মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে করা বাহারছড়া ক্যাম্পের সাবেক পরিদর্শক ও মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর করা রিভিশন আবেদন খারিজ করেছেন আদালত।
উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদনটি খারিজ করে দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় এ আদেশ দেন জেলা জজ। একই দিন সকালে ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সিনহা হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি খায়রুল আলম। এর কয়েক ঘণ্টা পর সিনহা হত্যা মামলা অবৈধ ঘোষণার আবেদন খারিজ করা হয়।
তবে পরিদর্শক লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টায় বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। তখনই তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। যিনি সিনহাকে গুলি করেছিলেন। টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি। এজাহারে বলা হয়েছে, গুলি করার আগে লিয়াকত তার সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করেছিলেন। ওসির ‘প্ররোচনা ও নির্দেশনায়ই’ লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিনহার ‘মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে’ বিকৃত করার চেষ্টা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বোনের করা মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন রিভিশন আবেদন করেন। ওই দিন আদালত মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ঠিক করেন।
মামলাটি শুনানির নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন আবারও পিছিয়ে করা হয় ১৩ ডিসেম্বর।