1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

স্বপ্ন শূন্যতা এবং: উপমন্যু রায় (পর্ব-০৮)

  • Update Time : শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২
  • ১০২৯ Time View

স্বপ্ন শূন্যতা এবং
‌(‌পর্ব ০৮)‌

উপমন্যু রায়

আট

যযাতিদার প্রথম সংসারে এক মেয়ে আছে। প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সেই মেয়েকে নিয়ে চলে যান। আর সংযুক্তা বউদির প্রথম সংসারে এক ছেলে আছে। তিনি প্রথম সংসারে সেই ছেলেকে রেখেই চলে এসেছেন। তার পর যযাতিদা আর সংযুক্তা বউদির নতুন সংসারে কোনও সন্তান হয়নি। এখন, সন্তান হয়নি, নাকি তাঁরা সন্তান নেননি, তা অবশ্য কুশল জানে না। তবে বিয়ে না করেও যে ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক আদর্শ দম্পতি হওয়া যায়, তার প্রমাণ কিন্তু সংযুক্তা বউদি আর যযাতিদা করে দিয়েছেন।
দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াও দারুণ। কুশল জানে না প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে যযাতিদার বোঝাপড়া কেমন ছিল! জানা নেই সংযুক্তা বউদির সঙ্গে তাঁর প্রথম স্বামীর সম্পর্ক কেমন ছিল, সে কথাও! তবে সে এ কথা বোঝে, দু’জনেরই প্রথম বিয়ে সফল হয়নি।
আর সফল হয়নি বলেই তাঁরা সেই সম্পর্ককে টেনে নিয়ে যাননি। বাস্তবকে মেনে নিয়েছেন। তাই দু’জনে পুরনো জীবন ফেলে পরস্পরের হাত ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে দু’জনের কেউই কিন্তু কাউকে এখনও প্রতারণা করেননি।
কারণ, কুশল যতটুকু জানতে পেরেছে, তাতে সে বুঝেছে, দু’জনের কারও সঙ্গে তাঁদের প্রথম পক্ষের স্ত্রী বা স্বামী–সন্তানের কোনও যোগাযোগ নেই। প্রথম পক্ষের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে সন্তানের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ থাকতেই পারত!
বেশ ক’দিন জ্বরে ভুগেছে কুশল। আজ কিছুটা ভালো। তবে, আজও সে বাড়ির বাইরে যাবে না ঠিক করল। মনে হচ্ছে আজকের দিনটা বিশ্রাম নিলে কাল থেকে ফের বের হতে পারবে। টিউশনিও যেতে পারবে। সকালে উঠে হাতমুখ ধুয়ে বিছানাতেই অর্ধেক শুয়েছিল সে। হাতে ‘লোটাকম্বল’। কিন্তু, পড়া হচ্ছে না। বারবার যযাতিদা আর সংযুক্তা বউদির কথাই মনে পড়ছে। মনে পড়ছে তাঁদের সম্পর্ক, তাঁদের ভালবাসা এবং সংস্কারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁদের জীবন কাটানোর কথা।
কুশলের মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, দু’জনের দাম্পত্য এত সফল কেন? তাঁরা বিবাহ নামে প্রথাটি অনুসরণ করেননি বলেই কি? জানে না সে। তবে এই প্রসঙ্গে তাঁর অ্যামব্রোজ বিয়ার্সের বলা একটা কথা মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ম্যারেজ ইজ আ কমিউনিটি কনজিস্টিং অফ আ মাস্টার, আ মিস্ট্রেস, অ্যান্ড টু স্লেভস, টোটাল অফ টু পিউপিল। হয়তো তাই।
তবে মাঝে মাঝে ভয় হয় কুশলের। যযাতিদার সঙ্গে তো তাঁর প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্স হয়নি! যদি কোনও দিন সেই স্ত্রী সন্তান–সহ ফিরে আসেন, যযাতিদা কী করবেন? ফিরিয়ে দিতে পারবেন?‌ যদি তিনি না মানেন, মানে ফিরিয়ে নিতে না চান? —কী হবে তা হলে?
অবশ্য দু’জনের মধ্যে মানসিক মিল বা যোগাযোগ না থাকলে, সম্পর্ক টেকে না। এ কথা যযাতিদাই বলে থাকেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ফিরে এলেও সেই সমস্যাটাই কি দু’জনকে ফের আলাদা করে দেবে? জানে না কুশল। অবশ্য প্রথম স্ত্রী যে চিঠি লিখে গিয়েছেন, তাতে মনে হয় না তিনি ফিরবেন বলে!
