পশ্চিমবঙ্গ: বাঘের সংখ্যা জানতে সুন্দরবনে নিজেদের অংশে ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বন দপ্তর। রোববার (৫ ডিসেম্বর) থেকে ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে তা পিছিয়ে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে শুরু করা হয়েছে। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাঘ শুমারির কাজে লেগে পড়েছেন বনকর্মীরা।
চার বছর পর ফের সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের সঠিক সংখ্যা কত তা জানতে কাজ শুরু হলো। সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের ছবি তোলা হবে। এক মাসব্যাপী ছবি তোলার পর সেই ছবি বিশ্লেষণ করে জঙ্গলে বাঘের আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করবে বন দপ্তর।
মোট তিনটি পর্বে বাঘ গণনার কাজ চলবে। প্রথম পর্বে নৌকায় বা ভুটভুটিতে জঙ্গল লাগোয়া নদীতে ঘুরে ঘুরে বাঘের পায়ের ছাপ বা যেসব এলাকায় বাঘের অবস্থান বেশি তা চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপে নথিভুক্ত করবেন বনকর্মীরা। এরপর দ্বিতীয় পর্বে ক্যামেরা বসানোর কাজ চলবে। আর তৃতীয় পর্বে সেই ক্যামেরায় ওঠা ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বনবিভাগ দুই জায়গাতেই ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে এই ‘টাইগার এস্টিমেশন’ এর কাজ চলবে। কীভাবে ক্যামেরা বসানো হবে, কীভাবেই বা সেই ক্যামেরা কাজ করবে, বাঘের গতিবিধি কীভাবে নির্ধারণ করা হবে এইসব বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে বনকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বনকর্মীরা বেড়িয়ে পড়েছেন ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ করতে।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ জন্য বনকর্মীদের ১০ টি বিশেষ দল তৈরি করা হচ্ছে, যারা জঙ্গলে ক্যামেরা বসানোর কাজ করবেন। এক একটি দলে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন করে বনকর্মী রয়েছেন। সবমিলিয়ে প্রায় ৪০০ বনকর্মী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
সুন্দরবনের যেসব এলাকায় বাঘের বসবাস বেশি সব জায়গা এরই মধ্যে নির্ধারিত করা হয়েছে। মোট ৭৪৮ টি জায়গায় ক্যামেরা বসানো হবে। এক একটি জায়গায় দু’টি করে ক্যামেরা বসানো হবে। আর বাঘকে আকৃষ্ট করতে পচা মাংস আর ডিমের সংমিশ্রণে তৈরি খাবার রাখা হবে। ৩০ থেকে ৩৬ দিন পরে ক্যামেরাগুলো খুলে নিয়ে আসা হবে। এরপর সেখানের ছবি বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে, তেমনি সুন্দরবনের জঙ্গলে আরও কী কী ধরনের জীবজন্তু রয়েছে তার তথ্য জানা যাবে। আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘ গণনা হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতেই সংখ্যা অনুমান করছে বন দপ্তর।
সবশেষ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে ৯৬ টির মতো বাঘ রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যেভাবে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটছে এবং পর্যটকরা সুন্দরবনে বেড়াতে এসে বারে বারে যেভাবে বাঘের দর্শন পেয়েছেন তাতে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা আগের থেকে বেশ খানিকটা বেড়েছে বলেই অনুমান করছেন বন আধিকারিকরা। তবে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও সে ছবি বিশ্লেষণ করে তবেই বাঘের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।