প্রত্যয় ডেস্ক, গাজী মো. তাহেরুল আলম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা “সাগর কন্যা” হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
সাগরকন্যার কলাপাড়া দখিনের নির্মল বাতাসে সৈকতে পর্যটকদের ছুটোছুটি ও উম্মাদনা। কেউ সমুদ্রের পনিতে গোসল করছেন, কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউবা ব্যস্ত সেলফি তোলায়।করোনা মহামারির দীর্ঘ সময় পেরিয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে আবারো ফিরে এসেছে। করোনাভাইরাসের ভয়কে জয় করে শারদীয় দুর্গাপুজার ছুটিতে সৈকতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য অবলোকন করা নতুন এক অনুভূতি এমনটাই জানিয়েছেন আগত পর্যটকরা। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
সরেজমিনে সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, হৈ হুল্লোড়, খেলাধুলা আনন্দের সীমা নেই আগত পর্যটকদের মাঝে। সৈকতের জিরো পয়েন্ট, ইকোপার্ক, লেম্বুরচর, শুঁটকিপল্লী, মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন মহিলা মার্কেটসহ আকর্ষণীয় সব স্পটগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের চাপ বেশি থাকে। এছাড়া বিষেশ কোন ছুটির দিনে এখানে পর্যটক আসে। এ সময় হোটেল-মোটেলগুলো অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। তবে শারদীয় দুর্গাপুজার ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে এসব পর্যটক থেকে ছুটে এসেছে। এর ফলে পর্যটনমুখী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা ব্যস্ত সময় পার করছে।
পর্যটক ইরফান বলেন, সৈকতে দাঁড়িয়ে দক্ষিনের নির্মল বাতাস সাবার কাছেই ভাল লাগার কথা। এর আগেও কয়েকবার কুয়াকাটায় এসেছি। কিন্তু আগের সেই সৌন্দর্য নেই। সৈকত ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট-সুরকির ভাঙা অংশ। এতে চলাফেরা করা বিপজ্জনক। এগুলো অপসারণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এ্যাসেসিয়েসন কুটুম’র পক্ষ হতে বলা হয়, মহামারি করোনা সময়কে উপক্ষা করে শারদীয় দুর্গাপুজার ছুটিতে দলবেঁধে এখানে ছুটে এসেছে পর্যটকরা।
কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজার ছুটিতে কুয়াকাটায় বেশ পর্যটকদের আনাগোন বেড়ে গেছে। আমরাও চেষ্টা করছি পর্যটদের সেবা দিতে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পর্যটকদের জন্য কুয়াকাটা সংলগ্ন কিছু দর্শণীয় স্থানের নাম এখানে দেয়া হলো:
সন্নিকটবর্তী আরও যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলো হলঃ
ফাতরার বন – সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকের সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন, যা ‘দ্বিতীয় সুন্দরবন’ হিসেবে পরিচিত।
কুয়াকাটারা ‘কুয়া’ – কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কাছে রাখাইন পল্লী কেরানীপাড়ার শুরুতেই একটা বৌদ্ধ বিহারের কাছে রয়েছে একটি প্রাচীন কুপ।
সীমা বৌদ্ধ বিহার – প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ বিহার, যাতে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
কেরানিপাড়া – সীমা বৌদ্ধ বিহারের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া।
আলীপুর বন্দর – কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম
বড় মৎস্য ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার – কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আবাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ বিহার, যাতে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি।
গঙ্গামতির জঙ্গল – কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূব দিকে গঙ্গামতির খালের পাশে গঙ্গামতি বা গজমতির জঙ্গল।
সাগর কন্যা কুয়াকাটা দেশের উল্লেখযোগ্য একটি দর্শণীয় স্থান। পর্যটকরা কুয়াকাটায় এসে দেখতে পাবেন আরো দেখতে পাবেন দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক স্থানসমূহ।