পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা:কাঁথিতে গিয়ে এমন কথা বললেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, যা নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গুঞ্জন তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে দলের কেউই কোনও মন্তব্য করেননি। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিবিলের সমর্থনে কাঁথিতে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। সেই পদযাত্রায় অংশ নিতে এদিন কাঁথিতে আসেন বিজেপি নেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক সেই কাঁথিতে দাঁড়িয়েই লকেট বলেন, ‘ভোটের আগে আপনাদের এই কাঁথিতে আর একজনও তৃণমূলে থাকবেন না। দেখবেন, তখন সবাই বিজেপিতে চলে এসেছেন। কাঁথির সমস্ত বিধানসভা আসনই বিজেপি পাবে। তৃণমূল একটা আসনেও জিতবে না।’
এখানেই থেমে থাকেননি লকেট। পরে নিজের বক্তব্যকে আরও সম্প্রসারিত করেন। বলেন, ‘শুধু কাঁথি বা পূর্ব মেদিনীপুর নয়, পুরো বাংলাতেই দেখবেন তৃণমূলের ঘর ফাঁকা হয়ে যাবে। কেউই আর ওই দলে থাকবে না।’ এর পরই লকেটের বক্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায় বাংলার রাজনীতিতে। অনেকেই মনে করছেন, কাঁথি নিয়ে বলতে গিয়ে কি শুভেন্দু অধিকারীকেই ইঙ্গিত করেছেন লকেট? উল্লেখ্য, প্রায় দেড় বছর ধরে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সমীকরণটা ঠিক ইতিবাচক নেই। এখন তো দুই তরফে ব্যবধান অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শুভেন্দু অধিকারী হয়তো ধীরে ধীরে বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সরাসরি কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু লকেটের কথায় সেই জল্পনাই ফের শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু তাঁর মন্তব্যে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল একটু হলেও চাপে পড়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
যদিও লকেট নিজের বক্তব্য আরও পরিষ্কার করে জানাতে দ্বিধা করেননি। তিনি বলেন, ‘এখন সারা রাজ্যেই বিজেপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই কাজে তৃণমূলকে পুরোপুরি সাহায্য করছে পুলিশ ও প্রশাসন। কখনও গাঁজা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কখনও পাচারের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের। আবার কখনও কখনও বিজেপি নেতা ও কর্মীদের খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে আত্মহত্যা করেছে। আর সেইজন্য নানা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই কাজ আর বেশিদিন করতে পারবে না। ভোটের আগেই বুঝতে পারবেন, তখন তৃণমূলে ক’জন থাকবেন, তা আঙুলে গুণে বলে দেওয়া যাবে।’ এর পর তিনি তৃণমূলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর যে সব বিজেপি কর্মীর ওপর প্রশাসন মিথ্যা মামলা করেছে এবং যাঁদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, প্রতিটি ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’
পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি তাঁর বাবা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীও জনপ্রতিনিধি। শিশির অধিকারী আবার জেলার তৃণমূল সভাপতিও। তিনি লকেটের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘বিধানসভা ভোটের আগে দেখবেন বিজেপিই বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে। মনে রাখবেন, এটা ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। এখানে বিজেপির কোনও চিহ্ন থাকবে না।’