1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

চিন কি সত্যিই কারও বন্ধু হতে পারে ?

  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০
  • ২৯১ Time View

উপমন্যু রায়

চিন–ভারত বিরোধ নিয়ে ইদানীং কেউ কেউ একটি অদ্ভুত প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। তাঁরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে কেন?
প্রতিবেশী দেশ বলতে পাকিস্তান, চিন, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার কথাই মূলত বলা যায়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রথম থেকেই খারাপ। এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। সম্প্রতি নেপালের সঙ্গেও যে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে, সে কথা মেনে নেওয়া যেতে পারে। তবে সেইজন্য ভারতকে কতখানি দায়ী করা যায়, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এর মধ্যে কোনও দিনই যেমন অতিরিক্ত কিছু ছিল না, তেমনই কখনও ভয়ঙ্কর তিক্তও হয়নি। তামিল ইস্যুতে নরমে–গরমে সম্পর্কের ওঠা–নামা চললেও শ্রীলঙ্কা বা ভারত কখনও পরস্পরকে চরম শত্রু মনে করেনি। আর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের তেমন অবনতি কোনও দিনই হয়নি। বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশ পরস্পরের কাছাকাছিই থেকেছে এতদিন এবং এখনও থাকে। ভুটানের ক্ষেত্রেও তাই। আর মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, এ কথা অনস্বীকার্য, ইদানীং পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চিন সম্পর্ক ভালো করতে চাইছে। নানা ভাবে সহযোগিতা করে সেই প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, চিন কি সত্যিই কারও বন্ধু–রাষ্ট্র হতে পারে? এর একটাই উত্তর, না। প্রশ্ন, কেন নয়? উত্তর, বলছি।

অনেকেই বলেন, চিন কমিউনিস্ট দেশ। ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্টরাও এই চিন নিয়ে আহ্লাদে আটখানা হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অবশ্য কিছু করার নেইও। আসলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন মুছে যাওয়ার পর তাঁদের সামনে অন্ধের যষ্ঠির মতো চিনই একমাত্র উদাহরণ। তাই চিন–ভারত বিবাদে এখনও তাঁরা পঞ্চশীল নীতির কথা তুলে সত্যকে আড়াল করতে চান।
কিন্তু, আসল কথা হল, কমিউনিজম চিনের একটা ছদ্মবেশ মাত্র। দেশটা প্রকৃত পক্ষে সাম্রাজ্যবাদী একটি শক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের অর্থনীতির মূল কথাও সমাজতন্ত্রের বেশে পুঁজিবাদই। সেইজন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকার সময়ও তাদের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক সেই অর্থে গভীর হয়ে ওঠেনি। আবার, এখন কমিউনিস্ট ভিয়েতনামও চিনকে শত্রুদেশ বলেই মনে করে। এর কারণ নিশ্চয়ই আছে।
ভারত–চিন সঙ্ঘাতের সময় চিনের সাম্রাজ্যবাদী মনোবৃত্তির কথাই ফের আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সেন্ট্রাল তিব্বত অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রেসিডেন্ট লোবসাং সাঙ্গে। তিনি বলেছেন, গালোয়ান উপত্যকায় সঙ্ঘর্ষ নামেই, আসলে চিনের লক্ষ্য আরও বেশি বিধ্বংসী। এ ব্যাপারে চিনের ‘পাঁচ আঙুলের কৌশল’ বা ‘ফাইভ ফিঙ্গার স্ট্র্যাটেজি’র কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।
এটা আসলে একটা রণকৌশল বা যুদ্ধনীতি। যার সূচনা করেছিলেন স্বয়ং মাও সে তুং।
তিব্বত দখল করে নেওয়ার সময় মাও সে তুং এবং অন্য নেতারা বলেছিলেন, তিব্বত আসলে হল হাতের তালু। ওই দেশটা তাদের ছিলই। হাতের বাকি পাঁচটা আঙুলও তাঁদের চাই। না হলে হাতের কোনও কাজই ঠিকমতো করা যাবে না। এই বাকি পাঁচটা আঙুলের একটা হল লাদাখ উপত্যকা, আর অবশিষ্ট চারটে অঞ্চল হল নেপাল, ভুটান, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ। এখন ভাবুন তাদের উদ্দেশ্যটা।