তবে, মাঝে মাঝে তার জানতে ইচ্ছে করে, যযাতিদার প্রথম স্ত্রী যার সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন, তাকে কি তিনি বিয়ে করেছেন? নাকি, যযাতিদা আর সংযুক্তা বউদির মতোই বিয়ে না করেও দম্পতি হিসাবে বসবাস করছেন?
সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য যযাতিদার সঙ্গে আইনত বিচ্ছেদ না হওয়ায় সেই স্ত্রীর পক্ষে আইনত কারও স্ত্রী হওয়া সম্ভব নয়। এ কথা ঠিক, কোনও তরফে কোনও অভিযোগ না উঠলে কে আর দেখতে যাচ্ছে যে, তাঁরা আইনত স্বামী–স্ত্রী কিনা‌!
তেমনই কুশলের আরও জানতে ইচ্ছে করে, সংযু্ক্তা বউদির প্রথম স্বামী ফের বিয়ে করেছেন কিনা! তাঁর পক্ষেও অবশ্য সংযুক্তা বউদির কাছ থেকে আইনত বিচ্ছেদ না নিয়ে নতুন করে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তবে এ সব ইতিহাস নতুন কাপলের কে–ই বা আর জানতে চায়!
যযাতিদা যে প্রথম স্ত্রীর আর কোনও খবর জানেন না, তা অবশ্য কুশল জানে। কিন্তু, সংযুক্তা বউদি তাঁর প্রথম স্বামীর খবর রাখেন কিনা, সে কথা অবশ্য জানা নেই তার।
তবে, এখন সংযুক্তা বউদি আর যযাতিদাকে দেখে কুশলের আসল কাপল বলেই মনে হয়। দু’জনের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব, তেমনই রয়েছে গভীর ভালবাসা। যে ভালবাসাকে স্বাভাবিক চোখে সহজে দেখা যায় না। যে ভালবাসা পরস্পরের কাছে কিছু বিনিময় আশা করে না। তবু, কী এক গভীর আকর্ষণে দু’জনকে দু’জনের কাছেই বেঁধে রেখে দিয়েছে!
মা চা দিয়ে গেলেন। বইটা বালিশের পাশে রেখে দিল সে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। ক’দিন যযাতিদার ফ্ল্যাটে যাওয়া হয়নি তার। অবশ্য ফোনে কথা হয়। কথা হয়েছে সংযুক্তা বউদির সঙ্গেও। তবে নিজের শরীর খারাপের কথা সে তাঁদের বলেনি। সামান্য জ্বরের কথা বলে তাঁদের ব্যস্ত করার কোনও অর্থ হয় না।
তাই সে বলেছে, ব্যস্ততার জন্য যেতে পারছে না। ক’দিনের মধ্যেই যযাতিদার সঙ্গে দেখা করবে। এ কথা না বললে নিশ্চয়ই দু’জনে এসে হাজির হতেন তার বাড়ি। ব্যাপারটা তা হলে তার কাছে অস্বস্তিকর হত।চায়ের সঙ্গে সিগারেট জমে ভালো। কাপে চুমুক দেওয়ার পাশাপাশি সিগারেটেও লম্বা টান দিল সে। তার পর মুখ ভরা ধোঁয়া ভাসিয়ে দিল বাতাসে। শূন্যে এঁকে–বেঁকে সেই ধোঁয়া উপরের দিকে উঠতে লাগল। শেষে বাতাসে একেবারে মিশে গেল।
চা পান করতে করতে তার মাথায় ঘুরতে লাগল যযাতিদা আর সংযুক্তা বউদির কথা। বিশেষ করে সংযুক্তা বউদির কথাই তার মনে পড়ল বেশি। দেখলেই বোঝা যায় ভদ্রমহিলা অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন এক সময়। আজ পঁয়তাল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে সংযুক্তা বউদির বয়স। বয়স অনুযায়ী একটু ভারী হয়েছে শরীর। কিন্তু, এখনও কী অস্বাভাবিক আকর্ষণ রয়েছে তাঁর চেহারায়! রাস্তায় সংযুক্তা বউদির সঙ্গে চলাফেরা করতে গিয়ে দেখেছে, পথচলতি পুরুষের দৃষ্টি অনায়াসে চলে যায় তাঁর দিকে। এমনকী, মহিলারা পর্যন্ত তাঁর দিকে তাকায়। হয়তো ঈর্ষায়!
চা পান শেষ হয়ে গেলে দেখল সিগারেট তখনও অর্ধেক বাকি। মানে, অর্ধেক জ্বলছে। সিগারেটে দীর্ঘ একটা টান দিল কুশল। তার পর আগের মতো ফের এক গাল ধোঁয়া মাথার উপরে ছেড়ে দিল। কাঁপতে কাঁপতে কুণ্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া আবার উপরে উঠতে লাগল। বেশ অদ্ভুত লাগে এই অবস্থায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখলে। কুশল একা থাকলে হামেশাই এই ধোঁয়ার খেলা দেখে।
