বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:রবিবার তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ৬৩টি কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি। প্রথম দুই দফার প্রার্থীদের তালিকা আগেই ঘোষণা করেছিল তারা। বিজেপির প্রার্থী তালিকায় এদিন ছিল চমকের পর চমক। বেশ কয়েকজন সাংসদকে এবার বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত, এবং নিশীথ প্রামাণিক। প্রাক্তন মুূখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অশোক লাহিড়কে এবার আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তারা।
টালিগঞ্জের সিনেমা পাড়া থেকে বেশ কিছু তারকা এবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তীকে এবার প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। এর আগের দফার প্রার্থী হিসেবে অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেছিল তারা। এদিন প্রার্থী হিসেবে যে ৬৩ জনের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি, তাঁদের মধ্যে কোচবিহারের ৯ জন, আলিপুরদুয়ারে ৫ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩১ জন, হাওড়ায় ১৬ জন, হুগলির ১৮ জন রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীকে প্রার্থী করায় অনেকে মনে করছেন, বিজেপি যদি রাজ্যের ক্ষমতায় আসে, তা হলে তাঁকে অর্থমন্ত্রী করা হতে পারে। তাঁদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্রেফ রাজনীতি করতে সরকারি টাকা নিয়ে যে ভাবে পুজো কমিটি, পুরোহিত ও ইমাম ভাতা, ক্লাবগুলিকে দানধ্যান করে গিয়েছেন, মেলা–উৎসব করে গিয়েছেন, তাতে রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় ক্ষমতায় এলে রাজ্যের অর্থনীতিকে সামাল দিতে যোগ্য মানুষ দরকার। তাই অশোক লাহিড়ীর মতো একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদের প্রয়োজন। তাই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।
প্রার্থী হতে পেরে খুশি অশোক লাহিড়ীও। বলেছেন, ‘বাংলা থেকে পেয়েছি অনেক। দিতে পারিনি কিছুই। এবার যদি কিছু করতে পারি—।’ উল্লেখ্য, অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন অশোকবাবু ছিলেন দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের পরামর্শদাতার দায়িত্বও সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টরও ছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পর এদিন নিজের কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘কলকাতায় জন্ম। প্রথমে হিন্দু স্কুলে, পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছি। কাজের জন্য কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। বাংলায় তাই আর ফেরা হয়ে ওঠেনি।’ এ ছাড়া, বিজেপি প্রার্থী করায় খুশি তরুণ অভিনেতা যশ দাশগুপ্তও। তিনি বলেছেন, ‘এবার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। আমার আসল লক্ষ্য হল মানুষের জন্য কাজ করা। রাজনীতি আমি বুঝি না। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এতদিন আমার ওপর নিজের পরিবারের দায়িত্ব ছিল। এখন বহু পরিবার ও বাবা–মায়ের দায়িত্ব আমার কাঁধে। সবার জন্য কাজ করব।’
এবার দেখে নেওয়া যাক প্রার্থী–তালিকা। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে দধিরাম রায়, মাথাভাঙায় সুশীল বর্মন, কোচবিহার উত্তরে সুকুমার রায়, শীতলকুচিতে বরেনচন্দ্র বর্মন, সিতাইয়ে দীপককুমার রায়, দিনহাটায় নিশীথ প্রামাণিক, তুফানগঞ্জে মালতি রাভা রায়। আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে মনোজ ওরান, কালচিনিতে বিশাল লামা, আলিপুরদুয়ারে অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী, মাদারিহাটে মনোজ টিগ্গা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে রমেশ মাঝি, কুলতলিতে মিন্টু হালদার, কুলপিতে প্রণব মল্লিক, রায়দিঘিতে শান্তনু বাপুলি, মন্দিরবাজারে দিলীপ জটুয়া, জয়নগরে রবীন সর্দার, ক্যানিং পশ্চিমে অর্ণব রায়, ক্যানিং পূর্বে কালীপদ নস্কর, বারুইপুর পশ্চিমে দেবপম চট্টোপাধ্যায়, মগরাহাট পূর্বে চন্দন নস্কর, মগরাহাট পশ্চিমে মানস সাহা, ডায়মন্ড হারবারে দীপক হালদার, সাতগাছিয়ায় চন্দন পাল দাস, বিষ্ণুপুরে অগ্নিশ্বর নস্কর, সোনারপুর দক্ষিণে অঞ্জনা বসু, ভাঙড়ে সৌমি হাতি, কসবায় ডঃ ইন্দ্রনীল খান, যাদবপুরে রিঙ্কু নস্কর, টালিগঞ্জে বাবুল সুপ্রিয়, বেহালা পূর্বে পায়েল সরকার, মহেশতলায় উমেশ দাস, বজবজে তরুণ আদক, মেটিয়াবুরুজে রামজি প্রসাদ।
হাওড়ার হাওড়া উত্তরে উমেশ রায়, হাওড়া মধ্যে সঞ্জয় সিং, হাওড়া দক্ষিণে রন্তিদেব সেনগুপ্ত, সাঁকরাইলে প্রভাকর পণ্ডিত, পাঁচলায় মোহিত ঘাঁটি, উলুবেড়িয়া পূর্বে প্রত্যুষ মণ্ডল, উলুবেড়িয়া উত্তরে চিরন বেরা, শ্যামপুরে তনুশ্রী চক্রবর্তী, বাগনানে অনুপম মল্লিক, আমতায় দেবতনু ভট্টাচার্য, উদয়নারায়ণপুরে সুমিত রঞ্জন কাঁড়ার, ডোমজুড়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলির উত্তরপাড়ায় প্রবীর ঘোষাল, শ্রীরামপুরে কবীরশঙ্কর বসু, চাঁপদানিতে দিলীপ সিং, সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, চন্দননগরে দীপাঞ্জন গুহ, চুঁচুড়া লকেট চট্টোপাধ্যায়, বলাগড়ে সুভাষচন্দ্র হালদার, পাণ্ডুয়ায় পার্থ শর্মা, চণ্ডীতলায় যশ দাশগুপ্ত, জাঙ্গিপাড়ায় দেবজিৎ সরকার, হরিপালে সমীরণ মিত্র, ধনেখালিতে তুষার মজুমদার, তারকেশ্বরে স্বপন দাশগুপ্ত, পুরশুড়ায় বিমান ঘোষ, আরামবাগে মধুসূদন বাগ, গোঘাটে বিশ্বনাথ কড়ক, খানাকুলে সুশান্ত ঘোষ।