1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সুন্দরী, সেগুন, আর ম্যানগ্রোভের দেশে।

  • Update Time : শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৬৫৪ Time View

সুন্দরীসেগুনআর  ম্যানগ্রোভের দেশে

লতিফুর রহমান প্রামানিক

(পর্ব-০১)

আগামী ০৯/১২/২০২১। দেখতে দেখতে তারিখ টা এসেই গেলো। কয়েক দিন ধরে সেই প্রস্তুতি চলছে। ক্যামেরা  জুতো , মোবাইল, মেডিসিন আর যা যা লাগে। খুব কম করে নিতে গিয়ে ও ব্যাগের ওজন টা তবুও কম হলো না। সুন্দরবন ভ্রমণের ইচ্ছে টা অনেক আগের। তবে সেভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি বলে আজও সেখানে যেতে পারিনি। আসলে ভ্রমণের জন্য ইচ্ছে শক্তি টাই মোর্দা কথা।  সম্ভবত ডাঃ মনির কে বছর চারেক আগে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলাম। সেই যাত্রায় ও আর সম্ভব হয়নি। গত মাসে আদালতে প্রবেশ করা মাত্রই একটা বড় ব্যনারে সুন্দরবন ভ্রমণের বিজ্ঞাপন টা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। জানি এটাই মোক্ষম সময়। প্রায় ৬৬ জন আইনজীবী ও তাদের অল্প কিছু পরিবার আর বাচ্ছারা সাথে থাকবে। আমি এই সুযোগ আর কিভাবে ছাড়ি। সামান্য সুযোগ পেলেই ভ্রমণের জন্য বেরিয়ে পড়ি। ভ্রমণের কথা শুনলে মনের ভিতরে একটা আন্দোলন সৃষ্টি হয় আমার।  দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু সুন্দরবন ঘুরে আসা হয়নি কখনো। নাম নিবন্ধন করে অপেক্ষা করছিলাম আজকের এই দিনের জন্য। রাত ৮.৩০ এ পার্বতীপুর রেল জংশন থেকে খুলনার উদ্দেশ্য ট্রেন চাড়বে। তারপর আমরা জাহাজ চেপে ছুটে চলব সুন্দরবনের পথে।

চমৎকার আবহাওয়া আজ। ভাজ্ঞিস গত সপ্তাহে আমাদের সিডিউল ছিলো না। তাহলে তো কি যে বিপদের মুখে পড়তে হতো। হটাৎ করে খারাপ আবহাওয়া আর ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে ভারত আর বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূলের কিছু কিছু অঞ্চল।

তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসি। সময় জ্ঞান নিয়ে আমার সচেতনতা নিয়ে মাঝে মাঝে আমার ভ্রমণের বন্ধুদের সাথে বেশ হাসি তামাশা হয়। অন্তত এই বিষয় টা তে আমার স্কোর ১০০ তে ১০০.  এটা সবক্ষেত্রেই মানিয়ে চলার চেষ্টা করি। ভ্রমণ পিপাসুদের সময় জ্ঞান না থাকলে তাদের ঘরে বসে থাকাই উত্তম। আমাদের বাস প্রথমে রংপুর আইনজীবী সমিতি থেকে সন্ধ্যা ৭. ০০ টায় ছেড়ে দিয়ে আমার বাড়ির পাশের রাস্তা ধরে রেলস্টেশনে যাওয়ার পথ। আমি সেই সময় হিসাব করে তার বেশ কিছুটা আগেই হাসপাতাল গেটে হাজির হয়েছি বলে শেষ সময় মনির আর মুন্না বেশ তামাশা করছিলো। যাইহোক কিছুটা বিলম্বে বাস এসে পড়ে আমার বাড়ির পাশের রাস্তায়। মনির বিদায় জানায় আমাকে। বাসে উঠে বন্ধু আইনজীবী দের মধ্যে আরিফ, শফি কামাল, জুনিয়র ইছাহক ভাই ,  তারেক তার স্ত্রী সন্তান সহ। গুঞ্জন ভাই ও, রেজা সিনিয়র সহ অনেকের সাথে বাসে দেখা হলো। কুশল বিনিময় শেষে বসে পড়ি সিটে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে শীত ও বেড়েই চলেছে। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আমরা নেমে পড়ি সোজা রেলস্টেশনে।  ইছাহক বল্লো, ভাই একসাথে এখন বসব, হারিয়ে যান না যেন। আচ্ছা আচ্ছা, আমি বললাম। ট্রেনে খুব একটা ভ্রমণ করা হয় না ইদানীং। এটা দেশের অন্যতম বড় রেল জংশন।

