বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বভারতী। আর সেই ঘটনায় তোলপাড় রাজ্যের শিক্ষা মহল। তবে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর পৌষমেলা হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী। জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বিশ্বভারতীর পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করে দেয় তারা। সূত্রের খবর, এ নিয়ে আপত্তি ছিল সেখানকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ও কিছু মানুষের। এই ঘটনায় রবিবার থেকেই তপ্ত হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি সেই কাজে বাধা দেয়। নির্মাণকাজে যুক্ত ঠিকাদার এবং কর্মীদের তারা মারধর করে বলেও অভিযোগ। স্থানীয় কিছু মানুষ সেদিন মিছিলও করে। আর সোমবার সেই উত্তাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি দলের কর্মীদের নিয়ে ওই এলাকায় মিছিল করেন। তার পরই হাজার খানেক মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়। তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিসে ভাঙচুর চালায়। ভেঙে দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর একটি গেটও। শুধু তাই নয়, জেসিবি দিয়ে পাঁচিলের ভিতও ভাঙা হয়। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবু এই ভাঙচুর অবাধে চলেছে।
পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া নিয়ে বিশ্বভারতীর বক্তব্য, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে এই কাজ শুরু হয়েছে। সিএজি–র নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনেরও পরামর্শ ছিল, নিরাপত্তার কারণে পৌষমেলার চারদিক পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষ এই পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজটি মেনে নিতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে গোলমাল হতে পারে ভেবেই স্থানীয় মহকুমা শাসক, জেলা শাসক এবং বীরভূমের পুলিশ সুপারকে অনেক আগে থেকেই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করার আবেদন জানায় বিশ্বভারতী। কিন্তু প্রশাসন বিশ্বভারতীর আবেদনে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বিশ্বভারতী আরও অভিযোগ করেছে, রবিবার রাতে আচমকাই কোনও কারণ না দেখিয়ে উপাচার্যের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা এনবিএফ কর্মীদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
পাশাপাশি বিশ্বভারতী এই অভিযোগও জানিয়েছে, বিশ্বভারতী চত্বরেই রয়েছে দুটি থানা। অথচ এদিন যখন তাণ্ডব চলছে, তখন কোনও পুলিশই সেখানে ছিল না। গোলমালের সময় পুলিশের অনুপস্থিতি নিয়েও বিশ্বভারতী প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে বিশ্বভারতীর তরফে ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করারও দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনার পরই পরিস্থিতি যতদিন না স্বাভাবিক হয়, ততদিন পর্যন্ত বিশ্বভারতী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ভর্তি এবং পরীক্ষার মতো জরুরি কাজগুলি চলবে। বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের কথা আচার্য এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ঘটনার কথা জেনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনও করেন। পরে এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। যদিও তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল আমাকে ফোন করার পর আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওখানে একটা নির্মাণকাজ চলছিল। সেই সময় বহিরাগতরা উপস্থিত ছিল। তাই ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে।’ কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পৌষমেলার মাঠে এদিন যারা ভাঙচুর চালায়, তারা কেউই ছাত্র ছিল না। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি জেলা শাসককে বলেছি, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে পড়ুয়া ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী গড়ে তুলেছিলেন প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদানের জন্য। বিশ্বভারতীর গৌরব এবং ঐতিহ্য যাতে অটুট থাকে, তা সকলের দেখা উচিত।’
ঘটনার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বভারতীতে তাণ্ডব এবং ভাঙচুরের ঘটনা এবং তা রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময়মতো পদক্ষেপ করতে না পারায় আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। সকলের কাছে আমি শান্তি বজায় রাখার জন্য আর্জি জানাচ্ছি।’