বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
‘দমবন্ধ হয়ে আসছে। মন চাইছে মুক্ত আকাশে মুক্তি।’
এ কথা লেখা হয়েছে ফেসবুকের একটি পোস্টে। লিখেছেন শীলভদ্র দত্ত। তিনি ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক।
পোস্টের বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা হামেশাই এই ধরনের পোস্ট দেখতে পাই ফেসবুকে। কিন্তু শীলভদ্রবাবুর এই পোস্টের পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন। অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি তৃণমূলে ফের ভাঙন ধরতে চলেছে? অর্জুন সিং চলে গিয়েছেন। মুকুল রায় চলে গিয়েছেন। এখন সংশয় দানা বেঁধেছে তৃণমূলের প্রবল প্রতাপশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। এবার কি তা হলে সেই তালিকায় চলে এসেছেন শীলভদ্র দত্ত। কারণও অবশ্য আছে। কারণ, তিনি এক সময় ছিলেন মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ।
এর আগেও শীলভদ্রবাবুকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, মুকুল রায়ের পথ ধরে তিনিও হয়তো দল ছাড়বেন, অথবা বিজেপিতে যোগ দেবেন। কিন্তু তেমন সম্ভাবনার কথা তিনিই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। আমি দল ছাড়ছি না। আমি তৃণমূলেই আছি।’
কিন্তু এবার? এবার কি তিনি দল ছাড়ার পথেই? যদি তা না–ই হবে, তা হলে কেন করলেন তিনি এই পোস্ট? কেন লিখেছেন, দমবন্ধ হয়ে আসছে? কোথায় দমবন্ধের মতো অবস্থা? তৃণমূলে? আর যদি তা না হয়, তা হলে তাঁর দমবন্ধ হয়েই বা আসছে কেন? তাই কি তিনি চাইছেন ‘মুক্ত আকাশে মুক্তি’? মানে, তৃণমূল থেকেই কি মুক্তি? এমনই নানা জল্পনা উড়ছে পশ্চিমবাংলার রাজনীতি চর্চা করেন যাঁরা, তাঁদের মনে।
যদিও সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন শীলভদ্র স্বয়ং। সাফ বলে দিয়েছেন, ‘দলবদলের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তেমন কোনও পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই।’ তা হলে এমন পোস্ট তিনি করলেন কেন? এই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন বিধায়ক। বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এক অদ্ভুত মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিচ্ছু ভালো লাগছে না।’ তাই এই পোস্টে নিজের মানসিক অস্থিরতার কথাই জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষকরা এত সহজে তাঁর যুক্তি মেনে নিতে সম্ভবত রাজি নন। তাই জল্পনা কিন্তু এখনও থেমে যায়নি। এর কারণও আছে। সম্প্রতি দলের ব্লক স্তরে রদবদল নিয়ে রাজ্যসভার এক সাংসদের সঙ্গে তাঁর তীব্র মতপার্থক্য হয়। এমনকী, সূত্রের খবর, সেই সাংসদের সঙ্গে রীতিমতো বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেইজন্যই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ওই ঘটনার পরই এই পোস্ট কেন? তবে কি দলের থেকে নিজের দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন তিনি?
তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ভাবার কোনও কারণ দেখছেন না বলেই জানিয়েছেন। তবে ঘটনা হল, দলের অভ্যন্তরে নাকি অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে দলের অনেকে, যাঁরা মাঝে মধ্যে দল নিয়ে ইঙ্গিতবহ কথা বলছেন, তাঁদের চলাফেরার দিকে নজরদারি করার দাবিও করেছেন তাঁদের কেউ কেউ।
সত্যিটা কী, তা হয়তো আগামিদিনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।