বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:রবিবার তৃণমূল দাবি করেছে, সারা পশ্চিমবাংলায় ৪ লক্ষ যুবা ও তরুণ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর এই যোগদানের নেপথ্যে রয়েছেন স্বয়ং প্রশান্ত কিশোর বা পিকে। যিনি তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত। যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অনেক নেতা কিছুটা অস্বস্তিতেও। যেমন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর জেলা থেকে কারা দলে যোগ দিয়েছেন, তা তিনি নিজেই জানেন না। সবই হয়েছে পিকে–র নির্দেশে। তবে এর পাশাপাশি, এত যুবা ও তরুণ তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দলের শক্তি যে যথেষ্ট বেড়েছে, তা মেনে নিয়েছেন অনেক নেতাই।
অবশ্য এতে নিশ্চিন্ত থাকতে চায় না তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবে যুব সমাজ সত্যিই তাদের পক্ষে আছে কিনা, তা আরও ভালো ভাবে যাচাই করতে ২৮ অগস্টের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। ওইদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তারা ভার্চুয়াল সভা করবে। সভার প্রধান বক্তা স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওইদিনের ভার্চুয়াল সভার শেয়ার কতগুলি হয়, সে দিকে কড়া নজর রাখা হবে। রাজ্যের ছাত্রছাত্রী ও যুব সমাজ তৃণমূল নেত্রীর কথাই শুনতে চান, নাকি বিরোধীদের প্রচারকে গ্রহণ করেছেন, তা সে–দিন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে দলের শীর্ষনেতারা মনে করছেন।
তৃণমূল নেতারা জানাচ্ছেন, যাঁরা যতই বোঝান না কেন, ছাত্রছাত্রীদের মন সহজে পাওয়া যায় না। তাঁরা যুক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করে তবেই গ্রহণ করে। তৃণমূল সরকার এখন দশ বছরে পড়তে চলেছে। এই সময়ে সরকার বিরোধী কিছু ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরি হতেই পারে। তবে সেই ধারণা কতখানি প্রবল, তা যুব বা ছাত্রছাত্রীদের মনোভাব থেকেই বোঝা যাবে। ভার্চুয়াল সভার প্রধান বক্তা যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাই তিনি কী বলেন, ছাত্র–যুবদের প্রতি কী বার্তা দেন, সে দিকে দৃষ্টি থাকবে সকলেরই। রাজ্যের সমস্ত সংবাদ মাধ্যমের নজরও থাকবে সে–দিকে। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট সন্দেহজনক। কে এগিয়ে, বা কে পিছিয়ে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় এখনই। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে তুমুল টক্কর চলছে। প্রতিযোগিতায় সিপিএম এবং কংগ্রেস এখন অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
যেহেতু ভার্চুয়াল সভা হবে, তাই সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতে বহু মানুষের বক্তব্যও কমেন্টে দেখা যায়। সে–দিকে খেয়াল রাখবেন তৃণমূল নেতারা। এবং, অবশ্যই প্রশান্ত কিশোর। কারণ, অনেকে প্রকাশ্যে অনেক কথা সরাসরি বলেন না। মনের মধ্যে চেপে রাখেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলে নিজের মান–অভিমানের কথা উগরে দেন। বিষয়টি থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে, রাজ্যের ছাত্র–যুবদের মন এখন কোন দিকে! যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ওপর তাঁদের সমর্থন থাকে, তা হলে তাঁরা যেমন তাতে ইতিবাচক কমেন্ট করবেন, তেমনই তাঁরা সেই সভার পোস্ট প্রচুর সংখ্যায় শেয়ার করবেন।
সেই সঙ্গে নেতিবাচক মন্তব্যগুলির দিকেও পিকে–র টিম খেয়াল রাখবে। নেতিবাচক মন্তব্যগুলিও বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। যদি তার সারবত্তা থাকে, তা হলে সেগুলির মধ্যে অভিমানের কারণগুলি জেনে নিয়ে ছাত্র–যুবদের অভিমান প্রশমনের চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যে রাজ্যের সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে স্ক্রিন টাঙিয়ে দলনেত্রীর বক্তব্য শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বক্তব্যের শেয়ারের মাত্রা যাতে বাড়ে, সেইজন্য ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন মাধ্যমে দলের প্রাক্তন ছাত্র সভাপতিরা তা শেয়ার করারও অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই সভার প্রস্তুতি নিয়ে শনিবার ভিডিও কনফারেন্সে তাঁরা আলোচনা করেছেন। এখন দেখার, তাঁদের এই প্রচেষ্টা কতখানি সফল হয়!