বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে বিজেপিতে কোন্দল ততই বাড়ছে। আর সেই ব্যাপারেই মঙ্গলবার খোঁচা দিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহান। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই জিতলে কাকে মুখ্যমন্ত্রী কাকে করবে, সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পাচ্ছে না তারা।
উল্লেখ্য, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে এর আগে শোনা গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং তাত্ত্বিক নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কে যে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন, সে ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। আর, এ বিষয়ে সৌরভ, স্বপন বা অনির্বাণও সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। সূত্রের খবর, এরই মধ্যে নিজের নামটি অতি সতর্ক ভাবে আসরে ভাসিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাই বিজেপিতে কোনও হেভিওয়েট নেতা বা ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তিনি আড়াল থেকে বিরোধিতাই করে যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যে একটি সূত্র জানিয়েছে, সেই কারণে মুকুল রায়, সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিং বা শোভন চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে তিনি বারবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকী, এমন কথাও শোনা গিয়েছে, দিলীপ ঘোষের ব্যবহারের কারণেই নাকি তাঁরা এতটাই বিরক্ত যে, আর বিজেপিতেই থাকতে চান না। শুধু তাই নয়, তাঁরা তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলেও শোনা গিয়েছে। কেবল কেন্দ্রীয় নেতা এবং অরবিন্দ মেননের সক্রিয়তায় তাঁরা এখনও বিজেপিতে রয়েছেন। এর মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন তথাগত রায়।
মঙ্গলবার ফেসবুক–সহ সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য অপশনগুলিতেও বেশ কিছু বিজেপি কর্মী–সমর্থক বিজেপির ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তথাগত রায়কে চাই’ বলে অসংখ্য পোস্ট করতে শুরু করে দিয়েছেন। আর তথাগত রায় তো আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল যদি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে, তা হলে সেই দায়িত্ব নিতে তাঁর আপত্তি নেই। পাশাপাশি তথাগত রায় যেমন জ্ঞানী মানুষ, তেমনই স্পষ্টবক্তা। রাজনীতিতে প্রবেশের মুহূর্তেই তিনি দিলীপ ঘোষের কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ‘আজেবাজে বা যুক্তিহীন মন্তব্য সাধারণ বাঙালি গ্রহণ করে না।’
দিলীপ ঘোষের আপত্তিকর মন্তব্যকে তিনি যে সমর্থন করেন না, তা সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন। দলের অন্য কোনও নেতা সেই সাহস না দেখালেও তথাগতবাবু সে কথা বলতে দ্বিধা করেননি। অন্যদিকে, তথাগতবাবুর মতো হেভিওয়েট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও মন্তব্য করার সাহসও দেখাতে পারছেন না দিলীপবাবু। রাজ্য বিজেপির এই কোন্দল যে কেন্দ্রীয় নেতারা সমর্থন করছেন না, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র কথা। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, তাঁদের প্রধান নেতা নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে নেতা করেই বিজেপি নির্বাচনে লড়াই করে। বাংলায়ও তাই হবে। নির্বাচনের পর কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা চূড়ান্ত করা হবে।
আর এই বিষয়টিকেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে না বিজেপি। তাই নরেন্দ্র মোদির ছবি নিয়ে লড়াই করতে নামছে। এটাই বিজেপির আসল ছবি। আসলে তারা ভয় পেয়েছে। বাংলায় লড়াই করার মতো সাহস বা শক্তি তাঁদের নেই।’ নুসরতের এই টুইট নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নুসরতের কটাক্ষের জবাবে বিজেপি কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।