বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পশ্চিমবাংলায় হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর আঁচ পৌঁছে গেল রাজধানী দিল্লিতেও। মঙ্গলবার যেমন রাষ্ট্রপতির কাছে দেখা করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিজেপি প্রতিনিধিরা, তেমনই বুধবার সেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গেই দেখা করে বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে আসেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। আবার বুধবারই বিজেপির সেই প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান।
‌
বিধায়কের রহস্যমৃত্যু নিয়ে এবার রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই চিঠি নিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে পৌঁছে দিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। বিধায়কের মৃত্যুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করছে বলে বিজেপির বিরুদ্ধে চিঠিতে অভিযোগ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ওই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, এটি সম্ভাব্য আত্মহত্যার ঘটনা। এর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের যোগও থাকতে পারে। এ ছাড়া বিধায়কের তত্ত্বাবধানে থাকা মিনি ব্যাঙ্কের আর্থিক লেনদেনে গরমিলের কথাও রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন স্বয়ং ডেরেক।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে বিজেপির এক প্রতিনিধি দলও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিল। তারা বিধায়কের মৃত্যুকে ‘রাজনৈতিক খুন’ বলে দাবি করে ঘটনার সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়ে আসে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ছাড়া বাবুল সুপ্রিয়, অরবিন্দ মেনন, রাজু বিস্ত এবং স্বপন দাশগুপ্ত। সিআইডি তদন্ত যে নিরপেক্ষ হবে না, তারা যে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে এবং শাসক দল তৃণমূলের স্বার্থ রক্ষা করতেই তদন্ত করবে, সে কথাও বিজেপি নেতারা রাষ্ট্রপতিকে জানান। পশ্চিমবাংলায় রাজনৈতিক হিংসা বেড়ে চলায় বিধানসভা ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করারও দাবি জানান তাঁরা। রাষ্ট্রপতি দু’দিনে দুই পক্ষের সমস্ত অভিযোগই মন দিয়ে শুনেছেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি ফের বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও তারা বাংলার সরকার ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান।

বিধায়কের রহস্যমৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি লিখেছেন রাষ্ট্রপতিকে, সেই বক্তব্য মানতে রাজি নন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি ইঙ্গিতবহ ভাবে একটি মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ এমন এক রাজত্বে পরিণত হয়েছে, যেখানে নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত জানানোর মতো মানুষের নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও নেই। ভোটদানের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে এই রাজ্যেই মানুষকে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়ে যেতে হয়। দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মতো একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দেহ নিজের বাড়ি থেকে অনেক দূরে ঝুলন্ত ও হাত–পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন গণতন্ত্রের ধামাধারীদের মৌনব্রত ভয়ঙ্কর শঙ্কিত করে।’ পাশাপাশি তিনি এদিন ফের স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে অন্য কোথাও খুন করে আরেক জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। আর এই কাজটা পুলিশই করেছে। তাঁর পকেটে সুইসাইড নোট তারাই ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা পুলিশেরই অভ্যন্তরের খবর। এই খবর চাপা দিতেই রাজ্য সরকার এই ঘটনার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।’

আবার, এদিনও বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রধান প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যু ও মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। এই ধরনের মানসিকতা বিজেপি ছাড়া আর কারও থাকতে পারে না। যারা ময়নাতদন্তকে স্বীকার করে না, তারা রাষ্ট্রকেও অস্বীকার ও অমান্য করে। বিজেপি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছে কেন, তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘেও যেতে পারে। তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না।’ এদিকে বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় আটক হওয়া নিলয় সিংকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। প্রয়াত বিধায়কের সুইসাইড নোটে তার নাম উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। আরেক সন্দেহভাজন মাবুদ আলিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।