কিন্তু, কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তার পর হঠাৎই কুশল লক্ষ্য করল, ধোঁয়া ঠিক যেন উপরে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে না। বরং, ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে তার চারপাশ। শেষে সারা ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল সেই ধোঁয়া!
তা দেখে কুশল আশ্চর্য হয়ে গেল। আরও অবাক লাগল এত ধোঁয়াতেও তার চোখ জ্বালা করছে না! বরং অদ্ভুত রকম ঠান্ডা লাগছে। ধোঁয়াটাই ঠান্ডা। চাপচাপ ঠান্ডা ধোঁয়া যেন তার চারদিকে ভাসছে।
একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হল যেন। কেমন একটা স্বপ্নিল জগৎ আচমকা হাজির হল তার সামনে। ভালোও লাগল। কুশল মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগল সেই স্বপ্নের দুনিয়া। বেশ লাগছে এই ধোঁয়া ধোঁয়া জগৎ।
কিন্তু, বড় রহস্যময় লাগছে ব্যাপারটা। হঠাৎই সে চমকে গেল। দেখল সেই ধোঁয়ার মাঝ থেকে বেরিয়ে আসছে কেউ। তবে বড় ঝাপসা দেখাচ্ছে। ভালো করে দেখল কুশল। মনে হল, শাড়ি পরা কেউ। মানে মহিলা!
কুশল বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইল সে–দিকে। সেই নারীমূর্তি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। চেনা চেনা লাগছে তাকে। আচমকা পৃথিবীটা যেন দুলে উঠল তার সামনে।
সংযুক্তা বউদি!
দেখল সংযুক্তা বউদি ওই ধোঁয়ার আড়ালে রয়েছেন। ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হচ্ছেন। তার পর একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেলেন তিনি। তার সামনে এসে দাঁড়ালেন। কিন্তু এ কোন সংযুক্তা বউদি?
ভয়ঙ্কর সুন্দরী লাগছে তাঁকে! যেন স্বর্গভ্রষ্টা কোনও দেবী! তার পর—। বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল সে। মূক হয়ে গেল তাঁর সৌন্দর্য–বিভায়।
সংযুক্তা বউদি হাসছেন! ভারী মিষ্টি তাঁর এই হাসি। তাঁর চোখ দুটোও স্পষ্ট দেখতে পেল কুশল। যেন বুঝতেও পারল তাঁর দৃষ্টির ভাষা। গভীর মমতা মাখা সেই দৃষ্টি!
হঠাৎ স্নেহের চোখে তার দিকে চেয়ে সংযুক্তা বউদি বললেন, ‘‘এত ভুলভাল চিন্তা করছিস কেন? তুই কিন্তু ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছিস! আরে বাবা, আমি আর তোর যযাতিদা তো তোর পাশেই রয়েছি। তুই শুধু নিজের কাজ করে যা। এর বেশি কিছু ভাবিস না।’’
কুশলের মনের গভীরে কী যেন হতে থাকে! বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হয়! ঠিক বুঝতে পারে না। তবে, খুব খারাপও লাগছে না। যেন সংযুক্তা বউদিকে দেখে তার আরও একটু পরীক্ষা করে দেখতে ইচ্ছে করে সময়কে। যাচাই করতে ইচ্ছে করে নিজের চেষ্টা আর ভাগ্যকে।
আচমকাই তার হাতে গরম কী একটা ছ্যাঁকা লাগে। চমকে ওঠে সে। সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছে। তারই ফিল্টারের শেষ প্রান্তে আগুন চলে এসেছে। তারই ছ্যাঁকা লেগেছে তার আঙুলে।
দ্রুত সিগারেটটা অ্যাশ–ট্রেতে ফেলে দিল কুশল। তার পর ফের অবাক হওয়ার পালা তার। সেই ধোঁয়া, যেখানে ছিলেন সংযুক্তা বউদি, সেই ধোঁয়া সংযুক্তা বউদিকে নিয়ে ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে।
চোখ ভারী হয়ে আসে কুশলের। শরীর এলিয়ে দেয় বিছানায়। চোখ বুজে আসে। ঘুম পায় তার।  (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..