নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে সাজার দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন নোয়াখালীর নিরপরাধ সেই কামরুল ইসলাম। নম্বর জালিয়াতির এক মামলায় দুদকের ভুল তদন্তে কারাদণ্ড হয়েছিল তার। এই সাজা বাতিল করে বুধবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় দেন। রায়ে কামরুলের ক্ষেত্রে সাজাপরোয়ানা (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ ধরনের ভুলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলাটি নতুন করে তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে তা দুদককে বিবেচনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট। ভুক্তভোগী কামরুলের করা রিটের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। নথি থেকে জানা গেছে, এসএসসির সনদ জালিয়াতির অভিযোগে ২০০৩ সালে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই মামলায় আসামির ঠিকানা বদলে দেয়। পশ্চিম রাজারামপুর এবং পূর্ব রাজারামপুর। মূল আসামি যিনি তার ঠিকানা হলো- নোয়াখালী সদরের পশ্চিম রাজারামপুর। সে যে কলেজে ভর্তি হয়েছে সেখানে তার ছবি ছিল। ঠিকানা পশ্চিম রাজারামপুর লেখা ছিল। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা এটাকে একই এলাকার পূর্ব রাজারামপুর লিখে এফআইআর করেন।
এরপর ১০ বছর এ মামলার তদন্ত শেষ করে ২০১৩ সালে দুদক অভিযোগপত্র জমা দেয় পূর্ব রাজারামপুরের কামরুল ইসলামের নাম-ঠিকানা দিয়ে। এরপর এ মামলার শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে বিচারিক আদালত কামরুলকে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে মোট ১৫ বছর সাজা দেয় ও ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়। এরপর আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু পূর্ব রাজারামপুরের কামরুল ইসলাম এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার জন্ম ১৯৯০ সালে। আর সনদ জালিয়াতি হয়েছে ১৯৯৮ সালের। এ রায়ের পর পুলিশ তার বাড়িতে যায় গ্রেফতারের জন্য। এরপর বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন কামরুল। রিটে পূর্ব রাজারামপুরের কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং হয়রানি যাতে না করা হয় তার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আদালত রিটের শুনানি নিয়ে গত বছর ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন এবং দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুদকের পক্ষে আইনজীবী আদালতের কাছে তদন্তে ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এফআইআর থেকে তদন্ত সবই তাদের ভুল হয়েছে বলে আদালতকে জানায়। উল্লেখ্য, এর আগে ১ হাজার ৯২ দিন জেল খেটে মুক্তি পান নিরপরাধ জাহালম। ২০১৯ সালে জাহালমের সাজা খাটার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। উচ্চ আদালত জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার সময় দায়িত্বহীনতার জন্য দুদককে তিরস্কার করেছিল।