ওয়েব ডেস্ক: চট্টগ্রামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঐক্য ও সম্প্রীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্নিমা উদযাপন উপলক্ষে নগরীর কাজীর দেউরীতে বিএনপি কার্যালয়ের মাঠে এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসময় আমীর খসরু আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশকে রংধনু নেশনে পরিণত করতে চান। অর্থাৎ একটি রংধনুতে যেরকম অনেকগুলো রং থাকে সে রঙের মধ্যে আমাদের ১৭-১৮টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা আছে, বাঙালি যারা আছে সবাই এক একটি রং। সব রং মিলে কিন্তু রংধনু অর্থাৎ রেইনবো নেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বিএনপির মূলমন্ত্র। অনেকেই এটা হৃদয়ে ধারণ করে না। হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আর যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে তারাই বৌদ্ধদের মন্দিরে আগুন লাগিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১২ সালে রামু মন্দিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় ছবি আছে। আমরা দেখেছি সব। এটার কোনো বিচার হয়নি। উখিয়াতে মন্দিরে আক্রমণ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন, কোনো বিচার হয়নি। হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমণ করেছে কুমিল্লায়। মিথ্যা মামলা দিয়েছে অন্য মানুষের নামে। এ হামলা করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সুতরাং এদের থেকে যদি বাঁচতে হয় আজ সম্মিলিত ভাবে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একটি ঐক্যবদ্ধ জায়গায় যেতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৌদ্ধদের মূল বসবাসের জায়গা। আপনাদের মধ্যে যদি ঐক্য থাকে, আপনারা যদি সমর্থন দেন আগামী দিনে যে রেইনবো নেশনের কথা বলছি সেটা করতে আমাদের অনেক সহজ হবে। সবাই রাষ্ট্রের সমান অধিকার ভোগ করবে। আমরা চাই আপনাদের মধ্যে থেকে রাজনীতিতে উঠে আসুক। বিএনপিতে আপনারা অংশগ্রহণ করেন। আপনারা নেতৃত্বে আসেন। আপনাদেরকে কাউন্সিলর হতে হবে, চেয়ারম্যান হতে হবে, উপজেলা চেয়ারম্যান হতে হবে, এমপি ও মন্ত্রী হতে হবে। বিএনপি সেটাতে বিশ্বাস করে। জাতিকে আজ ঐক্যবদ্ধ করে এই ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে আমাদের মুক্তি লাভ করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। বর্তমান সময়টা জাতির জন্য সবচেয়ে সংকটময়। এ সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে প্রতিহিংসার কারণে শাসকগোষ্ঠী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় রেখেছে। বিরোধী কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেই নির্বাচনী পরিকল্পনা সরকার তৈরি করেছে। তার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সব রাজনৈতিক দল এখন সরকারের পদত্যাগ চাইছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবি আদায় করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ অহিংসা ও মানুষে মানুষে গভীর ভালোবাসার বাণী প্রচার করে গেছেন। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না। আজকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব রক্তপাত, সংঘাত ও সংঘর্ষে মানবজাতি ক্ষতবিক্ষত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদই সবাইকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করে। শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও আমাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত গণতন্ত্র ও শান্তি ফিরে আসবেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামা ওবায়েদ বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই চমৎকার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ঐক্য সম্প্রীতির সম্মেলন। আজকে দেশের মানুষ শান্তিতে নাই। গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে বিএনপি। তাই দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি আনতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ঝন্টু কুমার বড়ুয়ার পরিচালনায় সমাবেশে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি মা ম্যা চিং, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম সম্পাদক দিপেন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাভেদ রেজা।
সম্প্রীতি সমাবেশ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাবু চন্দ্রগুপ্ত বড়ুয়া। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. কামরুল ইসলাম, বৌদ্ধ ঐক্যফ্রন্টের নেতা প্রবীণ চন্দ্র চাকমা, অনিমেষ চাকমা রিঙ্কু, অংজা প্রু চাকমা, প্রকৌশলী দিপু বড়ুয়া, কমল জ্যোতি বড়ুয়া, প্রীতম বড়ুয়া, সাচিং মারমা, উত্রাসিং মারমা, সুজন বড়ুয়া, বরুন বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া, মোহন বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়া, চয়ন বড়ুয়া, দীক্ষিত বড়ুয়া, তন্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।