ব্রিটিশ সময়কালে আসাম এবং উত্তরবঙ্গের সাথে রেলপথের সব যোগাযোগ বাংলার পূর্ব অংশ দিয়ে সম্পন্ন হতো। ১৮৭৮ সাল থেকে, শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার রেলপথের রুট দুটি পথে সম্পন্ন হতো। প্রথমটি ছিল ১৮৫ কিলোমিটার দূরত্বের এবং দ্বিতীয়টি উত্তরবঙ্গ রেলওয়ের ৩৩৬ কিলোমিটার দূরত্বের মিটারগেজ লাইন যেটি পদ্মা নদীর উত্তর তীরের সারাঘাটকে শিলিগুড়ির সাথে যুক্ত করত।

১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১৯১২ সালে পদ্মার উপরে চালু হয়। ১৯২৬ সালে ব্রিজের উত্তরের মিটারগেজ অংশকে ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তর করা হয়। ফলে কলকাতা-শিলিগুড়ি রুটটি ব্রডগেজে রুপান্তরিত হয়।

অন্যতম ব্যস্ত এই রেল জংশন থেকে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ভীষণ ব্যস্ততম একটা জায়গা।  হাজার হাজার যাত্রীর পদভার এখানে নিত্য ঘটনা। ইদানিং রেল স্টেশন কিছুটা আধুনিকতার ছোয়া পেয়েছে।
ঘড়ির কাঁটার সময় ধরে রাত ৮.৩০ বাজার সাথে সাথে হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলছে আমাদের ট্রেন।  আমি আর ইছাহক ভুল বগিতে উঠে, সারা ট্রেন হন্য হয়ে খুজতে থাকি আমাদের সহযাত্রী দের। গলদঘর্ম প্রায়। শীতের রাতে ও হাটতে হাততে শরীর ঘাম জমা শুরু করে দিয়েছে।  একেবারে শেষ মাথায় এসে দেখা হলো তাদের সাথে। মোট তিন বগিতে আমাদের ৬৬ টা সিট বরাদ্ধ ছিলো।  আমার সিট ছিলো আরিফ  সফি কামাল, বকুল আর সাকি ভাইয়ের সাথে।  অগত্যা ইছাহক পাশের বগিতে বসতে হয়। সে মাঝে মাঝে উঠে এসে আমাদের বগির সাথে থাকা ক্যান্টিনে চা খেতে আসে। এটা প্রায় সারারাত চলে।  সাকি ভাই, লাভলু ভাই, আর দুজন গেস্ট টেবিলে বসে শুরু করে দিল তাস খেলা। খেলোয়াড় ঘাটতি ছিলো বলে আমাদের দিকে অফার করলেন কিন্তু কেহই আগ্রহী নই বলে তারাই সারা রাত প্রায় তাস খেলতে খেলতে কাটিয়ে দেয়।  আরিফ আর সফি কামাল দারুণ ঘুম চালিয়ে নিচ্ছে পুরো যাত্রায়। বকুল আর আমি একই অবস্থা। ঘুমহীন রাত্রি।

