বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পূর্ব মেদিনীপুর বলতেই সবাই এখন বোঝেন শুভেন্দু অধিকারীর অঞ্চল বলে। অনেকেরই ধারণা, পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দুই তৃণমূলের মূল শক্তি। আগে যেমন এই অঞ্চল ছিল লক্ষ্মণ শেঠের তালুতে বন্দি। আর তাই সিপিএমের জোর ছিল সেখানে। সেই লক্ষ্মণ শেঠকে রাজনৈতিক বনবাসে পাঠিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। দলের পর দল বদল করেও লক্ষ্মণ শেঠ আর রাজনৈতিক মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না এই জেলায়।
কিন্তু, সেই শুভেন্দু অধিকারীর হলটা কী? শাসক দলের নয়নের মণিই এখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ বৈঠকেই অনুপস্থিত থাকছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি অনুষ্ঠানগুলিতেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। যেমন বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামের সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন না। আবার হুল দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। বরং নিজের উদ্যোগে কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তাই দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিরক্ত তাঁর এই আচরণে। সে কথা ঘুরিয়ে বলে বুঝিয়েও দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। বলেছেন, ‘মন্ত্রিত্বের কাজ সুষ্ঠু ভাবে পালন করতে হবে।’
সূত্রের খবর, এত প্রশ্ন থাকলেও শুভেন্দুর মতো হেভিওয়েট নেতাকে সরাসরি ঘাঁটাতেও সাহস করছে না তৃণমূল। তবে অস্বস্তি কাটাতে এবার অভিনব পথে হাঁটতে চলেছে তারা। তৃণমূল শিবিরের একাংশের ধারণা, সেই পথে হাঁটলে অন্তত শুভেন্দুকে চাপে রাখা যাবে। এই শিবিরে জোর জল্পনা, সব দিক বিবেচনা করে লক্ষ্মণ শেঠের জন্য এবার দরজা খুলে দিতে পারে তৃণমূল। উল্লেখ্য, বাংলা থেকে বাম সরকার সরে গেলে লক্ষ্মণ শেঠ একা হয়ে যান। শেষে দূর্নীতির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এর পর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। পরে সেখান থেকেও সরে যান। যোগ দেন কংগ্রেসে। কিন্তু বাম আমলে যে প্রতাপ লক্ষ্মণ শেঠের ছিল, কোনও ভাবেই আর সেই ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছেন না।
এর মাঝে বেশ কয়েকবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন বলে খবর। কিন্তু সফল হননি। একবার সাংবাদিকদের কাছে বলেও ফেলেছিলেন, শুভেন্দুর জন্যই নাকি তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে পারছেন না। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু নাকি সদলবলে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। যদি তা হয়, পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের জমি অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। সেই জমি ফিরে পেতে এখন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাল্টা অস্ত্র হতে পারে লক্ষ্মণ শেঠই। অন্তত তাতে শুভেন্দুকে বেশ চাপে রাখা যাবে। কেন না, তা যদি সত্য হয়, সরকার ও প্রশাসন পাশে থাকার সুবিধাও লক্ষ্মণ শেঠ পাবেন। যা শুভেন্দুকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে পারে।
অঙ্ক কী হবে, ভবিষ্যৎই বলবে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি যা, তাতে পরিষ্কার, এই মুহূর্তে শুভেন্দুর সঙ্গে সরাসরি কোনও সঙ্ঘাতেই যাবে না দল। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে সমস্ত পথই খোলা রাখা হচ্ছে। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতারই বিশ্বাস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব বাংলাকে বাম শাসনমুক্ত করেছে। তাই শুভেন্দু–সহ সব নেতাদের এত রমরমা। আগামিদিনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বই বাংলায় তৃণমূলকে ক্ষমতায় রেখে দেবে। বরং যাঁরা তাৎক্ষণিক লাভের অঙ্ক কষছেন, তাঁরাই মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হবেন।