আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা সফরে আসার কথা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এ সফরের দিনক্ষণও প্রায় চূড়ান্ত বলা যায়। এর মধ্যেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর ডয়েচে ভেলের।
গত রোববার শিলিগুড়িতে এক নির্বাচনী সমাবেশে মমতা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানি যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে তবেই আমরা ভাগাভাগিতে রাজি হবো।
তার কথায়, তিস্তার পানিতে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ রয়েছে, সেই ভাগ কোনোভাবেই ছাড়া হবে না। অর্থাৎ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নিজেদের সেই অনড় অবস্থানের কথাই আবার জানিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও বাধ সাধেন মমতা। তার আপত্তিতেই শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হয়নি ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের।
ভারতের সঙ্গে প্রায় প্রতিটি আলোচনাতেই তিস্তার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বাংলাদেশ। দুইপক্ষের সবশেষ ভার্চ্যুয়াল বৈঠকেও শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চ মোদি ঢাকা সফরে আসলে আবারও এই ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। তার আগে মমতার এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন পরেই বিধানসভা নির্বাচন। সেটি সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলেই এমন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মমতা।
গত লোকসভা নির্বাচনে ভারতের উত্তরবঙ্গে ভালো ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এবার সেই ফল উল্টে দিতে উত্তরবঙ্গে দাঁড়িয়েই তিস্তার পানিবণ্টন বিতর্ক নতুন করে উসকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগাভাগিতে রাজি না হলে এ অঞ্চলের কিছু মানুষ তার পক্ষে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দু’বার ভাববেন নরেন্দ্র মোদি। তিস্তা চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা বিষয়টি নেতিবাচকভাবে নিতে পারেন। আর মমতা যে সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাচ্ছেন, তা ভালো করেই জানেন এ বিজেপি নেতা।
ফলে, একদিকে বাংলাদেশের চাপ, অন্যদিকে নির্বাচনে জেতার ভাবনা- এমন অবস্থায় নরেন্দ্র মোদি কোন পথে যাবেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।