1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

‌আমার হাত দুটি ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা : পর্ব ১১

  • Update Time : শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৫৫৪ Time View

...নিজের কথা ভেবে ভীষণ হাসি পেত তখন। হতে চেয়েছিলাম এই সময়ের সক্রেটিস। বদলে হয়ে গেলাম মেয়ে মানুষের দালাল! —চমৎকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম এ করা একটা ছেলের কাজ হল এক বেশ্যার জন্য খদ্দের ধরে আনা! —এই না হলে পেশা? এই না হলে আমাদের স্বপ্নের ‘ভারতবর্ষ’!

উপমন্যু রায়

‌আমার তখন টাকার দরকার ছিল। কারণ, টিউশনি করে খরচ সামলে উঠতে পারছিলাম না। আগেই তা সম্ভব হচ্ছিল না, মাকে অ্যাসাইলামে পাঠানোর পর সেই খরচ আমার ওপর যেন পাহাড় হয়ে চেপে বসে। তাই একটা কাজের প্রয়োজন ছিল তখন।
কিন্তু কোথাও আশার আলো কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। সরকারি চাকরির আশা তখন ছেড়ে দিয়েছি। বেসরকারি সংস্থায় কাজ খুঁজতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার যোগাযোগ খুবই কম। খবরের কাগজে কর্মখালি দেখে আবেদন করতাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও জবাব পেতাম না। যা–ও বা দু–একটা ডাক পেতাম, তাতেও লাভ হত না।
আমার তো আবার দর্শন নিয়ে পড়াশোনা! তাই কোনও সংস্থাই আমাকে যোগ্য বলে বিবেচিত করেনি। তবে শুনেছি, দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করলে এখন কিছু সংস্থায় কাজ পেতে সুবিধে হয়। কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নাকি এথিসিস্ট বা এথিক্স অ্যাডভাইসার হিসেবে চাকরির জন্য দর্শন নিয়ে পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু ওই পদে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি। তাই কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ঠিকানা খুঁজে ফোর্স অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। লাভ হয়নি।
তবে আমার ভাগ্য ‘সুপ্রসন্ন’ বলতে হবে। একদিন চোখে পড়ে গেলাম উদিতাদির।
উদিতাদি আমাদের পাড়ায় থাকত। আমি জানতাম চাকরি করে। প্রতিদিন বেলা দশটা–এগারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ওই সময় রাস্তায় মাঝে মধ্যেই তাকে দেখতে পাই। কখন ফেরে, তা অবশ্য জানি না।
সেদিন সকালে রাস্তায় একেবারে মুখোমুখি পড়ে গেলাম উদিতাদির। আমার চোখে চোখ পড়তেই মিষ্টি করে হেসে উঠল। জিজ্ঞাসা করল, ‘‘কী খবর? মা কেমন আছে?’’
একই পাড়ায় থাকতাম বলে উদিতা হয়তো মায়ের খবর জানত। কিন্তু এ–সব ব্যাপার নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে আমার ভালো লাগত না। তাই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে বললাম, ‘‘চলছে। আর, মা মোটামুটি আছেন।’’
তার পর অবধারিত ভাবেই এলো আমার প্রসঙ্গ। উদিতাদি সরাসরি আমার কথাই জানতে চাইল। জানতে চাইল আমি চাকরি পেয়েছি কিনা!
এর আগেও মাকে যখন বাড়িতে বেঁধে রাখতে হত, তখন উদিতাদি একবার আমার চাকরির খবর নিয়েছিল। ‘চেষ্টা করছি’ বলেছিলাম। উদিতাদি বলেছিল, ‘‘হ্যাঁ, চেষ্টা কর। তুই তো পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েট। আশা করি হয়ে যাবে।’’
তার পর আরও কিছুদিন কেটে গেছে। আমার অবস্থার পরিবর্তন কিছুই হয়নি। কাজ খুঁজছি জেনে সেদিন উদিতাদি আমার দিকে ভালো করে তাকাল। জিজ্ঞাসা করল, ‘‘কী কাজ করতে চাস?’’
কাজ নিয়ে বাছবিচার করার সময় আমি পেরিয়ে গিয়েছিলাম। তাই বললাম, ‘‘যে কোনও।’’
উদিতাদি বিস্ময়ের গলায় বলল, ‘‘যে কোনও!’’
এ কথা ঠিক, হাতে টাকার যে টানাটানি চলছিল, তাতে কাজের মান বিচার করার মতো পরিস্থিতি আমার তখন ছিল না। আমি আর পারছিলাম না। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। আমার চারপাশটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। কী করব, বুঝতে পারছিলাম না।
উদিতাদির কথায় একটু যেন আশার আলো দেখতে পেলাম। জোর দিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ।’
উদিতাদি ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘সত্যিই তো?’’
ঘাড় নেড়ে দৃঢ় কণ্ঠে ‘হ্যাঁ’ বলি।
উদিতাদি প্রশ্ন করল, ‘‘কাজ নিয়ে তোর কোনও ফ্যাশিনেশন নেই তো?’’
বললাম, ‘‘না।’’
উদিতাদি একটা ঠিকানা লেখা কার্ড আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘‘আজই দুপুরে এই ঠিকানায় আমার সঙ্গে দেখা করিস।’’
