প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম পাপুলকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন কুয়েতের একটি আদালত। মুদ্রাপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত শনিবার পাপুলকে দেশটির মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল সোমবার রিমান্ডের আবেদন করলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের বিচারক তা মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পাপুলের পক্ষে জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুল নিজ এলাকায় ‘কাজী পাপুল’ নামেই বেশি পরিচিত। জানা গেছে, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া পাঁচ বাংলাদেশিকেই কুয়েতে পাচার করেছিলেন পাপুল। কুয়েতের আদালতকে তাঁরা জানান, এ জন্য তাঁরা প্রতিজন সংসদ সদস্য পাপুলকে তিন হাজার কুয়েতি দিনার দিয়েছেন।
স্থানীয় দৈনিক আরব টাইমস জানায়, বিচারকমণ্ডলী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাক্ষ্য শুনেছেন। এসব সাক্ষী প্রতিবছর কুয়েতে তাঁদের অবস্থান নবায়ন করে নিতে আসামি পাপুলকে অর্থ দিতেন। কুয়েতে জালিয়াতির মাধ্যমে মানবপাচার করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া পাপুল গত শনিবার রাতে আটক হন। এরপর তাঁকে স্থানীয় আদালতে হাজির করা হয়। দ্রুতই মামলাটির পূর্ণ শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল কুয়েতে আটক হওয়ার ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর মতে, সারা বিশ্ব মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এমন সময়ে তেমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজন সংসদ সদস্য আটক হওয়ার খবর অনভিপ্রেত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য পাপুলকে আটকের বিষয়টি টেলিফোনে ঢাকায় জানিয়েছেন, যদিও কুয়েতের কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
কুয়েত রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে মন্ত্রী জানান, সংসদ সদস্য কুয়েতে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, যিনি কুয়েতের নাগরিক, সংসদ সদস্যকে জামিনে মুক্ত করার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। সংসদ সদস্যকে কেন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কুয়েতের কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি বলেও রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। তবে পাপুলের বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগ কেউ দিয়েছে। তা ছাড়া যেহেতু বড় ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করেন, সেখানে তাঁর সঙ্গে অন্যদের ব্যাবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রয়েছে।
কুয়েতের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কুয়েতে পৌঁছেন পাপুল। এরপর আসা-যাওয়া করেও সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে কিছু একটা ঘটেছে, যে কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানবপাচার ও মুদ্রাপাচার নিয়ে তিন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা নিয়ে কুয়েতের সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে।