ওয়েব ডেস্ক: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন তারা। তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিলে আগামী রোববার থেকে তারা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (২৬ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির কথা জানানো হয়। এ সময় সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব উপাচার্য বরাবর এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী চলমান ছুটি আগামী ১২ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। এই ছুটি বাড়ানোর পেছনে করোনা পরিস্থিতি ও ভ্যাকসিনের অপর্যাপ্ততাকে দায়ী করেছেন তিনি। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে কল-কারখানা, অফিস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহণসহ কোনো কিছুই থেমে থাকেনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর ভ্যাকসিন নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য সরকারি নীতিনির্ধারক ও তাদের করপোরেট প্রতিষ্ঠানই দায়ী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যাসহ নানা পথ বেছে নিচ্ছেন দাবি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর টিউশনিওও নেই। গত ৫ মাসে প্রায় ৩৯ জন ঢাবি শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ, ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঢাবি ছাত্র হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাই এসবের জন্য দায়ী।
এতে আরও বলা হয়, অনলাইন প্রেস ব্রিফিংকালে সময় শিক্ষামন্ত্রী নিজেই কয়েকবার ডিসকানেক্টেড হয়ে গিয়েছেন। এছাড়া, মঙ্গলবার (২৫) বিবিসি বাংলায় সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ঢাবি ভিসি নিজেও টানা তিনবার ডিসকানেক্টেড হন। সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে তাদের ইন্টারনেটের যদি এমন বেহাল দশা হয়, সেক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন? আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে এই প্রশ্ন রাখছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পুলস ওয়ান-এ গত বছর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে এক গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশার রয়েছেন, ৭১ শতাংশ উদ্বেগ এবং ৭০ শতাংশ মানসিক চাপের মধ্যে নিমজ্জিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে’র সূত্র মতে, দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর দৈনিক ১৮ কোটি শিক্ষাঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বন্ধের কারণে।
এর আগে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও হল খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধনের আয়োজন করেন। সেখানে তারা শিক্ষামন্ত্রীর বুধবারের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতেই সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।