আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অগণিত নেয়ামত দান করেছেন। বিশ্বের সকল মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও সেসব নেয়ামতকে গণনা করে শেষ করা যাবে না।
নেয়ামতের কথা চিন্তা করলে প্রত্যেক ব্যক্তি প্রথমে নিজের দেহের কথাই ভাবতে পারে। রাব্বুল আলামিন তাঁর মহা অনুগ্রহে মানুষের দেহে যে প্রাণ সঞ্চার করেছেন সেটিও বড় একটি নেয়ামত। দেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শিরা উপশিরায় নেয়ামত আর নেয়ামত। মানুষের আপাদমস্তক পুরোটাই মহান রবের মহা নেয়ামতে ভরপুর। জীবনভর গণনা কিংবা চিন্তা গবেষণা করে এ নেয়ামতের প্রকৃত সংখ্যা কখনই বের করা সম্ভব নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “ যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা আন নাহল: আয়াত: ১৮)। মানুষের দেহের বাহিরে ভোগ্য অভোগ্য, দৃশ্যমান আদৃশ্যমান অসংখ্য নেয়ামত যা মুলতঃ মহান আল্লাহপাকেরই মহা অনুগ্রহ, মহাদান। এসব নেয়ামতের অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর কাছে চায়, আবার কোনটি না চাইলেও মহান রব তার বান্দাহদেরেকে আপন অনুগ্রহে দান করেন।
আল্লাহপাক বলেন, “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। (সুরা ইবরাহিম: আয়াত: ৩৪)। “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জ¦ল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে। (সুরা লোকমান: আয়াত: ২০) পবিত্র কোরআনের আয়াত সমুহ পর্যালোচনা করে আমরা যে সকল মহা নেয়ামত দেখতে পাই তা হলোঃ
১. মানবজাতির সৃষ্টির সেরা জীব হওয়া।
২. বাকশক্তি ও বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া।
৩. সুন্দর দেহাবয়ব ও মুখাবয়ব সম্পন্ন হওয়া।
৪. আবেগ ও বিবেক সম্পন্ন হওয়া।
৫. বিভিন্ন ভাষাভাষী ও বিভিন্ন জাতিভুক্ত হওয়া।
৬. দৈহিক ও মানসিক বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকা।
৭. কর্মঠ ও কর্মতৎপর হওয়া।
৮. সর্বদৈহিক সুস্থতার পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা লাভ করা।
৯. সুখময় দাম্পত্য জীবন লাভ করা, নেক্কার স্ত্রী ও সন্তান লাভ করা।
১০. সুন্দর, সুরম্য ও পরিচ্ছন্ন আবাসস্থল ও গাড়ির মালিকানা লাভ করা।
১১. বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী ও চিন্তাশীল হওয়া।
১২. সুখ সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গঠনের নিমিত্তে নেতৃত্ব লাভ।
১৩. চিন্তাশীল সৃষ্টিশীল গবেষক হওয়া।
১৪. সাবভৌম রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে চলা বলার অবারিত সুযোগ লাভ করা।
১৫. কোন রকমের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বীয় ধর্ম, কৃষ্টি কালচার পালনের সুযোগ লাভ করা।
১৬. আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সকল সুযোগ সুবিধা লাভ করা।
১৭. আত্মিক ও মানসিক শান্তি লাভ করা।
১৮. সকল প্রকার হুমকি ধমকি থেকে সার্বিক নিরাপত্তা লাভ করা।
১৯. নিজের ব্যক্তিত্ব তথা ইজ্জত সম্মান, যশ খ্যাতি লাভ করা।
২০. নিজের জীবনকে আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালনা করা।
উপরোল্লেখিত এ সকল নেয়ামত অনেকগুলো নেয়ামতের সমন্বিত বর্ণনা। এছাড়াও ব্যক্তি জীবন সংশ্লিষ্ট আরো অগণিত নেয়ামত রয়েছে যেগুলো কেবল কলেবর বৃদ্ধিই করবে। আল্লাহপাকের নেয়ামত লাভের পর সকলের উচিত তার শুকরিয়া আদায় করা। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “ সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সুরা বাকারা: আয়াত: ১৫২)।
তিনি আরো বলেন, “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সুরা ইবরাহিম: আয়াত: ৭)। তিনি আরো বলেন, “ তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক! আর আল্লাহ হচ্ছেন সমুচিত মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ।” (সুরা আন নিসা: আয়াত: ১৪৭)। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর দেয়া নেয়ামত সমুহের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখকঃ প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা।