আবাসিক হল বন্ধ রেখেই শুরু হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অনার্স-মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা। গত ৯ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন বিভাগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করতে যাচ্ছে এ পরীক্ষা। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণসহ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেস ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করছেন।
সিট সঙ্কট থাকায় দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে ও গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই এসব মেস ও বাসাবাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েও হঠাৎ পরীক্ষা স্থগিত করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
জানা গেছে, অন্যান্য বিভাগের ন্যায় ফার্মেসি বিভাগও পরীক্ষার ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় বর্ষের (ব্যবহারিক) ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরুর কথা থাকলেও মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) হঠাৎ স্থগিতাদেশ দেয় বিভাগ। ফলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আসা শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহান বলেন, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আমরা অনেকেই বিভিন্ন মেস-বাসাবাড়িতে উঠেছি। কিন্তু হঠাৎ শুনলাম পরীক্ষা স্থগিতের কথা। তাই অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করে অনেকেই বাড়ি চলে যাচ্ছে।’
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ পরীক্ষাগুলো অনার্স কিংবা মাস্টার্সের পরীক্ষা না হওয়ায় ভিসি স্যার এ ব্যাপারে না করেছেন। তাই আমরা পরীক্ষা স্থগিত করেছি।’
এদিকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এতে একই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ওই বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইয়েদ মাকছুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাস্টার্স-২০১৯ সালের পরীক্ষা শুরু করেছি। এদের ফলাফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত মাস্টার্স-২০২০ সালের পরীক্ষা নিতে পারছি না। তাই সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে স্থগিত করেছি।’
এদিকে ফি মওকুফ, হল খুলে পরীক্ষা নেয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ক্যাম্পাসের ডাইনা চত্বরে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ সময় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এ গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, একটি বছর হল ও পরিবহন সেবা না নিলেও পরীক্ষার কারণে গুণতে হচ্ছে ফি। যেটি করোনার সময়ে আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া হল বন্ধ থাকায় আমরা বিভিন্ন মেস-বাসাবাড়িতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছি। বাসার মালিকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে। হলের চেয়ে মেসগুলোতেই বর্তমানে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।
এদিকে ছাত্রীদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবাসন সঙ্কট ও নিরাপত্তাহীনতা। ক্যাম্পাসের আশেপাশে নারী মেস কম থাকায় দ্বিগুণ মূল্যে বাসা-ভাড়া করে থাকছেন তারা। কেউ কেউ মেস না পেয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করায় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মিতু বলেন, আমি ক্যাম্পাসের আশেপাশে কোথাও মেস না পেয়ে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে থাকছি। পরীক্ষার সময় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া কষ্টকর। তাই হল খুলেই পরীক্ষা নেয়া হোক।
উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘হল খোলার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তবে ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমতি না আসায় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
ফি মওকুফের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারেও আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে যে টাকা নেয়া হয় তা বাজেটে রিফ্লেকটিভ হয়। তখন আয়টা রেখে বাকি টাকা সরকার দেয়। এটি একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।’