বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: রাজ্যসভায় তৃণমূল প্রার্থী জহর সরকারের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চলেছে বিজেপি। উল্লেখ্য, দীনেশ ত্রিবেদীর ইস্তফা দেওয়া রাজ্যসভার আসনে নির্বাচন হবে ৯ আগস্ট। যদিও লোকসভা এবং বিধানসভায় তৃণমূল প্রতিনিধির সংখ্যার বিচারে ওই নির্বাচনে জহর সরকারের জয় মোটামুটি নিশ্চিত। তবু বিজেপি ওই আসনে প্রার্থী দেবে বলে হেস্টিংস সূত্রে খবর। সরকারি ভাবে সে কথা বিজেপির তরফে জানানো না হলেও এ কথা জানা গিয়েছে, মূলত মুকুল রায়কে বিপাকে ফেলতেই বিজেপি রাজ্যসভায় দীনেশ ত্রিবেদীর আসনে প্রার্থী দিতে চলেছে।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী হয়ে কৃষ্ণনগরে বিজয়ীও হন তিনি। তার পর ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন। মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার দিন বিশেষ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এর পর মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করার জন্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দেন। যেহেতু মুকুল রায় বিজেপির সদস্য পদ ত্যাগ করেননি বা বিধায়ক পদে ইস্তফা দেননি, তাই বিমানবাবুও শুভেন্দুর চিঠিকে গুরুত্ব দেননি। তাই বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু স্পিকারকে তৃণমূলের দলদাস বলে কটাক্ষও করেছিলেন।
এর পর রাজ্য বিধানসভায় সেই মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান মনোনীত করা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিধানসভার রীতি অনুযায়ী সাধারণত বিরোধী দলের বিধায়ককেই পিএসি চেয়ারম্যান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এর আগে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া এবং শঙ্কর সিং তৃণমূলে যোগদান করলেও তাঁদের কংগ্রেস বিধায়ক দেখিয়ে পিএসির চেয়ারম্যান করেছিলেন মমতা। এ নিয়ে কংগ্রেসের আবদুল মান্নান অনেক চেঁচামেচি করলেও কাজ হয়নি। এবারও সেই একই পথ অনুসরণ করেন মমতা। মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করার জন্য স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিজেপি সদস্য হিসেবে প্রকাশ্যেই উল্লেখ করেন। যেহেতু মুকুল রায় নিজে বিধায়ক পদ বা বিজেপির সদস্য পদ ত্যাগ করেনি, তাই আইনের ফাঁককেই সুযোগ হিসেবে নেন মমতা। তাই মুকুল রায়কে নিয়ে শুভেন্দুর আপত্তি ধোপে টেকেনি। মুকুল রায়কে পিএসির চেয়ারম্যান হিসেবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন।
এবার আইনের সেই ফাঁককেই ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। সূত্রের খবর, রাজ্যসভায় তৃণমূল প্রার্থী জহর সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও প্রকাশ্যে তিনি বা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে একটি বিশেষ অঙ্ক মাথায় রেখেই রাজ্যসভায় প্রার্থী দিতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী না দিলে জহর সরকার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যেতেন। কারণ, সিপিএম বা কংগ্রেস এখন ওই পদে প্রার্থী দেওয়ার অবস্থায় নেই। বিজেপি প্রার্থী দিলে ওই পদে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে যাবে। নির্বাচন হলে বিজেপির তরফে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের ওপর হুইপ জারি করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, দল হুইপ জারি করলে প্রত্যেক সাংসদ ও বিধায়ককেই দলের পক্ষে ভোট দিতে হবে। না হলে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া সেই সাংসদ বা বিধায়কের পদ খারিজ করা যায়।
বিজেপি যদি হুইপ জারি করে তা হলে মুকুল রায়কে তৃণমূল প্রার্থী জহর সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিজেপির পক্ষে ভোট দিতে হবে। তা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না এখন। আবার যদি তিনি জহর সরকারের পক্ষে ভোট দেন, তা হলে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের জন্য আইনের দ্বারস্থ হতে পারে বিজেপি। তাতে বিপাকে পড়তে পারেন মুকুল রায়। সূত্রের খবর, এই সুযোগটাই নিতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত বিজেপি কতখানি লাভবান হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু মুকুল রায় নন, আরও কয়েকজন মুকুলপন্থী বিজেপি বিধায়কও তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ভোট যদি হয় গোপন ব্যালটে, সে ক্ষেত্রে কারা তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তা নির্ণয় করতে হবে বিজেপিকে। যে কাজটা মোটেই সহজ হবে না বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।