদছে, জোয়ান ছেলে মারা গেছে তার। পাড়া-প্রতিবেশীতে ভরা তাদের বাড়ি এখন।
পাশের বাড়ির কাদের মিয়া নিচু স্বরে ডাকল মিজানের বাবাকে। বলল তার সাথে দুজন লোক দেখা করতে চায়। খুব নাকি জরুরি ব্যাপার, মিজানকে নিয়ে কিছু বলবে। চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির পিছনে আসে সে। দুই জন লোক দাঁড়িয়ে, ঠান্ডা তেমন কিছু না, তাও শরীর চাদর দিয়ে ঢাকা। একজন খুব শান্ত ভাবে বলল
: আপনার ছেলে নাই এখন, তাই সাহায্য করতে এসেছি একটু।
: কি সাহায্য?
: ছেলে বেঁচে নাই আপনার, চলার জন্যতো টাকা লাগবে আপনার। আপনাকে আমরা এক লাখ টাকা দিতে পারি।
: টাকা দিবেন কেন?
: আপনার ছেলে বাজ পরে মরে গেছে।
: হু
: তার শরীরটা আমাদের দিয়ে দেন।
: আল্লাহর গজব পড়ুক আপনার উপরে, মিজানরে বেচুম না আমি।
: দেড়লাখ দিমু।
: চইলা যান, নইলে লোক ডাকুম।

গভীর রাত। মিজানের শরীর দাফন হয়েছে ঘন্টা দশেক আগে। দূর থেকে চার জোড়া চোখ সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছিল। একটানা ঝিরঝির বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে। আশেপাশে কেউ কোথাও নেই। কবস্থানে গাঢ় অন্ধকার। হালকা বৃষ্টি অবস্থানকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। আপাদ মস্তক চাদরে মোড়া দুটো মানুষ হাতে শাবল আর বেলচা নিয়ে কবরস্থানে ঢুকল। দুই পাশের সারি সারি কবর পেরিয়ে মিজানের কবরের প্রায় দশ ফুট দূরে এসে দাঁড়ায় তারা। বাঁশের বেড়া ছিল না কবরে, মিজানের বাবার ওই ক্ষমতা নেই। কবরের কাছে হাঁটা শুরু করেও থেমে যায় তারা। দৃষ্টি বিনিময় করলো একজন অন্যজনের সাথে। হঠাৎ প্রচণ্ড ভয় কাজ করল ওদের মাঝে, কবরের মাটি মনে হোল একটু একটু কাঁপছে। খুব জোড়ে বাতাস বইতে শুরু করলো। ঘন ঘন বজ্রপাত হতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে কবরের মাটি দুই পাশে সরে যেতে লাগলো। হঠাৎ দুটি হাত বেরিয়ে এলো, ধীরে ধীরে মাথা পিঠ এবং কোমর। শরীরটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো শরীরটা। একটু দাঁড়িয়ে থাকল, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল ওদের দিকে, তারপর সাদা কাপড়ে মোড়ান অবস্থায় ধীরে ধীরে হেঁটে চলে গেলো। সব কিছু আবার শান্ত হয়ে এলো, শুধু দাঁত কাঁপার শব্দ। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল মিজানের শরীর বের করে নিয়ে আসা কবর থেকে। এই কাজটা তারা আগেও করেছে এবং শরীর বের করে নিয়ে এসে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছে। বজ্রপাতে মৃত শরীরের উচ্চ দাম আছে। বেঁচে থেকে যে শরীরের দাম থাকেনা মৃত্যুর পরও কিছু কিছু শরীরের দাম অনেক উঁচু হয়ে যায়। কিন্তু আজ প্রথম তারা যা দেখল তারা তাদের স্তম্ভিত করে দেয়। যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, চেষ্টা করে কালেমা পড়তে। কিন্তু ওদের মুখ দিয়ে বের হয় না । যে দৃশ্য তারা দেখল আর কখনো লাশ চুরি করতে আসবে না।

দরজা জানালা ভালোভাবে চেক করে মারুফা বেগম লাইট অফ করে শুয়ে পড়লেন। ঘুম আসছিলনা তার।সন্ধ্যার কথা মনে হচ্ছে বার বার। সত্যিই কি কিছু শুনে ছিলেন তিনি? সারা দিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে আসতে লাগলো। আবার মনে শুনতে পেলেন সেই কন্ঠ। ঝরোনা…ঝরোনা…। কণ্ঠস্বর এবার তার খুব কাছ থেকে শোনা গেলো। এবার আর ঝর্নার নাম ধরে ডাকছে না সে কণ্ঠ। কেমন যেন কান্নার মত শব্দ হচ্ছে, গভীর কষ্ট, অতৃপ্তি, না পাওয়ার বেদনা, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার শোক থেকে যেমন কান্না আসে তেমন।কিছুক্ষণ পরেই কান্না বদলে যেয়ে প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে সে স্বর। রাগে ক্ষোভে যেন ফেটে পড়ছে সেই স্বরের মালিক, প্রতিশোধের স্পৃহা তার মনে। অজানা একটা আতঙ্ক তাকে গ্রাস করল মারুফা বেগমকে, ভয়ে শরীর শক্ত হয়ে গেলো। চিৎকার করতে যেয়েও করতে পারলেন না। মুখের উপর তপ্ত নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেলেন…। প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে মিজান।

(মিজান নামটি কাল্পনিক। বাস্তবের ছেলেটির সত্যিই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় এবং তার লাশ কবর থেকে চুরি হয়ে যায়)

লেখিকা:সাদিয়া আফরোজ লুনা

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..