প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক:ছোট্ট মেয়ে শিউলী (ছদ্মনাম)। বয়স হবে ৯ অথবা ১০ বছর। যে বয়সে মেতে থাকার কথা কিশোরীসুলভ চঞ্চলতায়, ভরে থাকার কথা বাবা-মায়ের আদও ভালোবাসায়, বই হাতে বেনী দুলিয়ে সহপাঠিদের সাথে স্কুলে যাবার কথা, অথচ সে বয়সে জীবনের প্রয়োজনে তাকে নামতে হয়েছে এক অসম যুদ্ধে।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যান তার রিক্সা চালক বাবা। সে থেকে কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না তিনি। তাই বাধ্য হয়ে মাকেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছিলেন সংসার। কিন্তু শিউলীসহ ছোট আরো দুটি বাচ্চাকে নিয়ে একা একা পেরে উঠছিলেন না তিনি।
এমন সময় গ্রামেরই এক পরিচিত লোক আসে তার মায়ের কাছে। ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় ছোট একটি মেয়ে প্রয়োজন। তাদের দুই বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। শুধু তার সাথে খেলা করতে হবে, আর তার দেখাশুনা করতে হবে। অন্য কোনো কাজ করতে হবে না। থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। মাসে এক হাজার টাকা করে দিবে। মালিক আর তার স্ত্রী, দুজনেই খুব ভালো মানুষ।
পরিচিত মানুষের কাছ থেকে এমন ভালো প্রস্তাব পেয়ে শিউলীর মা যেনো একটু স্বাস্তি পেলেন। তাঁর মেয়ে অন্তত একটু ভালো খেতে-পরতে পারবে, আর তাঁর নিজের উপর থেকেও একটু চাপ কমবে। এ ভরসায় আদরের মেয়েকে তুলে দিলেন সে আত্বিয়ের হাতে।
শিউলীর নতুন ঠিকানা হলো আলো ঝলমলে ঢাকা শহরে। কিন্তু এ আলো ঝলমলে শহরে যে তার জন্য কোনো আলো ছিল না, ছিল শুধুই একরাশ আঁধার, সেটা সে তখনও বুঝে উঠতে পারেনি। তার ভালো থাকার স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিছুদিন যেতেই তার উপর নেমে আসে এক ভয়াবহ নির্যাতনের ঝড়। ঠিক মতো খেতে দেয় না, ঘুমানোর জায়গা হয়েছে রান্না ঘরের এক কোনে, ভালো জামা-কাপড়ের তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
আর বাচ্চা দেখাশুনার যে কথা শুনে এসেছিল, তার পরিবর্তে এখন তাকে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে নানা রকম গৃহস্থালির কাজে। ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, বাসন-পাতিল মাজা, আরো অনেক কাজ। আর এসব কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল হয়ে যায় বা হাত থেকে পড়ে কখনো কোনো কিছু ভেঙ্গে যায়, তাহলেই শেষ। চড়, থাপ্পরের পাশাপাশি হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই পেটানো। এমনকি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গরম খুনতির ছেঁকা দেয়া, গায়ে গরম তেল বা পানি ঢেলে দেয়াসহ আরো কতো রকমের অমানসিক নির্যাতন।
এমন অবর্ণনীয় নির্যাতনের ভেতর দিয়ে কেটে যায় প্রায় ৪ বছর। শত চেষ্টায়ও এ নরপশুদের কাছ থেকে শিউলীকে নিয়ে যেতে পারেনি শিউলীর মা। অবশেষে গত ১৮/০৭/২০২০ তারিখ রূপনগর থানা পুলিশ প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিয়টি জানতে পেরে শিউলীকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আর শিউলীর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলা রেকর্ড করে। ইতোমধ্যে ঐ দুই নরপশুকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।