1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রের ৫০ বছর আজ

  • Update Time : শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৮৭ Time View

ইমরান ইমন||
একটি দেশ। একটি সংসার। একটি চাবির গোছা। একটি আন্দোলন। নান্দনিক পোস্টারের এই স্লোগান পড়ে মনে হতে পারে কয়েকজন নারী আর একটি চাবির গোছা নিয়ে একটি আটপৌরে বাঙালি পরিবারের গল্প। কিন্তু সেটি ছিল আসলে একটি রাষ্ট্রের গল্প। রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের গল্প। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির গল্প।

কালজয়ী নির্মাতা জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির এই গল্প ছিল যেন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক সাংস্কৃতিক মুখবন্ধ। জীবন থেকে নেয়া এবার ৫০ বছরে পড়ছে। ১০ এপ্রিল চলচ্চিত্রটি মুক্তির অর্ধশতক পূর্ণ হলো। জহির রায়হানের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আনিস ফিল্মস করপোরেশনের পরিবেশনায় ১৯৭০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি।

সবার বুকে তখন মুক্তির আগুন। মুখে বারুদমাখা স্লোগান। পরাধীনতার নিষ্পেষণের একসময়ে জহির রায়হান সেলুলয়েডে অমর করে রাখলেন বাঙালির মুক্তির অধিকার আদায়ের আখ্যান। তখনকার চলচ্চিত্রের গুণীজনদের মধ্যে কে ছিলেন না ছবিটিতে! সবার আগে কান্ডারি জহির রায়হান। ছিলেন খান আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রওশন জামিল, রাজ্জাক,রোজি সামাদ, আমজাদ হোসেন।

ছবিটি জন্মের আগে!

১৯৬৯-৭০ সালের দিকে অবাঙালি প্রযোজক আনিস দোসানি অনুজ পরিচালক জহির রায়হানকে একটি ছবি বানাতে বললেন। কাহিনি ও চিত্রনাট্যের জন্য ডাকা হলো অভিনেতা ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনকে। জহির রায়হান তাঁকে বললেন, ‘এমন একটা গল্প হবে, যেখানে এক বোন আরেক বোনকে বিষ খাওয়াবে।’ আমজাদ বললেন, ‘বোন বোনকে বিষ খাওয়াবে! দর্শক কি ব্যাপারটা গ্রহণ করবে?’

আমজাদ লিখে ফেললেন প্রথম দৃশ্য। কিন্তু অন্য রকম, এক বোন আরেক বোনকে দুধ-ভাত খাওয়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জহির স্ক্রিপ্ট দেখলেন। দেখেই বললেন, ‘খাওয়াতে বললাম বিষ! আর খাওয়াচ্ছেন দুধ!’ আমজাদ হেসে বলেন, ‘দুধ না খাওয়ালে বিষ খাওয়াব কীভাবে!’ এরপর আমজাদ যেভাবেই লেখেন না কেন, তা পারিবারিক গল্প থেকে রাজনৈতিক গল্পে চলে যেতে থাকে।

এর কারণ আমজাদ হোসেন নিজেই জানিয়েছেন তাঁর স্মৃতিচারণায়। উনসত্তরের প্রবল গণ–অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হয়েছেন আসাদ। আমজাদ হোসেন সে সময় মাওলানা ভাসানীর অনুসারী। তাঁকে ডেকে ভাসানী বললেন আসাদকে নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে। কিন্তু সরকারি চাপে আসাদের পরিবারের অনুরোধে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। জীবন থেকে নেয়ার চিত্রনাট্য লিখতে বসে বারবার সেই অবরুদ্ধ আবেগের দরজা খুলে যাচ্ছিল।

মুক্তির আগাম বার্তা!

ছবির কাহিনি আবর্তিত হয় দজ্জাল বড় বোন রওশন জামিল, স্বামী খান আতাউর রহমান, দুই ভাই শওকত আকবর ও রাজ্জাক, দুই ভাইয়ের বউ রোজী ও সুচন্দা, বাড়ির গৃহপরিচারক এবং রোজী–সুচন্দার বড় ভাই রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেনকে ঘিরে। পুরো বাড়িতে রওশন জামিলের একচ্ছত্র আধিপত্য। তার প্রতাপশাসিত সংসারে চলে আসে দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রী। এবার এই সংসারের চাবির গোছা নিজের মুঠোয় আনার কূটকৌশল চরমে পৌঁছায়।

ছবিতে একাকার হয়ে যাচ্ছিল রওশন জামিল আর সময়ের পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের মুখচ্ছবি। আনোয়ার হোসেন সে সময়ের জনপ্রিয় ও সচেতন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা, রাজ্জাক প্রতিবাদী বিদ্রোহী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি। ছবির শেষে নবজাতকের আবির্ভাব ঘটে, তার নাম মুক্তি। শিল্পের ছত্রচ্ছায়ায় এ যেন পরাধীন বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা।

চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান। আধুনিক বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির কম্পোজিশন করলেন। কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এবং আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’সহ প্রায় সব গানেই তিনি আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কম্পোজিশন করেছিলেন।

বর্তমানে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিঞা আলাউদ্দিন তখন চলচ্চিত্র–সাংবাদিক। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘ছবিটিকে সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তৎকালীন প্রশাসন। কারণ, তাঁরা বুঝতে পারেন, রওশন জামিলের চরিত্রটি একটি স্বৈরাচারের চরিত্র। ছবির সংশ্লিষ্টরাও কম যান না। তাঁদের পরোক্ষ উদ্যোগে দর্শক মিছিল করেছিল। সামরিক সরকার বাধ্য হয় ছবিটি মুক্তি দিতে। কিন্তু মুক্তির প্রথম দিনই সারা দেশে হইচই পড়ে গেল। আর প্রথম দিনেই নিষিদ্ধ হলো প্রদর্শনী। সব সিনেমা হল থেকে আর্মি জব্দ করে নিয়ে গেল সিনেমার রিল। আমি ঢাকার গুলিস্তান হলে ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন প্রজেকশন রুম থেকে রিল নিয়ে গেলে শত শত দর্শক হলের সামনে এসে বিক্ষোভ করে। সিদ্ধান্ত হলো, পরদিন সেন্সর বোর্ড আবার বসবে। আবারও সেন্সর বোর্ড অনুমোদন দিল বটে, তবে প্রজেকশন শেষে তৎকালীন জেনারেল রাও ফরমান আলী পরিচালকের উদ্দেশে বললেন, ‘ছবিটি ছেড়ে দিলাম, তবে আমি তোমাকে দেখে নেব।’‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য।

উল্লেখ্য জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..