খুলনা যেতে অনেক স্টেশন পার হতে হয়। ইতোমধ্যে প্রায় পাচ ঘন্টা পার হয়ে গেছে। বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা করছে। মাঝে মাঝে সিট ছেড়ে পাশের কেবিনে গিয়ে হাই ভাই, এমদাদ ভাইয়ের সাথে গল্প গুজব করে সময় গুলো পার করে দিচ্ছি। অনেক দিন পরে এতো লম্বা ট্রেন ভ্রমণ। সম্ভবত এর আগে আর এতোটা পথ ট্রেনে যাত্রা করা হয়নাই। সামনে বসে থাকা মহিলা যাত্রীর কথায় বা আলাপে বুঝতে পারলাম তিনি এই পথের নিয়মিত যাত্রী। কারণ ট্রেন স্টেশনে থামা মাত্রই সেই ভদ্রমহিলা হুড়হুড় করে তার নামটি বলে দিচ্ছেন। কাজেই তিনি আমাদের কাছে আপাতত গুগল হিসেবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।  এবার তিনি আশার কথা শোনালেন, ভাই সামনেই যশোর দর্শনা  রেল স্টেশন। এটা পার হলেই আর বেশি সময় লাগবে না খুলনা আসতে। এখনো সূর্য জেগে উঠতে দেরি আছে। বলতে বলতে দর্শনা স্টেশনে ট্রেন এসে থামলো।  জানালায় চোখ রেখে তাকিয়ে দেখছিলাম সেদিকে। এর কাছাকাছি যশোর সেনানিবাস। বিদ্যুতের আলোয় চিকচিক করছে আশেপাশের রাস্তা আর দালান কোটার চেহারা। আরও জানতে পারি রেল লাইনের দু ধারে রয়েছে হাজারো চিংড়ি মাছের ঘের। আর এভাবেই চলছে খুলনা অব্দি। রাস্তা কমে আসিলে যাত্রীদের মনের ভিতরে একটা তাড়না প্রবাহিত হতে থাকে। আমি ও তার ব্যতিক্রমী নই।সবার মতো আমার ও নজর টানে সাথে থাকা ব্যাগের উপর। দেখতে দেখতে চলে এলাম প্লাটফর্মে। হুড়মুড় করে সবাই নেমে পড়ি। ৬৬ জন মানুষ একটা বিশাল দল আমাদের আর অজস্র ব্যাগের স্তুপে প্লাটফর্মের অনেক খানি অংশ আমাদের দখলে। অস্মভব সুন্দর গোটা স্টেশন। ছবি তোলার লোভ সামলানোর মতো লোভহীন নই কেউ। মুহুর্তে সবার ক্যামেরা ফ্লাশে আলোকিত হয়ে যায় গোটা জায়গা।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশন বা খুলনা স্টেশন হল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থির খুলনা বিভাগের প্রধান শহর ও সদর এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মহানগর খুলনার প্রধান রেল স্টেশন। রেল স্টেশনটি যশোর শহরের সঙ্গে খুলনা-যশোর রেল লিংকের দ্বারা যুক্ত। খুলনা স্টেশন থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে রেল চলাচল করে। অতীতে খুলনা রেল স্টেশনের দ্বারা খুলনা শহর তৎকালিন বাংলার বৃহত্তম মহানগর কলকাতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই স্টেশন থেকে কলকাতার সঙ্গে রেল পরিসেবা ১৯৫৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশনটি খুলনা শহরের অন্তঃনগরী রেল পরিসেবা প্রদান করে।

খুলনা রেল স্টেশনটি ব্রিটিশ ভারতে নির্মিত হয়েছিল। স্টেশনটি শিয়ালদহ-যশোর-খুলনা রেল পথের প্রান্তীক স্টেশন ছিল। এই রেল পথে বরিশাল এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে খুলনা পর্যন্ত, ভায়া পেট্রাপোল-বেনাপোল। হয়ে চলাচল করতো। ১৯৫৬ সালে ভারত-পাকিস্থানের যুদ্ধের জন্য রেল চলাচল বন্ধ হয় খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত।
এখন ঘড়ির কাঁটার সময় হচ্ছে ভোর ৫.৩০ ছুইছুই। সূর্য উদয় হতে আরো খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে। তেমন অন্ধকার না থাকলেও আকাশে আলোর আভা প্রস্ফুটিত হতে প্রস্তুতি চলছে।

আমাদের গাইড রাজু ভাই। মাথায় টাক পড়া। বয়স পঞ্চাশ এর কাছাকাছি, হয়তো আমার অনুমান অসত্য হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। মুলত বাগেরহাটের মানুষ। চাকুরী সুবাদে রংপুরে অস্থায়ী আপাতত বাস। মুলত আমাদের পুরো টিমের যাবতীয় ব্যবস্থা যে তার হাত ধরে হয়েছে তা ট্রেনে উঠে বুঝতে পারি। রাতের খাবার বিতরন আর ক্ষনে ক্ষনে আমাদের কাছে এসে খোজ খবর করার তাগিদ দা ভীষণ ভালো লেগেছে সবার। দারুণ অমায়িক আর মিস্টভাষী। পুরো স্টেশন ঘুরে ঘুরে দেখলাম। চমৎকার নক্সায় সাজানো স্টেশন টা।

এবার আমাদের বলা হলো অটোরিকশা চেপে সামান্য ক মিনিটের হাঁটা পথ দূরে দেশের অতি প্রাচীন রূপসা নদীর ঘাটে। কয়েক বছর আগের ঘটনার প্রেক্ষিতে মানে এরশাদ শিকদারের অকল্যানে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে এই ঘাট। হত্যা, সিমেন্টের বস্তা বেধে পানিতে ডুবে মানুষ মারা আর বরফ কলের ঘটনা মানুষ হয়তো সহজে ভুলতে পারবে না। শীতের ভোরের বাতাসে হিম হয়ে আসছে শরীর। জড়সড় হয়ে আমি ও আমার বন্ধু আইনজীবী বকুল, শফি কামাল, আরিফ, লাভলু ভাই একটা অটোরিকশা চেপে বসে পড়ি। বই পুস্তকে রূপসা নদীর নাম বহু আগে শোনা হলেও তার বিশালতা আর ভয়ংকর সুন্দর রূপ দেখার জন্য ছুটে চলছে আমাদের অটোরিকশা।

