বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস করে দিল বিজেপি। তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু কথোপকথন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। মুসলিমদের সম্পর্কে মমতার ধারণা কী, রাজনৈতিক সুবিধা পেতে তাদের কী ভাবে ব্যবহার করেন, সেইসব কথাও তুলেছেন তাঁরা। আবার, তিনিই রাজ্যে হিংসা ছড়াতে চান বলেও তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন। জবাবে তৃণমূলের দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। এক পক্ষ জানিয়েছে, অডিওটি নাকি ভুয়ো। অন্য পক্ষের বক্তব্য, কার অনুমতিতে মমতার ফোনালাপ ট্যাপ করা হয়েছে, তার জবাব দিতে হবে বিজেপিকে। অন্য পক্ষের প্রতিক্রিয়ায় অডিও ক্লিপের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ওই ক্লিপে দেখা গিয়েছে কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থপ্রতীম রায়কে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘শীতলকুচিতে যারা মারা গিয়েছে, তারা সবাই কোন দলের?’ পার্থপ্রতীম জানান, তাঁরা তাঁদেরই লোক। তখন মমতা বলেন, ‘পার্থ ভোটটা নির্বিঘ্নে যাতে হয়, সে দিকে খেয়াল রেখো। পরে এর বিচার আমরাই করব। তবে তোমরা কেউ এফআইআর করবে না। এফআইআর করাবে মৃতদের পরিবারকে দিয়ে। তার আগে আমাদের বড় আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে বলবে। আর ডেড বডিগুলো যাতে তাঁদের পরিবারের হাতে চলে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থেকো। বডিগুলো এখন রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। কাল ওই বডিগুলো নিয়ে আমরা র্যালি (মিছিল) করব। পরিবারগুলোকে বলে দেবে, কেউ যেন বডি না নেয়।’ এই ক্লিপে মমতার কণ্ঠস্বর স্পষ্ট শোনা গিয়েছে। ওই ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক প্রত্যয়।
ওই ক্লিপ যদি সত্য হয়ে থাকে, তা হলে মুসলিমদের সম্পর্কে মমতার নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, মৃতদের পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে যতই তিনি সহানুভূতি দেখান না কেন, আসলে তাদের যে রাজনীতিতে দাবার ঘুঁ্টি মনে করেন, সে কথাই প্রমাণ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মৃতদের দেহকে তিনি সাধারণ ভাষায় ‘ডেডবডি’ বা ‘বডি’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার পর নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে মৃতদের দেহ নিয়ে মিছিল করার কথা বলেছেন। এমনকী, পরিবারগুলি যাতে মৃতদেহ না পান, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করতেও তৃণমূল জেলা সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি মুখপাত্র অমিত মালব্য বলেছেন, ‘শীতলকুচির বুথে যারা হামলা চালাতে গিয়ে মারা যায়, তাদের ‘আমাদের লোক’ বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। তার পর শীতলকুচি নিয়ে রাজনীতি করতে মৃতদেহগুলি নিয়ে মিছিল করতে চেয়েছিলেন মমতা। আর এ ভাবে কিছু মানুষকে খেপিয়ে হিংসা আরও বাড়িয়ে দিতে তিনি চেয়েছিলেন।’ তার পরই অমিত কড়া ভাষায় বলেন, ‘১০ বছর ধরে একটি রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছেন যে মুখ্যমন্ত্রী, কতখানি অপরাধপ্রবণ হলে তিনি এ কথা বলতে পারেন!’ শুধু তাই নয়, ক্লিপে আরও শোনা গিয়েছে, ওই ঘটনার সঙ্গে কোচবিহারের পুলিশের বড় কর্তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই কথা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এদিন অমিত মালব্য আরও বলেছেন, ‘ওই ক্লিপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে যে, শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে এমন ভাবে প্রচার করতে হবে, যাতে বিজেপি সম্পর্কে মানুষের মনে ভয় ঢুকে যায়। তার পর তারা যাতে তৃণমূলকে ভোট দেয়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলার সম্প্রীতিকে কী ভাবে ধ্বংস করে দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওই ক্লিপে তাঁর বক্তব্য থেকে এ কথাও বোঝা যায়।’ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ফোনালাপ নিয়ে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। দল হিসেবে তারা তাতে অন্যায় কিছু দেখেনি। বিষয়টি নিয়ে রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং রাজ্যসভার উপ দলনেতা সুখেন্দুশেখর রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ডেরেক বলেন, ‘ধরে নেওয়া যাক, অডিওটি ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করল কে? আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব কথা বলেছেন, তাতে সমস্যা কোথায়?’ সুখেন্দুশেখরও বলেন, ‘দলনেত্রী যে সব কথা বলেছেন, তাতে অন্যায় কিছু নেই। আমাদের অভিযোগ হল, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে কার অনুমতিতে? এর উত্তর আমরা জানতে চাই।’ তৃণমূলের দুই অন্যতম শীর্ষ নেতার এমন বক্তব্যে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অবশ্য তৃণমূলের অপর মুখপাত্র (রাজ্য) তাপস রায় ওই ক্লিপটিকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করেছেন। সেজন্য বিজেপির মুখপাত্র অমিত মালব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : পশ্চিমবাংলার পঞ্চম দফার ভোটে কড়া নিরাপত্তা, ষষ্ঠ দফায় দুই কেন্দ্রে ভোট বাতিল