1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সত্যিই বড় দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা !

  • Update Time : শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০
  • ১৮০ Time View

উপমন্যু রায়

কথায় আছে, ‘একে রামে রক্ষা নেই, তার আবার সুগ্রীব দোসর’! করোনা যখন ভয়ঙ্কর ভাবে জাপটে ধরেছে আমাদের সভ্যতাকে, তখন ভারতের মধ্যেই পশ্চিমবাংলা নামে ‌একটি অঙ্গরাজ্যকে একেবারে তছনছ করে দিয়ে গেল আমফান! রীতিমতো বেসামাল লাগছে আজ বাঙালি নামে গোটা জাতিটাকেই।

তা আমফানই বলুন, কী উম্ফুন, কেউ কেউ বলছেন উম্পুন, আবার কারও উচ্চারণে আমপান, যাই হোক, সে তো আসলে একটা ঘূর্ণিঝড়ই। আবহবিদরা এর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, এটি সাধারণ সাইক্লোন নয়, এটি সুপার সাইক্লোন। অর্থাৎ, সোজা বাংলায়, অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়।
এর আগে আয়লা (‌বা, আইলা)‌ এসেছিল বাংলায়। সেটা ২০০৯ সালের ২৫ মে। সেই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি আঘাত করেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিম অংশে এবং ভারতের দক্ষিণ–পূর্ব অংশে। কলকাতায়ও তার দাপট এসে পড়েছিল। এই শহরে তার গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। আর তাতেই কাবু করে ফেলেছিল শহরবাসীকে। সন্ধ্যার পর আমহার্স্ট স্ট্রিট ধরে হাঁটতে হাঁটতে বন্ধুদের সঙ্গে সেই ঝড়ের ফেলে রেখে যাওয়া চিহ্ন উপড়ে যাওয়া গাছপালা দেখে চমকে উঠেছিলাম।
আর বুলবুল এসেছিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে। তার মূল আঘাত ছিল পশ্চিমবাংলার উপকূলে। গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশেও তার অভিঘাত গিয়ে পড়েছিল। কিন্তু কলকাতায় সে–ভাবে দাপট দেখাতে পারেনি সে। শহরের কান ঘেঁষে চলে গিয়েছিল। তাই তার ভয়াবহতা চাক্ষুষ করা হয়নি আমার।

কিন্তু এবার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় আমফান। বাংলার উপকূলে এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারের মতো। গোটা দক্ষিণবাংলা তো বটেই, কলকাতায়ও তার তীব্র আক্রোশ এসে পড়েছিল ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৩৩ কিলোমিটার বেগে। আর পরিণামে একেবারে ছন্নছাড়া করে দিয়েছে সে এই কল্লোলিনীকে।
সত্যি, এই সামান্য জীবনেই এমন প্রবল দুটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হল যে, তার স্মৃতি আমার আমৃত্যু মনে থাকবে। করোনা তো সারা পৃথিবীর নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। আর বাংলাকে কাঁপিয়ে দিল করোনার পাশাপাশি এই ঘূর্ণিঝড়ও। এর আগেও কলকাতায় সে ভাবে না হলেও বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় দুই বাংলাই দেখেছে। কিন্তু পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে আমফানের মতো ভয়ঙ্কার আঘাত এর আগে কোন ঝড় করেছে, তা বিশ্লেষণ করতে বসলে রীতিমতো চুল ছিঁড়তে হচ্ছে।
লকডাউনে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। তবু আমি যেহেতু সংবাদ মাধ্যমে কাজ করি, তাই কাজ বন্ধ থাকার কারণ নেই। ঝড়ের আগেই অফিস চলে যেতে হয়েছিল। বিকেলে ঝড় শুরু হলে তার দাপট ভালো ভাবেই টের পেয়েছিলাম। কী শব্দে, কী হাওয়ায়, কী জলে —আমফান যেন ম্লান করে দিয়েছিল অতীতের সব রেকর্ডকে।
আমার অফিস সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। বেশি রাতের দিকে কাজ শেষে অফিস থেকে যখন বের হলাম, তখন নিজের শহরটাকেই চিনতে পারছিলাম না। সব রাস্তাই ছিল জলমগ্ন। তার মধ্যে গাছের পর গাছ উপড়ে পড়ে কেমন যেন রহস্যঘন অরণ্যাঞ্চলে পরিণত করে দিয়েছিল শহরটাকে।

অফিসের গাড়ি এ রাস্তা থেকে সে রাস্তা ঘুরে বেড়াচ্ছিল বের হওয়ার পথ খুঁজতে। এ ভাবে শহরময় ঘুরতে ঘুরতে যখন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোডে পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে ভারতীয় সময় রাত দেড়টা বেজে গিয়েছে। বুঝতে পারলাম গাড়ি আর এগোবে না। আমার বাড়ি বৈঠকখানা রোডে। তাই গাড়ি ছেড়ে দিলাম।
ড্রাইভার অবশ্য বলছিল অফিস ফিরে যেতে। কিন্তু বাড়ির এত কাছাকাছি এসে আর অফিস ফিরতে ইচ্ছে করল না। নেমেই পড়লাম রাস্তায়। ঢুকলাম কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে। প্রথমেই হাঁটুজল। তার পর একটু একটু করে সেই জল বাড়তে লাগল।
বিদ্যুৎহীন শহর। কোথাও জনমানবের চিহ্ন নেই। এমনকী, যে শহরটা রাতে কুকুরের উৎপাতে তটস্থ থাকে, সেই কুকুরগুলিও কোথায় যেন লুকিয়ে পড়েছে। একটি গাছকে নড়াচড়া করতে দেখে এগিয়ে যাই। দেখি, নীচে জল দেখে গেছো ইঁদুরগুলি উঠে পড়েছে গাছে। বাঁচতে সকলেই চায়!
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সয়ে যাওয়া চোখে অন্ধকার রাস্তা দেখে শিহরিত হয়ে উঠছিলাম। আশপাশের বাড়িগুলিকে কেমন যেন পরিত্যক্ত মনে হচ্ছিল। ফুটপাথে অনেক গাছ উপড়ে গিয়েছিল। যে গাছগুলি আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল, সবগুলিকেই কেমন যেন প্রেতের মতো লাগছিল।
মনে হচ্ছিল, অন্ধকারে তারা যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে কারও অপেক্ষায়। যে কোনও মুহূর্তে সেই শিকারকে বাগে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে অবলীলায়। যেন আমাজন অববাহিকা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম একা আমি। চারদিকে জল অথবা জঙ্গল। আর ভৌতিক ও পরিত্যক্ত সব বাড়িঘর। কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছিল।