রূপসা নদী;বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৮৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক রূপসা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮১। নদীটি পদ্মার একটি শাখা নদী। এটি ভৈরব নদ থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং পরবর্তিতে পশুর নামে প্রবাহিত হয়েছে।

কথিত আছে যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নড়াইল জেলার ধোন্দা গ্রামের রূপচাঁদ সাহা নামক জনৈক লবণ ব্যবসায়ী নৌকায় যাতায়াতের জন্য ভৈরব নদের সঙ্গে কাজীবাছা নদীর সংযোগ করার জন্য একটি খাল খনন করেছিলেন। রূপচাঁদ সাহার নাম অনুসারে ঐ খালের নাম হয়েছিল রূপসা। পরবর্তীকালে ভৈরব নদের প্রচন্ড প্লাবনে এই ছোট খাল বিরাট ও ভয়ংকর নদীতে পরিণত হয়। রূপসা শুধু নিজেই নদীতে পরিণত হয়ে ক্ষান্ত হয়নি, কাজীবাছা নদীকেও প্রচন্ড ভাঙনের মুখে ফেলেছে।

রুপসা-পশুর সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড় নদী। রূপসা মূলত দক্ষিণে মংলা বন্দরের কাছে পশুর নামে প্রবাহিত হয়ে ত্রিকোন ও দুবলা দ্বীপ দুটির ডান দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। রূপসা নদীর তীরে ফুলতলা বাজার, গিলাতলা, দৌলতপুর ইত্যাদি অবস্থিত। রূপসা ও ভৈরব নদীর সঙ্গমস্থলে খুলনা শহর অবস্থিত। ভৈরব নদের দক্ষিণ তীরে রেণীগঞ্জ নামক স্থানে পুরাতন খুলনা অবস্থিত ছিল। অত্যাচারী নীলকর রেণী সাহেবের নামে এই স্থান রেণীগঞ্জ হয়।

সাহিত্যের নানা শাখায় রূপসা নদীর প্রসঙ্গ এসেছে। জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায়ও রূপসার কথা বলেছেন-

“হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;

হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;

হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসেরূপসার ঘোলা জলে

হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালেডিঙা বায়;

রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছেধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।

মিনিট সাতেকের ভিতর আমরা এসে হাজির হলাম ঘাটে। আকাশে এখনো ছোপধরা বিচ্ছিরি আঁধার। কালো আকাশের ছবি রূপসার বুকে আরো ভয়ংকর রকমের চিত্র ফুটে তুলেছিল। জলের ভয় কমবেশি আমাদের সবারই। বড় নদীর পাশের মানুষ আমরা কেউ নই। নদীর পানির ঢেউ আর বিশালতা দেখে প্রথমেই চমকে উঠলাম। অপেক্ষা করতে থাকি আমাদের জাহাজের জন্য। কিন্তু না আমাদের ধারণা কে মিথ্যায় পরিনত করে দেয় যখন রাজু ভাইয়ের মুখে শুনলাম আমাদের জন্য নৌকা আসছে। সেখানে চড়ে অপর

পারে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মিটিমিটি তারার মতো আলো জ্বালানো জাহাজে গিয়ে উঠে বসতে হবে। এই কথা শুনে আমার মতো অনেকের বুকের ভিতর হিম হয়ে গেছে। ভাই অন্য উপায় নাই?

না নেই।

এই আঁধার রাতে ঢেউ মাড়িয়ে নৌকায় উঠে কিভাবে ওপারে যাব এই নিয়ে মনের সাথে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। কেউ একজন বলেই ফেল্লো, ভাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার ট্রেন কয় টায়।

এই ভয়ের ভিতর ও হাস্যরসের যোগান আমাদের হাসতে বাধ্য করে দেয়।

আল্লাহর নাম নিয়ে একটা নৌকায় ৩০ জন উঠে বসে।

আমি পরের নৌকায় উঠে পড়ি, সেই কথা মনে হলে এখনো বুকের ভিতর কেপে উঠে আমার। পানির স্রোতে নৌকার দোলানী থেকে থেকে অসহ্যকর হয়ে উঠে।  আর আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকি আর কত দূরে। জাহাজের নিকটবর্তী যত হই সাহস টা আরো তত চওড়া হয়ে আসে। মিনিট পনের হয়তো পরে জাহাজ ছুতে পাই। বেচে গেলাম মনে হলো আর শুকরিয়া আদায় করলাম আল্লাহর এই যাত্রায় রক্ষা করার জন্য।

সহায়তা ঃ উইকিপিডিয়া, পত্রিকা, জার্নাল। 

(চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..