স্পোর্টস ডেস্ক: আগে ও পরে যাই বলা হোক না কেন, অনেক বড় সমালোচকও মানছেন বিশ্বকাপে খেলা ১০ ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া নিউজিল্যান্ডের সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সিলেট স্টেডিয়ামে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে ১৫০ রানের জয় ছোটখাট সাফল্য নয়। মনে রাখার মত এক সাফল্য।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর শতরানসহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া, পরিণত ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ ফিগার আর মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, শাহাদাত হোসেন দিপু, শরিফুল ও নাইম হাসানের মত একঝাঁক তরুণের কার্যকর নৈপূণ্যে সাজানো এ জয়কে বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞরা দলগত প্রচেষ্ঠা ও টিম পারফরমেন্স বলে অভিহিত করেছেন।
অনেকেরই মন্তব্য, সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের জয় ছিল কমপ্লিট টিম পারফরমেন্স ও টিম ওয়ার্কের ফসল। সম্পূর্ণ ভিন্ন ফরম্যাটে হলেও বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর জাতীয় দলের এমন টিম পারফরমেন্স দেখে ভক্ত ও সমর্থকরা রীতিমত উদ্বেলিত ।
সবার কৌতুহলী প্রশ্ন, মিরপুরের শেরে বাংলায় দ্বিতীয় টেস্টে কেমন করবে শান্তর দল? হোম অব ক্রিকেটের উইকেট কেমন হবে? এখানে টিম কম্বিনেশনটাই বা হবে কেমন? ক’জন স্পেশালিস্ট ব্যাটার, ক’জন পেসার ও স্পিনার খেলবেন?
টিম ম্যানেজমেন্টও এ নিয়ে এখনই কোন মন্তব্যে যেতে নারাজ। কথা বলে জানা গেছে, উইকেট না দেখে একাদশ সাজানোর কথা ভাবছেনা টিম ম্যানেজমেন্ট। আজ রোববার ছিল বিশ্রাম। সিলেট থেকে ঢাকা এসে হোটেলে শুয়ে-বসেই কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
কাল ৪ ডিসেম্বর শেরে বাংলায় প্র্যাকটিস। সে প্র্যাকটিসে উইকেট দেখে একাদশের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন কোচ হাথুরুসিংহে আর নির্বাচকরা। তবে হাবভাবে দেখে মনে হচ্ছে, সিলেটের মত হয়তো হোম অফ ক্রিকেটে তিন স্পিনার আর এক পেসার নিয়ে নাও নামতে পারে স্বাগতিকরা। টিম কম্বিনেশনে খানিক পরিবর্তন আসতে পারে। একজন ব্যাটার কমিয়ে একজন বোলার বিশেষ করে পেসারকে নেয়া হতে পারে।
সিলেটেতো ৪ জন মাত্র বোলার নিয়ে বিরাট জয়ের দেখা মিলেছে, ঢাকায় কেন সে কম্বিনেশন পাল্টানোর চিন্তা? কারণ কী? ইতিহাসই দিচ্ছে তার জবাব। এ বছর মিরপুরে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট খেলেছে। একটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অন্যটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে দুটি টেস্টেই টাইগার একাদশে তিনজন করে পেসার খেলানো হয়েছে। গত এপ্রিলে আইরিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল ৬ স্পেশালিস্ট বোলার দিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল। তিন দ্রুতগতির বোলার, শরিফুল, খালেদ ও এবাদতের সাথে স্পিনার কোটায় সাকিব ও তাইজুল এবং অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ খেলেছেন। ওই টেস্টে বাংলাদেশ জয়ী হয় ৭ উইকেটে।
ম্যাচে আইরিশদের ২০ উইকেট ভাগ করে নেন বোলাররা। বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল একাই নেন ৯ (৫/৫৮ ও ৪/৯০) উইকেট। বাকি ১১ উইকেট ভাগ করে নেন এবাদত (২/৫৪, ৩/৩৭), সাকিব (২/২৬), মেহেদি হাসান মিরাজ (২/৪৩, ০/৫৮) ও শরিফুল (১/২২ ও ১/৩৫)। পেসার খালেদ (০/২৯ ও ০/৩৮) কোন উইকেট পাননি।
২ মাস পর জুনে একই ভেন্যুতে আফগানদের বিপক্ষে বিশ্বরেকর্ড ৫৪৬ রানের পাহাড় সমান জয়ের টেস্ট একাদশে ছিলেন ৫ স্পেশালিস্ট বোলার। ৩ পেসার- তাসকিন (০/৪৮ ও ৪/৩৭), শরিফুল (২/২৮ ও ৩/২৮) আর এবাদত (৪/৪৭ ও ১/২২) মিলেই ১৪ উইকেট ভাগ করে নেন।
বাকি ৬ উইকেটের ৫টি জমা পড়ে ২ স্পিনার তাইজুল (২/৭ ও ০/১৯) এবং মেহেদি হাসান মিরাজের (২/১৫ ও ১/৫) পকেটে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, শেরে বাংলায় শেষ দুই টেস্টে স্পিনার আর পেসারদের সমান কার্যকরিতা ছিল। এখানে তাই তিন স্পিনারের সাথে একজন মাত্র পেসার নিয়ে খেলতে নামার সম্ভাবনা খুব কম। সমান তিনজন করে স্পিনার আর পেসার না হলেও তিন স্পিনার তাইজুল, মিরাজ ও নাইম হাসানের সাথে অন্তত ২ পেসার খেলার সম্ভাবনা প্রচুর।
সেক্ষেত্রে একাদশে পেসার হাসান মাহমুদকে দেখা যেতে পারে। এমনটি হলে সিলেটে অভিষেক হওয়া শাহাদাত হোসেন দিপু কিংবা ওপেনার জাকির হাসানের কাউকে বাইরে যেতে হবে। শাহাদাত দিপু সবে একটি মাত্র টেস্ট খেলেছেন। আহামরি কিছু না করলেও দুই ইনিংসের কোনটাতেই তাকে আড়ষ্ট মনে হয়নি। মোটামুটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছিলেন। তবে যখনই মনে হয়েছে তিনি উইকেট ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানিয়ে নিয়েছেন, তখনই আউট হয়ে গেছেন।
তাই তাকে পরের টেস্টে ড্রপ করাটা ভাল দেখাবে না। আর বাঁ-হাতি ওপেনার জাকির হাসান গত টেস্টে দুই ইনিংসেই রান পাননি। উভয় ইনিংসে কিউই স্পিনার এজাজ প্যাটেলের অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে আসা ডেলিভারিতে আউট হয়েছেন। যা চোখে লেগেছে। তাই তাকে বাদ দিয়ে একজন পেসারের দলভুক্তি ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।