ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা: চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রসালো লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাটনাই, বোম্বে, চায়না থ্রি ও দেশীয় জাতের লিচুর সম্ভার এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাগানগুলোতে। রসালো লিচুর বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। সবগুলো বাগানেই রসালো ও সুমিষ্ট লিচু সবার নজর কেড়ে নেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবাসহ জেলায় এ বছর ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা লাভবান হবেন বলে মনে করছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানকার লিচু কিনতে বাগানগুলোতে আনাগোনা শুরু করেছেন। লিচুর সম্ভারে বাগানগুলোর দৃশ্যপটই বদলে গেছে। লিচুর ভারে সবগুলো গাছের ঢালই মাটিতে অনেকটা নুইয়ে পড়েছে। থোকা থোকা ঝুলে আছে লোভনীয় বিভিন্ন জাতের রসালো লিচু। প্রতিটি থোকেই ১০ থেকে ১২টি করে লিচু এসেছে। এ এক মনোরম দৃশ্য। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি হওয়ায় লিচুগুলো রসালো তো বটেই সুমিষ্ট ও মাংসালও হয়েছে।
উৎপাদিত লিচু বিক্রি করার আশায় বাগান থেকে লিচু পাড়তে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষিরা। প্রতিদিন সকাল থেকেই বাগানসংশ্লিষ্টরা দুই থেকে তিনজন শ্রমিক দিয়ে প্রতিটি গাছ থেকে লিচু পাড়েন। অন্যদিকে আরেক দল মাটিতে সারিবদ্ধভাবে বসে লিচু বাছাই করে ১০০টি করে থোকা বানান। জাতভেদে ১শ লিচু বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এরই মাঝে রসালো এই ফল কিনতে বাগানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমছে। চলমান করোনা সঙ্কটে ব্যাপক আকারে না হলেও সীমিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এই লিচু ক্রয় করতে আসছেন। তারা দরদাম করে প্রয়োজন মতো লিচু কিনে তা বিভিন্ন পরিবহনে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ২০০১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ শুরু হলেও প্রতিবছরই বাড়ছে আবাদের পরিমাণ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এই মৌসুমে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় ৪২০টির মতো বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৩৬৮ টন। বাগান মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাগানে ৮০টির বেশি লিচুগাছ রয়েছে। এ বছর লিচু উৎপাদনে আমার ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে ৪ লাখ টাকার মতো আয় হবে। এতে আমি লাভবান হব বলে আশাবাদী।
আরেক বাগান মালিক জহির মিয়া বলেন, লিচু বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে। পাইকাররা আগে থেকেই লিচুগাছ থেকে চুক্তি করে সব লিচু কিনে ফেলেছে। ফলন আসার আগে প্রতিটি গাছে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়েছে। ফল ধরার সময় বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ওষুধ গাছে ব্যবহার করি। অন্যান্য জেলা থেকে পাইকাররা তেমন আসছে না। যেহেতু সরকার লকডাউন উঠিয়ে দিয়েছে। সামনে আরও যে কয়টা দিন পাওয়া যাবে তাতে সে জন্য ভালো দামই পাব বলে আশা করি।
ব্যবসায়ী সাইফুল মিয়া বলেন, এ বছর বাগানের মালিকের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার লিচু আগাম কিনেছি। গাছে ফলন আসার সময়ই লিচুর বাগান কিনে ফেলেছি। পরে লোকবল দিয়ে নিয়মিত দেখভাল করে আসছি। করোনার জন্য আমাদের এবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই তাহলে সরকার যেন আমাদের জন্য ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে এই দাবি জানাই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদার বলেন, করোনার মধ্যেও নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। ফল ধরার সময় গাছে যাতে পোকামাকড় আক্রমণ না করতে পারে সে জন্য বিভিন্ন সময়ে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগানগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় এ বছর প্রায় ১৪ কোটি টাকার মতো লিচু বিক্রি হবে। চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।