বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:ফের সঙ্ঘাত রাজ্যপাল–মুখ্যমন্ত্রীর। স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে রাজভবনে চা–চক্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ না দেওয়ায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় টুইট করে নিজের বিরক্তির কথা জানিয়ে দেন। বলেন, ‘রাজভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য একটি আসন রাখা হয়েছিল। ফাঁকা আসনটি থেকে স্পষ্ট যে একটা অপ্রত্যাশিত অবস্থা তৈরি হয়েছে, যে অবস্থা বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং নৈতিকতার সঙ্গে খাপ খায় না।’ শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি, আরও লিখেছেন, ‘চা–চক্রে যোগ না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনিক আধিকারিকরা খারাপ নজির গড়েছেন। এই ঘটনা সংবিধান মেনে না চলার আরও একটা বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত।’
যদিও বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যে রাজভবনে চা–চক্রে যোগ দিতে পারবেন না, সে কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার সকালে রেড রোডে কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে আসেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেলে রাজভবনের অনুষ্ঠানে আসতে পারব না। তাই আগেই রাজভবনে ঘুরে গেলাম। রাজ্যপালকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছাও জানিয়েছি।’ তবে এর পাল্টা একটি কথাও সরকারি মহলে ঘুরছে। তা হল, মুখ্যমন্ত্রী না হয় ব্যস্ততার জন্য রাজভবনে যাননি। কিন্তু প্রশাসনিক আধিকারিকরা রাজভবনকে এড়িয়ে গেলেন কেন? যদিও এ ব্যাপারে নবান্নর তরফে কিছু বলা হয়নি।
তবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তরফে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। রাজ্যপালকে ‘আঙ্কলজি’ সম্বোধন করার পাশাপাশি তিনি কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দিকেও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আঙ্কলজি এবার দাবি করেছেন, বাংলার রাজভবনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিশ্বাস করুন, এটা এমন বিষয়, যা আপনার গুজরাটের বস–রা অন্য কারও চেয়ে অনেক ভালো করতে পারেন। আমরা সেই তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষানবিশ।’ এর পাশাপাশি রাজভবনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অতিথির সংখ্যা রাখা হয়েছিল ৩৫–এর কম। কিন্তু মহুয়ার অভিযোগ, আমন্ত্রিত হয়েছিলেন নাকি ৯৬ জন। যদিও রাজভবনের তরফে এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
তবে এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীরই সমালোচনা করেছে সিপিএম। দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে পরিষ্কার বলেছেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের দিন তো আড্ডা মারার দিন নয়।’ রবিবার এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাজভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি কাম্য নয়। মুখ্যমন্ত্রী শুধু রাজনীতিই করতে শিখেছেন, আর কিছুই শেখেননি।’