জনগণের প্রয়োজনেই রাজ্যে তার সরকার থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মানুষের মনোভাব বুঝি। ছোট থেকে রাজনীতি করি।’ তার দাবি, দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসছে তৃণমূল।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) নির্বাচনী সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ‘এবার বিজেপি’। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির রাজ্য নেতারাও বলছেন, তৃণমূল সরকার এ বার চলে যাবে।
শনিবার বর্ধমানের সভা থেকে এর জের ধরেই প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে মমতা বলেন, ‘বলছেন, দিদি চলে যাবে। দিদি যাবে না। দিদি থাকবে। তুমি জেনে রেখে দাও মোদিবাবু, আগামী দিনে তুমি যাবে। দিদিকে ‘এক্স’ (প্রাক্তন) বলার জায়গা নেই। ওটা দিদির স্বেচ্ছামৃত্যু। তোমাকে তো আমরা ‘এক্স’ করবই। বাংলা জিতে দিল্লিতে ঝাঁপাব।’
এ দিন পূর্ব বর্ধমানের গলসি ও পূর্বস্থলীতে দুটি নির্বাচনী সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘সিপিএমের হার্মাদ আর আমাদের কিছু গদ্দার ভেবেছিল, বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে। এত সস্তা? বিজেপি গোল্লা পাবে। আমি সারা বাংলা ঘুরেছি। বিজেপি কোথাও আসছে না। মানুষ বিজেপিকে বিশ্বাস করে না, ভালবাসে না।’
ভোটের প্রথম দু’টি পর্বের পর থেকেই রাজ্যে ২০০ আসন নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলে একাধিক সভায় দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন সেই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘বলে, ১০০ আসন, পাব, ২০০ আসন পাব। বলো, তুমি ৫০০ আসন পাবে।’
মুখ্যমন্ত্রী যখন নির্বাচনী প্রচারে পূর্ব বর্ধমানে ঠিক সেই সময়ই আসানসোলে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি। সেখানে প্রশাসনের নানা বিষয় নিয়ে মমতাকে লক্ষ্য করে কথা বলেন তিনি। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি প্রচারে এসে মিথ্যা কথা বলে যান। সব ভাঁওতা, কুপ্রচার।’
তিনি বলেন, ‘তারা বলছেন, তৃণমূল সব টাকা চুরি করেছে। তাহলে কন্যাশ্রীর টাকা নারীরা পাচ্ছেন কী করে? কৃষকবন্ধু, স্বাস্থ্যসাথী- এ সব পাচ্ছেন কী করে? তোমরা হচ্ছ, চোরেদের ঠাকুরদাদা।’ এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ‘নোটবন্দি করেছে, আজ পর্যন্ত মানুষ হিসাব পায়নি। লকডাউন করেছে, কত লোকের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। রেলের ৭৫ শতাংশ বিক্রি করে দিচ্ছে।’
সভায় করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্যে আট দফায় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলনেত্রী। কমিশনের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে এদিন আবারও বলেন, ‘বিজেপি যা বলছে, তাই করছো। তোমার একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। ২০২০ সালে জনস্বার্থে মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের একটা রায় আছে, যে ‘ক্লাব’ (দফা এক সঙ্গে) করতে পার। কেন করলে না? চার দিন কমাতে পারলে প্রচারের, তাহলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম দফা একসঙ্গে কেন করতে পারলে না?’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এদিনও উদ্বেগ জানিয়ে আঙুল তুলেছেন বাইরে থেকে প্রচারে আসা বিজেপির নেতাকর্মীদের দিকে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলায় প্রায় ১০ হাজার বাইরের লোক এসে বসে রয়েছে। অধিকাংশ কোভিড নিয়ে এসেছে। বাংলায় কোভিড ছড়াচ্ছে।’
তিনি জানান, বাইরে থেকে এলে এখন আরটিপিসিআর অনুযায়ী করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।