কলকাতা সংবাদদাতা:এবার করোনা সংক্রমণের শিকার হলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা ‘ভারতরত্ন’ প্রণব মুখোপাধ্যায়। টুইট করে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসার কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এর পরই রাজনৈতিক মহলে তাঁকে নিয়ে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার বিকেলে তাঁকে দেখতে দিল্লির সেনা হাসপাতালে যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ কথা বলেন তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।
তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রমুখ। প্রণববাবুর করোনা সংক্রমিত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা অধীর চৌধুরিও। তাঁরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সোমবার টুইট করে নিজের করোনা সংক্রমণের খবর জানানোর পাশাপাশি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করেন, গত এক সপ্তাহে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা সকলেই যেন কোভিড–১৯ পরীক্ষা করিয়ে নেন এবং কোয়ারেন্টিনে থাকেন। জানা গিয়েছে, ছ’বছর আগে প্রণববাবুর হৃদযন্ত্রে ব্লকেজের সমস্যা দেখা দেয়। তার পর থেকেই তিনি নিয়মিত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকেন।
এরই মধ্যে রবিবার রাতে শৌচাগারে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। তাই এদিন সকালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফেরাল হাসপাতালে যান। সেখানেই তাঁর করোনা পরীক্ষা হয় এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পাশাপাশি মাথায় আঘাত পাওয়ার জন্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। তার পর তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে। তাঁকে আপাতত ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। টানা ৯৬ ঘণ্টা তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এদিকে, পশ্চিমবাংলায় করোনা সংক্রমণে একদিনে তিনজন প্রখ্যাত চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার করোনা সংক্রমিত হয়ে কোঠারি হাসপাতালের হৃদযন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাপস সিনহা, চক্ষু বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ মণ্ডল, শ্যামনগরের বিখ্যাত চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়। করোনায় তিন চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত চিকিৎসক মহল।
পাশাপাশি, এদিন রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সারা রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৯০৫ জন। ফলে রাজ্যে মোট সংক্রমণের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯৮ হাজার ৪৫৯ জনে। এঁদের মধ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৩১ জন। এদিন যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কলকাতার ৬১৮ জন, উত্তর ২৪ পরগনার ৪৯২ জন, পূর্ব মেদিনীপুরের ২১৮ জন, হাওড়ার ২০৯ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৯৫ জন, হুগলির ১১২ জন। এদিন করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে রাজ্যে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০০ জন। তবে এদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৩ হাজার ২০৮ জন। ফলে রাজ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠাদের মোট সংখ্যা হয়েছে ৭০ হাজার ৩২৮ জন। আর সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে ৭১.৪৩ শতাংশ।