গালোয়ান নিয়ে চিনের আগ্রাসী মনোভাবে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, এই উপত্যকা নাকি চিনেরই। ২০১৭ সালে ডোকলাম দিয়ে চিনের এই আগ্রাসন নতুন করে শুরু হয়েছে। চিন যতই দাবি করুক না কেন, ডোকলাম আসলেই ভুটানের একটি অংশ। এখানে চিনা সেনারা রাস্তা তৈরি করতে গেলে ভারতীয় সেনারা বাধা দেয়। ফলে বিবাদ তৈরি হয়। শেষে চিন রাস্তা তৈরি স্থগিত করে। যদিও এই সীমান্তে চিনা এবং ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।
এবার গালোয়ান। বোঝা যাচ্ছে, চিনের আগ্রাসন কতটা পরিকল্পিত। গোটা পৃথিবী এখনও চিনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড–১৯ ভাইরাসের আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত। (‌হয়তো এমন ভাইরাসের আক্রমণের ঘটনাও চিনেরই একটা পরিকল্পনার অংশ)‌। সেই সুযোগে আচমকাই গালোয়ান উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে চিনা সেনা।
১৯৭৫ সালের পর ভারত–চিনের সেনাদের মধ্যে এমন সঙ্ঘর্ষ হয়নি। পরিণতিতে দুই দেশেরই বেশ কয়েকজন সেনার প্রাণ গিয়েছে। বলা বাহুল্য, বিষয়টি নিয়ে গত ৬০ বছর ধরেই তিব্বতের নেতারা বারবার সতর্ক করে এসেছেন ভারতকে।

আসলে তিব্বত দখলের পর থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল অংশকে নিজেদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল তৈরি করতে চিন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে মান্ধাতা আমলের যুক্তিও রয়েছে তাদের।
ঐতিহাসিক দিক থেকে নাকি এই অংশগুলি তাদের। কিন্তু, কথা হল, বর্তমান সভ্যতার ইতিহাস তো পাঁচ হাজার বছরের। এই সময়ে পৃথিবী জুড়ে কত পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে! তাই চিনের সেই দাবিগুলিকে এক ধরনের কুযুক্তি বলাই দস্তুর। এটা একটা সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ছাড়া আর কিছু নয়।
এবার আসা যাক নেপাল প্রসঙ্গে। এখন নেপালের ক্ষমতায় রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। আর চিনও তথাকথিত কমিউনিস্ট দেশ। আর এ কথা তো সকলেরই জানা, বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে এক ধরনের চিন প্রেম দেখা যায়।
তাই ভারতের সঙ্গে এতদিনের সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে নেপাল সরকার আচমকাই চিনের প্রেমে ভাসতে শুরু করে দিয়েছে। তারা বুঝতেও পারছে না, কী ভুল করতে চলেছে তারা। ইতিমধ্যে নেপালের বিশেষজ্ঞরা চিন নিয়ে অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নেপালের শাসক কমিউনিস্ট পার্টি সেই উদ্বেগকে পাত্তা দিতে নারাজ।
এ কথা এখন সহজবোধ্য, চিনের উস্কানিতেই নেপাল এখন লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ— এই তিনটি অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের সংসদে পাশ করিয়ে নিয়ে আইনে পরিণত করেছে। কিন্তু তাতে লাভ কোথায়? এ নিয়ে দুই দেশের মারামারি হবে। কিছু সেনার প্রাণ যাবে। এই–ই তো। এর বেশি নেপাল কী পাবে?‌ কিছুই নয়।
কারণ, আজ তো আপনি বা আমিও ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারটাকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারি। ক্ষমতা অনুযায়ী নিজেদের কোর্ট পেপারে লিখিয়ে উকিলকে টাকা দিয়ে সই করিয়ে নিতে পারি। তাতে ফ্রান্সের বয়েই গেল। আমাদের কল্পনায় আইফেল টাওয়ার আমাদের হলেও ফ্রান্স বা পৃথিবীর কাছে তার কোনও মূল্যই নেই।
নেপালের কাজটাও অনেকটা সেই রকমই হয়েছে। বন্ধু দেশ বলে ভারত বিষয়টা নিয়ে নেপালকে সতর্ক করে দিয়েছে শুধু।
মূল কথা হল, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি আদ্যন্ত ক্ষমতালোভী। তিনি এখন চিনপন্থী হয়ে উঠেছেন। তবে তাঁর এই নীতি নেপালের পক্ষে কতটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে, তা তিনি হয়তো এখন কিছুটা অনুমান করতে পারছেন। কিন্তু আর কিছু করার নেই তাঁর।
নেপালের শিক্ষাক্ষেত্রে চিনের আর্থিক সহায়তায় নেচে উঠেছিলেন তিনি ও তাঁর সরকার। বিনিময়ে নেপালের স্কুলগুলিতে চিনের ভাষা (‌মান্দারিন)‌ পড়ানোর অনুমতিও দিয়েছেন। ৩০–৪০ বছর পর ওই ভাষাই নেপালি ভাষাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় সেই প্রশ্নও নেপালের অনেকের মনেই এখন দানা বেঁধে উঠেছে।

