রাজশাহী সংবাদদাতা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনসুর রহমানের বয়স এখন ৮৪ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে জর্জরিত। আর এর মধ্যেই শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি করোনাভাইরাস। তবে দৃঢ় মনোবল নিয়ে করোনাকে জয় করেছেন তিনি। মনসুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। এক ছেলে ও চার মেয়ের জনক মনসুর রহমান ছেলের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। করোনাকে জয় করায় সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিশেষ সংবর্ধনা ও করোনা মুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাকে ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও উপহার দেওয়া হয়।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর বলেন, মনসুর রহমানের সুস্থ হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর লেগেছে। তিনিই সম্ভবত দেশের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, যিনি এই বয়সেও করোনামুক্ত হলেন। তিনি আগে থেকেই হৃদরোগসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় এই বয়সে তিনি করোনা যুদ্ধকে জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর আগে ২৮ মে করোনাযুদ্ধে জয়ী মোহনপুর উপজেলার আরও তিনজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছী গ্রামের জেসমিন (২৪) ও আলামিন (২৫) এবং জাহানাবাদ ইউনিয়নের তশোপাড়া গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হোসেন (২৮)। তারা তিনজনই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকাফেরত। তবে মনসুর রহমান বাড়িতে থেকে করোনায় আক্রান্ত হন। মোহনপুরে করোনা রোগীর সংখ্যা সাতজন। এর মধ্যে চারজনই সুস্থ হয়েছেন।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর বলেন, ২৫ এপ্রিল মনসুর রহমানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরদিন পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন। কয়েক দফা পরীক্ষা শেষে ৩৫ দিন পর তিনি করোনামুক্ত হয়েছেন।
করোনা জয় করে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনসুর রহমান বলেন, আমি যদি রোগ-শোক নিয়ে এই বয়সে করোনা থেকে মুক্ত হতে পারি, তাহলে মনোবল থাকলে সবাই এই রোগে জয়ী হতে পারবেন। তিনি জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাকে একা থাকতে হয়েছে। এই বয়সে একা থাকাটা তার জন্য একটু কষ্টকরই ছিল। তবে পরিবারের লোকজন, চিকিৎসক ও স্থানীয় প্রশাসন সবসময় তার খোঁজখবর নিয়েছে। সে জন্য ভয় অনেকটা কেটে যায়। মানুষ মানুষের পাশে থাকলে এ রোগেও কোনো ভয় নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মনসুর রহমানের পুত্রবধূ শামীমা পারভীন বলেন, আমার শ^শুরের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা একটু বিপদেই পড়ে যাই। আশপাশের লোকজন তাকে বাড়িতে রাখতে দিতে চাননি। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে বলেন, করোনা রোগীকে এখানে রাখা যাবে না। রাখলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেব। এ অবস্থায় ইউএনও, চিকিৎসক ও মোহনপুর থানার পুলিশ আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। এমনকি চিকিৎসকরা বাজার পর্যন্তও করে দিয়েছেন।