তখনও হয়তো কিছু রেশ ছিল আমফানের। তাই ঝোড়ো হাওয়ায় থেকে থেকে মারাত্মক ভাবে দুলে উঠছিল আমার ছাতা। অনেক কষ্টে ধরে রাখতে হচ্ছিল। পিঠের ব্যাগটাও সামলে রাখতে হচ্ছিল কষ্টে। আমার ব্যাগে সবসময়ই কিছু প্রয়োজনীয় বই ও কাগজপত্র থাকে।
হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারলাম, জল বাড়তে বাড়তে আমার কোমর জড়িয়ে ধরেছে। এগোতে অসুবিধে হচ্ছিল। গতিও বেশ শ্লথ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় কোনও ম্যানহোল খোলা থাকলে জলের জন্য বোঝা যাবে না। তাই পা টিপে টিপে এগোতে হচ্ছিল। তার ওপর ভয় রাস্তার ইলেকট্রিক তার পড়ে থাকার। ঝড়–জলে তো এ ভাবেই বহু মানুষ বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে থাকেন।
যে রাস্তা পাঁচ থেকে সাত মিনিটে অতিক্রম করি, বুধবার রাতে সেই রাস্তা অতিক্রম করতে লেগে গেল ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট! বাড়ি ফিরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম, কেন সব মানুষ দিনের শেষে হলেও শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরতে চায়!

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খবর আসতে শুরু করল যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির। সঙ্গে অবশ্যই মৃত্যুর। উপকূল কিংবা তার কাছাকাছি গ্রামগুলিতে বাস করা মানুষের হাহাকার ঝড় চলে যাওয়ার পরও বাতাসকে কেমন যেন ভারী করে দিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে দুর্গত অঞ্চলগুলির অবস্থা দেখেছেন। বুঝতে পেরেছেন তার অভিঘাত।
কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানি, টাকা দিয়ে কোনও মৃত্যুরই মূল্যায়ণ করা যায় না। উচিতও নয়। তবু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির কিছু সুরাহা তো হতে পারে! তবে জানি না মাঝখানের জঞ্জাল অতিক্রম করে সেই টাকার কতখানি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছয়!
তবে আমার মাঝে মাঝে অনেক অবাক লাগে, কেন স্বাধীনতার এতগুলি বছর পরেও উপকূলের কাছাকাছি গ্রামগুলিতে এখনও খড় বা টিনের চাল দেওয়া কাঁচাবাড়ি থাকে! এত তো শুনি কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে ঘোষিত আবাস যোজনার কথা। কাগজে তো আমরাই সে সব কথা ফলাও করে লিখে থাকি। তা হলে কেন বারবার এমন ঝড়ের আগে অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তুলতে হয় পাকাবাড়িতে? যাঁরা সেই সৌভাগ্যের অংশীদার হতে পারেন না, তাঁদের মরতে হয় এমনই অসহায় ভাবে!

আমার জানা নেই, আর কতদিন পর সকলেই বুঝতে পারবেন মানুষের জীবনের মূল্য অন্য সব কিছুর চেয়েও দামি! জানা নেই কবে বুঝতে পারব আমরা মানুষের অব্যক্ত চোখের জলের সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা চলতে পারে না? কবে বুঝতে পারব, বিপদের সময় কোনও কল্পনা নয়, মানুষের প্রয়োজন হয় মানুষেরই হাতের?
একটা পরম নির্ভরতার হাত! আর কত মৃত্যু দেখার পর বুঝতে পারব, যাঁরা চলে গেলেন, তাঁরা আমাদেরই স্বজন! যাঁরা কাঁদছেন, তাঁরা আমাদেরই আত্মার আত্মীয়। প্রাণের কোনও জাত হয় না, কোনও ধর্ম হয় না, কোনও রং হয় না!

নয়–নয় করে এই সভ্যতার বয়স তো কম হল না! এখনও কি সে প্রাপ্তমনস্ক হবে না? সত্যিই, এখন বড় দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা। একদিকে আমরাই আবাহন করে নিয়ে এসেছি কোভিড–১৯ নামে এক বিভীষিকাকে। সারা পৃথিবীকে এলোমেলো করে দিয়েছে সেই ভাইরাস। থেমে গিয়েছে সভ্যতার চাকা।
তার মধ্যেই বাংলার ঘরে আরও দুর্দিন ডেকে নিয়ে এসেছে আমফান। নিঃশব্দ মৃত্যুদূত করোনার পাশাপাশি সরাসরি আততায়ীর বেশে ওই ঘূর্ণিঝড় এসে আমাদের ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে গিয়েছে।

জানি না এর পরও আমরা বেঁচে থাকার মানেটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারব কিনা !‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..