নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশে মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনায় দুর্নীতির দায়ে এবার কালো তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ১৪ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় দুর্নীতি-অনিয়মে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৪ ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুদকের সুপারিশে গত ৯ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব হাসান মাহমুদের স্বাক্ষরে এক চিঠিতে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ‘অসাধু’ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও মালিকদের বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক মামলা থাকা এবং তাদের কালো তালিকা করতে দুদকের সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে তারা হলেন- রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল স্বত্বাধিকারী রুবিনা খানম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবরক্ষক মো. আবজাল হোসেনের স্ত্রী।দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা পাচার এবং ৩৪ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছর এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিল দুদক।
এ ছাড়া মেসার্স অনিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মুন্সী ফররুখ হোসাইন, মেসার্স ম্যানিলা মেডিসিন অ্যান্ড মেসার্স এসকে ট্রেডার্সের মনজুর আহমেদ, এমএইচ ফার্মার মোসাদ্দেক হোসেন, মেসার্স অভি ড্রাগসের মো. জয়নাল আবেদীন, মেসার্স আলবিরা ফার্মেসির মো. আলমগীর হোসেন, এসএম ট্রেডার্সের মো. মিন্টু, মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. আব্দুস সাত্তার সরকার ও মো. আহসান হাবিব, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানির মো. জাহের উদ্দিন সরকার, ইউনির্ভাসেল ট্রেড করপোরেশনের মো. আসাদুর রহমান, এএস এলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফতাব আহমেদ এবং ব্লেয়ার এভিয়েশনের মো. মোকছেদুল ইসলামকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির দায়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করতে দুদক আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। আমরা সেটা অনুসন্ধান করে দেখব। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা এখনই বলতে পারব না।
জানা যায়, ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি চিঠি দেয় দুদক। দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের স্বাক্ষরে ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকেও দেওয়া হয়। দুদকের অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে কতিপয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে এমএসআর, ভারী যন্ত্রপাতি, সেবা ইত্যাদি ক্রয় করে।
এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেও বিল পরিশোধের ঘটনা ঘটেছে বলে চিঠিতে বলা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, অসাধু ঠিকাদাররা সিন্ডিকেট গঠন করে এ ধরনের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক দর না পাওয়ায় প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বর্ণিত সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ক্ষতিসাধনসহ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
গত কয়েক বছরে এ ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে ওইসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরাসহ কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি, প্রতারণা ও চক্রান্তমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে ওইসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ স্বত্বাধিকারীদের কালো তালিকাভুক্ত করতে সুপারিশ করা হয় ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখার জন্য আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম আছে। এই টিমের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতের নানা দুর্নীতির ঘটনায় বেশকিছু মামলা করা হয়েছে। আবার টিমের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা বিভন্ন সময় সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি।
স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি ঠিকাদারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন অসাধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে আমরা একটা সুপারিশ করেছিলাম।