বলা বাহুল্য, এটাই ছিল নেপালে চিনের পা ফেলার প্রথম ধাপ। এর পর তো আরও একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। খোদ নেপালের কৃষি দফতরই একটি রিপোর্ট দিয়েছে, যা তাদের অলি সরকারকেই অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপাল ভূখণ্ডের একটা বিশাল অংশ ইতিমধ্যেই নাকি চিনের অধীনে চলে গিয়েছে। এখন আবার উত্তর নেপালের নদীপথ বদলে তিব্বতে রাস্তা বানাচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি নদীর গতিপথ সরে গিয়েছে। ফলে নেপালের চারটি জেলার ৩৬ হেক্টর জমি চিনের কবজায় চলে গিয়েছে। সেখানে চিন সশস্ত্র সেনার বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট তৈরি করবে। ফলে উত্তর নেপালেরও অনেকটা অংশ চিনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
আর এ ভাবেই নেপালকে কার্যত কবজা করে নিতে চাইছে চিন। তার পর একদিন বলে উঠবে, ঐতিহাসিক দিক থেকে নেপাল তাদেরই। আর তিব্বতের মতোই নেপালও চিনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ব্যাপারটা কি অলি সরকার বুঝতে পারছে না? —পারছে, ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু এই মুহূর্তে চিনের বিরুদ্ধে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই কেপি শর্মা অলির সরকার।
কারণ, নেপালে অলি সরকারের জনভিত্তি একেবারেই নেই। মাঝে মধ্যেই সে দেশে অলি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে। তা ছাড়া সাধারণ নেপালিরাও চিনের সঙ্গে সরকারের এই মাখামাখি ভালো চোখে দেখছেন না।
এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে চিনের হস্তক্ষেপেই নেপালে নিজের গদি বাঁচান অলি। তখন থেকেই চিনের পরামর্শে তিনি এখন কৌশলগত ভাবে ভারত বিরোধী ইস্যুগুলিকে সামনে এনে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলতে চাইছেন।
তাতে সাধারণ নেপালিদের ভালো হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু নেপালের অনেক বিশেষজ্ঞেরই ধারণা, এ ভাবে চিনের পাঁচ আঙুল নীতির কাছে ধীরে ধীরে পুরো নেপালের হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও পুরোমাত্রায় রয়েছে।
এ ছাড়া এখন আবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, নেপালের দোদর্ন্ডপ্রতাপ কমিউনিস্ট নেতা প্রচণ্ডের সঙ্গে অলির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রচণ্ড নাকি নেপালের গদি থেকে অলিকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। ফলে পুরো বিষয়টিই নেপালের সার্বভৌমত্বের পক্ষে রীতিমতো শঙ্কার হয়ে উঠেছে।

এই হচ্ছে চিন। তাকে বিশ্বাস করাটা কতখানি ইতিবাচক, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। গালোয়ানের কথাই ধরুন। এই উপত্যকায় অশান্তি চায় না বলে এখন বারবার জানাচ্ছে চিন। ভারতের সেনা আধিকারিকদের এবং বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়ও তাদের তরফে বারবার ইতিবাচক কথাই বলা হচ্ছে। অথচ গালোয়ানে সেনা সমাবেশ এবং সামরিক তৎপরতা বিন্দুমাত্র কমায়নি তারা। ফলে ভারতও সেখানে সেনা তৎপরতা আগের চেয়ে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
এর ফল কী হবে, ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু উপমহাদেশের যাঁরা আজ চিনকে বন্ধু বা পরম মিত্র মনে করতে চাইছেন, তাঁরা একবার তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের কথা ভাবুন। ভাবুন জাপানের সঙ্গে চিনের সমস্যার কথা। ভাষার মতো যত দুর্বোধ্যই হোক না কেন বেজিংয়ের নীতি, ঘটনাগুলিকে অস্বীকার করবেন কী করে?

উত্তরগুলি কিন্তু আমাদের পুরোপুরি অজানা নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..