বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:সোমবার বিশ্বভারতীতে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানাল বিশ্ববিদ্যালয়। ঘটনার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছে তারা। হামলার প্রতিবাদে কর্তৃপক্ষের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ ঘণ্টা অনশনের ডাকও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের এক বিধায়ক ও দুই বিদায়ী কাউন্সিলর। তাই কর্তৃপক্ষের তরফে বিস্ময় প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনায় বিশ্বভারতীরই উপাচার্য–সহ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। তাই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে ওই এফআইআর প্রত্যাহারের আর্জি জানানো হয়েছে।
অবশ্য রবি ও সোমবারের ঘটনার জন্য মঙ্গলবার শান্তিনিকেতন থানায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি–সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। তবে সোমবার বিশ্বভারতী কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় এবং রাজ্যের সর্বত্র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শেষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে ওইদিনই রাতে আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, শান্তিনিকেতনের ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় ফের চিঠি লিখেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি রীতিমতো চাঁছাছোলা ভাষায় লিখেছেন, ‘সোমবার বিশ্বভারতীতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে আমার। ওই ঘটনা রাজ্যের প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, গুন্ডাদের হাত থেকে কবিগুরুর প্রিয় স্থান, বাংলার গর্ব শান্তিনিকেতনকে রক্ষা করতে পুলিশ ও প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে কী ভাবে পুলিশের রাজনীতিকরণ হচ্ছে! আমি চাই, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী সক্রিয় পদক্ষেপ করুন।’
তবে রাজ্যপালের এই চিঠি লেখাকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, ‘সোমবারও তো তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তো বিষয়টি জেনেছেন। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। তা হলে তাঁকে ফের চিঠি লেখার অর্থ কী?’ অন্যদিকে, বহিরাগতরা কী করে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালাল, তার নিরপেক্ষ তদন্ত চাইলেন কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, বিশেষ কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টের নজরদারিতে সেই তদন্ত কড়া ভাবে হোক। তা হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে সেখানে কী কী ঘটনা ঘটেছিল, কারা এসে গোলমাল করেছে! শুধু তাই নয়, বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে গন্ডগোল করা সত্ত্বেও পুলিশ কী করে নিরুত্তাপ থাকে, সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে হবে ওই তদন্তে। এই তদন্ত চেয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টেই একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন।
সোমবারের ঘটনা নিয়ে এবার মুখ খুলেছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ‘এই ঘটনার পেছনে তৃণমূল এবং এখানকার সরকারের হাত রয়েছে। ঘটনার পেছনে রয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল জেলা সভাপতি। এক বিধায়ক নিজে গিয়ে দেওয়াল ভেঙে দিচ্ছেন! ভেবে দেখুন অবস্থাটা! বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে সেখানে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থাই রাজ্য সরকার করেনি। এই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা কোথায় পৌঁছেছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘রাজ্য সরকারের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ইতিমধ্যে তৃণমূলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। তাই সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে ধরনায় বসছেন। কিন্তু শান্তিনিকেতনে উপাচার্যের বাধায় বিশ্বভারতীকে পার্টি অফিস বানাতে পারেনি তৃণমূল, তাই তাঁর ওপর হেনস্থা করা হচ্ছে।’