সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ব্যবহার করে সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে আকাশ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করা হয় নি। বরং বিভিন্ন ভবনে আটকে পড়া সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে র্যাব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুনীম ফেরদৌস বলেন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচী ঘোষণা করে। এই শাটডাউন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবন, মিরপুরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বিআরটিএ ভবন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় নজীরবিহীন হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব ফোর্সেস রাজধানীসহ সারাদেশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপালনকারী র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর দুষ্কৃতিকারী ও নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যযুগীয় কায়দায় অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় শতাধিক র্যাব সদস্য আহত হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা কোমলমতী শিশু-কিশোরদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। শিশু-কিশোররা সামনে থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
এক্ষেত্রে হেলিকপ্টার থেকে কোন প্রকার গুলি করা হয়নি বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বরং রাজধানীর বাড্ডা ও নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে দুর্বৃত্তরা হামলা ও আক্রমণ করে সাধারণ জনগণ ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে আটকে পড়া ডিএমপি’র সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে অবস্থান নিলে দুপুর সোয়া ২টায় অবরুদ্ধ ৬১ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র্যাবের হেলিকপ্টার। গত ২০ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা মা হাসপাতাল ভবনের নিচে অগ্নিসংযোগ করলে সেই ভবনের বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্য ছাদে অবরুদ্ধ হয়। ঐ সময় ভবনের নিচে ৩ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। ভবনের ছাদে অবরুদ্ধরা র্যাবের সহায়তা চাইলে হাসপাতালের কর্মচারীসহ ৩৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে র্যাব ফোর্সেসের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আকাশ পথে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক ধারণ করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, র্যাবের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরকারি স্থাপনা রক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে র্যাব ফোর্সেস এর সকল সদস্য বদ্ধ পরিকর। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চয়নে র্যাব ফোর্সেস এর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে।