নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারীতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি উদ্ধারে শিল্প খাতের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরির মতো শিক্ষা কার্যক্রম চেয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। শনিবারে ‘কোভিড ১৯ পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পখাতের প্রস্তুতি : বিনিয়োগ ও দক্ষতা’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনায় এই দাবি করেন ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটির নেতারা।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারাবিশ্বেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত। বাজার সঙ্কোচনের কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প, এসএমই খাত ও অনানুষ্ঠানিক খাতে বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও আমাদের দক্ষ শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোভিড সংকট কাটাতে ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে করতে শিক্ষা কারিকুলামের সংস্কার আনতে হবে এবং শিল্প খাতের চাহিদামাফিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা লাগবে। বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আনতে হলেও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রবাস থেকে ফেরত আসা কর্মী এবং স্থানীয় শিল্পখাত থেকে কর্ম হারানো শ্রমিকদের শিল্পখাতে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে সহযোগিতার আহ্বানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজনেস ইন্টিলিজেন্স লিমিটেডের উদ্যোক্তা শাকিব কোরেশি। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় শিল্প-কারখানার কাজের সুযোগ কমে যাওয়া ও বিদেশে হতে প্রবাসীদের দেশে ফেরত আসার কারণে আমাদের কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে অনেকই আত্ম-কর্মসংস্থানের দিকে ঝুঁকবে, তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক। এখন সময় এসেছে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আরও বেশি মাত্রায় জোর আরোপ করার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে সরকারি পলিটেকনিক্যালসমূহে ভর্তি হওয়ার জন্য বিদ্যমান বয়সের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে নতুন গ্রাজুয়েট এবং বিদেশ ফেরত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। দেশের বেসরকারি খাত বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শিল্পখাতের চাহিদামাফিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু এবং দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক (প্রশিক্ষণ) সাখাওয়াত আলীও বক্তব্য রাখেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের শিল্পখাত চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ মানব সম্পদ না থাকায় প্রতিনিয়ত আমাদেরকে বিদেশিদের নিয়োগদানের জন্য বিডার পক্ষ হতে অনুমতি দিতে হয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামকে শিল্পমুখী ও যুগোপযোগী করার বিকল্প নেই।
তিনি জানান, বিডা ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বর্তমানে ৬টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ১৮টি সেবা প্রদান করছে এবং আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে ৫২টি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকৌশলী শাখাওয়াত জানান, বিএমইটি ৭০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারাদেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রেখেছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে দেশে ফেরত আসা দক্ষ প্রবাসীদের কাজের ধরনের ভিত্তিতে একটি ডাটাবেইজ করা হবে।
ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, হুমায়ুন রশিদ, সাবেক সহ-সভাপতি খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেকপরিচালক খাইরুল মজিদ মাহমুদ, মো. শরফুদ্দিনও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।