নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ভার্চুয়াল ক্লাসের নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব না হলেও করেনাকালীন পরিস্থিতিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে ভার্চুয়াল ক্লাস। এটুআই-এর সহযোগিতায় পরিচালিত ‘লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের প্লাটফর্মের মাধ্যমে কারিগরির শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এই পদ্ধতিতে।
অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, সারাদেশে এক রুটিনে ক্লাস চলছে। ভিডিও ক্লাসগুলো ফেসবুক গ্রুপে এবং ইউটিউবে আপলোড করা হচ্ছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষার সংক্ষিপ্ত কোর্সের জন্য কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই শর্ট কোর্সগুলোর ক্লাসও অনলাইনে নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল ভোকেশনালে ভার্চুয়াল ক্লাস চলছে গত ১৯ এপ্রিল থেকে। সংসদ টিভিতে সাধারণ ক্লাস নেওয়া হলেও টেকনিক্যাল ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণেই আমরা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। পরে কেন্দ্রীয়ভাবে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামের প্লাটফর্মে ক্লাস নিচ্ছি। এই ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া এবং মূল্যায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’ চালু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল ক্লাস পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করা হলেও আনুষ্ঠানিক কোনও নির্দেশনা এখনও দেওয়া হয়নি। তবে দেশের স্কুল-কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষ ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। যদিও এর আনুষ্ঠানিক কোনও মনিটরিং ব্যবস্থা এখনও নেই।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল থেকে এসেএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল ক্লাস শুরু হয় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সংসদ টিভিতে ‘ঘরে বসে কারিগরি শিক্ষা’ ভিডিও ক্লাস করানো শুরু হয়। এতে সাধারণ ক্লাস নেওয়া হলেও টেকনিক্যাল ক্লাস নিতে ফেসবুকের সহয়তা নেয় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অধিদফতরের নির্দেশে এসএসসি ভোকেশনাল এবং দাখিল ভোকেশনাল ক্লাস শুরু করা হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে ক্লাস শুরু করে অধিদফতর।
সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬৪টি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৫০টি এবং ৫শ’র বেশি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে কারিগরি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪টি ট্রেডে লেখাপড়া করে ৩ লাখ ২৩ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সিভিল মেকানিক্যাল ইলেট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটার ট্রেডে পাঁচটিতে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে ভার্চুয়াল ক্লাস করানোর জন্য আটটি বিভাগীয় টেকনোলজির শিক্ষক নিয়ে সপ্তাহে ৬০টি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে ‘লর্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস পরিচালিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারিগরিতে যারা লেখাপড়া করে, তাদের বেশিরভাগই গরিব শিক্ষার্থী। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন বা ট্যাব নেই। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি এসব শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ল্যাপটপ বা ট্যাব সরবরাহ করার জন্য। সেটি সম্ভব হলে শতভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইনে অংশ নিতে পারবে। কারণ আমাদের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পারদর্শী। দেশে কারিগরি শিক্ষার এনরোলমেন্ট বাড়াতে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।