বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এখনও আশা ছাড়েননি সাংসদ সৌগত রায়। মন্ত্রিত্ব এবং সরকারি পদ ছেড়ে যে বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু, তার পরেও সৌগতবাবু বিশ্বাস করেন, শুভেন্দু এখনও তৃণমূল ছাড়েননি। ছাড়বেনও না। তবে সেইজন্য আলোচনা প্রয়োজন। দলের নির্দেশ দিলে তাঁর সঙ্গে ফের তিনি আলোচনায় বসতে পারেন।
সোমবারও বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তখন তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে এগোনোর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য এবং অধ্যাবসায়। কোনও বিষয়েই দাড়ি টেনে দেওয়া ঠিক নয়। কোনও বিষয়ে মতপার্থক্য হতেই পারে। তবে তা মেটাতে হয় আলোচনার মধ্য দিয়েই। শুভেন্দুও তার বাইরে নন।’ তাঁর বিশ্বাস, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে ফের কথা বলার চেষ্টা করব।’ পাশাপাশি দলের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘দলের নির্দেশেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তাই শুভেন্দুর সঙ্গে ফের বৈঠক হতেই পারে। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উচিতও নয়। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দলের নির্দেশে কথা বলেছি। এখনও দল যা বলবে, সেই অনুযায়ীই কাজ করব।’ উল্লেখ্য, শুভেন্দুর অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। মন্ত্রিত্ব ও সরকার পদ ছেড়ে দেওয়ার পর সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। কিন্তু এবিষয়ে তিনি নিজে সরাসরি এখনও কিছু বলেননি। বিভিন্ন সভায় যোগ দিয়েছেন। কিন্তু অরাজনৈতিক সভা বলে এই বিতর্ক নিয়ে কোনও রকম প্রতিক্রিয়াও দেননি।
পাশাপাশি এ কথাও ঠিক, মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করলেও দল বা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তাই শুভেন্দুকে ‘লস্ট কেস’ বলে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা মনে করেন না। ঠিক এ রকমই কথা শোনা গেল বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ব্লকের মাজিগ্রামে সোমবার দলের কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী তো এখনও দল ছেড়ে দিয়ে চলে যাননি। এখনও তিনি আমাদের দলে আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তাই তাঁকে নিয়ে এত বিতর্কের কোনও অর্থ হয় না।’ কিন্তু রবিবার নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করেছেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেকের সঙ্গেই বিরোধের জের আজকের শুভেন্দু–বিতর্ক। যেমন শুভেন্দু অধিকারী যখন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন, তখন হঠাৎই তৃণমূলের যুব শাখা খোলা হয়, যার সভাপতি হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি শুধু শুভেন্দু নন, অনেককেই বিস্মিত করেছিল। তার পর আচমকাই যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে শুভেন্দুকে সরিয়ে আনা হয় সৌমিত্র খাঁকে। (বর্তমানে সৌমিত্র খাঁ বিজেপি সাংসদ।) পরে সৌমিত্রকে যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে অভিষেককে সেখানে বসানো হয়।
মনে করা হয়, তার পরই অভিষেক–শুভেন্দু ব্যবধান ভয়ঙ্কর আকার নেয়। রবিবার অভিষেকের কটাক্ষ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অনুব্রত বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যনেতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা–ই। তাঁরা কে কী বললেন, সেই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। তবে মনে রাখবেন, গ্রামের মানুষ আকাশে নয়, মাটিতেই পা দিয়েই রাজনীতি করেন। এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।’ এদিকে, সোমবার নন্দীগ্রামে রাস উৎসবে হাজির হন শুভেন্দু। শুধু তাই নয়, সকলকে তিনি হরিনামের মাহাত্ম্য বোঝান। নন্দীগ্রামের এই রাস উৎসব এবার ষষ্ঠ বর্ষে পড়েছে। এবারই প্রথম এই উৎসবে শুভেন্দুকে দেখা গেল। এদিন তিনি এসেছিলেন রীতিমতো শোভাযাত্রা নিয়ে। সেই শোভাযাত্রায় স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
রেয়াপাড়া থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে উৎসবস্থলে পৌঁছে শুভেন্দু নিজেই খোল নিয়ে মেতে ওঠেন কীর্তনে। বলেন, ‘আমি আপনাদের সেবক। বরাবরই আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। আমি নন্দীগ্রামের সব অনুষ্ঠানেই আসি। ধর্মীয়, শিক্ষা, খেলাধুলো, মেলা— সব কিছুতেই আসি। ক’দিন আগে দুর্গাপুজোয় গোকুলনগরে এসেছিলাম। দীপাবলিতে এসেছিলাম টাউন ক্লাবে। বড়দিন থেকে ইদ— সব কিছুতেই আমাকে পাবেন আপনারা। যেমন, আজ এখানে রাস উৎসবে এসেছি। এই অনুষ্ঠানের সূচনাও করে গেলাম।’
অবশ্য রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ভাবে প্রতিদিন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আসলে জনসংযোগের কাজ করছেন শুভেন্দু। অন্যদিকে, তাঁর জনসংযোগে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হারে সাড়াও দিচ্ছেন। তাই শুভেন্দু যদি দল ছাড়েন, দক্ষিণ থেকে উত্তরবাংলা, সব জায়গাতেই তৃণমূল দলনেত্রীর কাছে তা চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।