বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কোনও বিষয় নয়। দলীয় নেতৃত্ব স্বীকার না করলেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা থেকে মারামারি, এমনকী খুনোখুনি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। তা ছাড়া পশ্চিমবাংলার ক্ষমতায় টানা দশ বছর থাকার জন্যে দলের কিছু নেতা ও কর্মীর মধ্যে যে অস্বভাবিক ঔদ্ধত্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা দলের ঘরোয়া বৈঠকে অনেকবারই স্বীকার করে নিতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন নেতাকে। তবে প্রকাশ্যে তাঁরা এই বিষয়ে কোনও কথাই বলেন না।
কিন্তু রবিবার উত্তরবাংলার দিনহাটায় যে ভাবে প্রকাশ্য সভায় তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ দলের যুব নেতা ও কর্মীদের সমালোচনা করলেন, তা নজিরবিহীন। এদিন তিনি স্পষ্ট জানান, যুব নেতা ও কর্মীদের মধ্যে ভয়ঙ্কর ঔদ্ধত্য দেখা যাচ্ছে। এটা দলীয় নীতির বিরোধী। তাই সকলের উচিত নিজেদের সংযত করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এদিন দিনহাটার হেমন্ত বসু কর্নারের ওই সভায় তিনি সরাসরি বলে দেন, ‘যুব মানেই মাথায় লাল চুল রেখে কানে দুল পরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো নয়।’ তিনি জানান, যুব মানেই চাকরি দেওয়ার নামে মোটা টাকা নেওয়া বা জমির দালালি করা নয়। দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে না পারলে তাঁদের যুব নেতা বা কর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া উচিত নয়। কারণ, সাধারণ মানুষ সে–সব পছন্দ করে না।
বলা বাহুল্য, উদয়ন গুহর এই মন্তব্যে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এখন যথেষ্ট কোণঠাসা উদয়নবাবু। শুধু তাই নয়, দ্বন্দ্ব এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে তিনি ইতিমধ্যে জানিয়েও দিয়েছেন। তাঁর অনুগামী নেতারাও প্রকাশ্যে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলেও বেশ কয়েকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর জয়দীপ ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায় দলের যুব কর্মীরা। এমনকী, তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি এবং বাসও ভেঙে দেয় তারা। আবার যুব কর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, ওই কাউন্সিলর নাকি সংহতি ময়দানে এক যুব তৃণমূল নেতার গাড়িতে ভাঙচুর চালান।
এর পর দল থেকে বহিষ্কৃত হন ওই কাউন্সিলর। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তাই প্রকাশ্যে এই মন্তব্য করে দলের ওপর চাপ তৈরি করলেন উদয়নবাবু। শুধু তাই নয়, দিনহাটার ওই সভায় সেই বহিষ্কৃত কাউন্সিলরকে দলে ফিরিয়েও নেন তিনি। যদিও এই বিতর্কে তৃণমূলের শীর্ষনেতারা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে বিষয়টি যে তাঁদের যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। দলের এক নেতা জানিয়েছেন, দলীয় সভায় অনেক সময় দলনেত্রী প্রকাশ্যে দলেরই একাংশের সমালোচনা করেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দলের যে কোনও নেতাই সেই কাজ করবেন। তাঁদের কোনও ক্ষোভ থাকলে দলেই তা জানাতে হবে।