একটা কাজের সুযোগ! তাই আর দেরি করিনি। বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ি।
ঠিকানাটা ছিল বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটা ফ্ল্যাটের। ওয়ান রুম ফ্ল্যাট। বেশ সাজানো–গোছানো। খাট, চেয়ার, টেবিল এবং একটা আলমারিও আছে। বুঝতে পারলাম না, এটা ফ্ল্যাট, না অফিস?
ফ্ল্যাটে একাই ছিল উদিতাদি। ফ্ল্যাটের চেহারা দেখে আমি যে অবাক হয়েছি, তা বুঝতে অসুবিধে হল না তার। হাসিমুখে বলল, ‘‘হ্যাঁ, এটাই আমার অফিস।’’
আমার একটু অবাক লাগল। তবে সেই ধোঁয়াশা কাটতে সময় লাগল না। উদিতাদি আমার হাতে কয়েকটা রঙিন ছবি দিল। ছবিগুলি তারই। তার পর কোনও রকম ভনিতা না করেই আমাকে সাবলীল ভাবে বুঝিয়ে দিল কী করতে হবে!
ক্লায়েন্ট ধরাই আমার কাজ। দুই ধরনের ক্লায়েন্ট। এক ধরনের ক্লায়েন্ট পুরনো। তাদের একটা তালিকা আমার কাছে থাকবে। তাদের ফের প্রভাবিত করে টেনে আনতে হবে। তাদের ফোন করতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
আর এক ধরনের ক্লায়েন্ট নতুন। তাদের খুঁজে বের করতে হবে আমাকে। কোন কোন সূত্র থেকে কী ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, তার পর কী ভাবে আলাপ করে প্রপোজাল দিতে হবে, আমাকে সব কিছু উদিতাদি বোঝাতে শুরু করল। এ ক্ষেত্রে মোবাইল, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য কী ভাবে নিতে হবে, সবই বুঝিয়ে দিল।
এ ছাড়া আনুষঙ্গিক কাজ হিসেবে কোন কোন হোটেলে কাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে, সেখানে বিল রিসিভ আর বিল পেমেন্ট, সবই করতে হবে আমায়। আর এ ভাবেই আমাকে ক্লায়েন্ট ধরতে হবে। ক্লায়েন্ট মানে সোজা কথায় কাস্টমার।
মাইনে দশ হাজার!
—মানে? উদিতাদি তা হলে—!!!
তবে উদিতাদি রাস্তার মহিলা নন, তিনি রীতিমতো অভিজাত। উচ্চস্তরেই তার কাজকর্ম। যে কেউই তার কাছে যেতে পারবে না। যেতে হলে অনেক পথ পেরোতে হবে। যে আসবে, তার স্ট্যাটাস কী, তা–ও যাচাই করে দেখা হয়। চার্জও অনেক বেশি।
চমকে উঠেও উঠতে পারিনি। কারণ জীবন তার আগেই যা চমক দেওয়ার, তা আমাকে দিয়ে দিয়েছে।
নিজের কথা ভেবে ভীষণ হাসি পেত তখন। হতে চেয়েছিলাম এই সময়ের সক্রেটিস। বদলে হয়ে গেলাম মেয়ে মানুষের দালাল! —চমৎকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম এ করা একটা ছেলের কাজ হল এক বেশ্যার জন্য খদ্দের ধরে আনা! —এই না হলে পেশা? এই না হলে আমাদের স্বপ্নের ‘ভারতবর্ষ’!
সক্রেটিস! গ্রিক দার্শনিক। আমার স্বপ্নের পুরুষ। মানুষকে জীবন ও সভ্যতার কথা বলতেন। বাঁচার মতো বেঁচে থাকার কথা বলতেন। আর সেই মানুষই তাঁর মুখে তুলে দিয়েছিল বিষ! কিন্তু, এই সময়ে? …খুব বেশি পরিবর্তন কি হয়েছে আমাদের মানসিকতার? তাই আমারও আর সক্রেটিস হয়ে ওঠা হয়নি।
আবারও একদিন একটা ঘটনা ঘটল। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করলাম। কোর্টের উল্টোদিকের বাড়িতে তিনতলার উপর তাঁর অফিস। খুবই ব্যস্ত মানুষ। সুপুরুষ। এবং, অবশ্যই অর্থবান। আমার সঙ্গে মেজাজ নিয়ে কথা বললেন।
মনে হল, আমি যেন একটা রাস্তার ছেলে। ধান্দাবাজি করে চলাই আমার পেশা! আর তিনি যেন মহান কোনও ব্যক্তি!
আমার খুব রাগ হল। কিন্তু মেনে নিতে হল। মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী! সারাজীবন সব কিছু মেনে নিতে নিতে আজ আমি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছি! না–হয় আর কিছুদিন, অন্তত যতদিন বাঁচি, ততদিন এ ভাবেই সব কিছু মেনে নিতে হবে!
তা ছাড়া তিনি ধনী। তার ওপর আইনজীবী হিসেবে তাঁর বেশ নাম–ডাক আছে। মাঝে মাঝে টিভির নিউজ চ্যানেলগুলোতে আইন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁকে মতামত দিতে দেখা যায়। এর অর্থ তো এই যে, তিনি রীতিমতো প্রভাবশালী। প্রভাবশালী মানুষের সঙ্গে আমার মতো দুর্ভাগার টক্কর নেওয়া মানায় না। তাঁরা তো আমার মতো অসহায় ছেলেকে দুরছাই করবেনই!
অবশ্য কারণটা এবং উদিতাদির আই কার্ড দেখে একটু নমনীয় হলেন। পরদিন বিকেলে বাইপাসের একটা নামী হোটেলে তাকে যেতে হবে বলে আমার কাছে বুকিং করে দিলেন। পেমেন্টের চেক হোটেলেই দেবেন। আমাকেও থাকতে হবে। তবে হোটেলের রুমে নয়। লাউঞ্জে। কাজ শেষ হলে উদিতাদিকে এবং চেক নিয়ে ফিরতে হবে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের অফিসে।
বেশ মোটা টাকা। বুঝতে অসুবিধে হয় না, কেন উদিতাদির মতো সামান্য এক মহিলা আমাকে মাসে দশ হাজার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে! (‌ক্রমশ)‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..