1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

“কোভিড ভাবনা”✍️✍️✍️মামুনুর রশীদ

  • Update Time : বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০
  • ৪১৮ Time View

আচ্ছা, ইঞ্জিন ছাড়া বৈঠা চালিত নৌকায় বসে কখনো পানিতে বৈঠা বাওয়ার শব্দ খেয়াল করে শুনেছেন?

আমি নৌকার গলুতে বসে আছি, দুই পা ই দুই পাশ দিয়ে ঝুলিয়ে পানিতে পা দিয়ে বসেছি। এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস, নৌকা তে বসলে আমি সবসময়ই এভাবে পা ছড়িয়ে পানিতে পা দিয়ে বসি। এরজন্য কত বকা খেয়েছি, সাঁতার জানিনা বলে কতজন কতভাবে ভয় দেখিয়েছে – কিন্তু এই অভ্যাস টা ছাড়তে পারিনি।

নৌকায় বসলে তাই এই জায়গাটা আমার চাই; ২য় অপশন ও অবশ্য আছে – সেটা হলো ছইয়ের উপরে।

তবে আমার এই ব্যাক্তিগত নৌকা ভ্রমনে মাঝি ছাড়া আর কেউ থাকেনা বলে, আমাকে জায়গা বাছার ঝামেলায় যেতে হয়না।

ইঞ্জিনের ভটভটানি শব্দে যত না আমার মাথা ধরে তারচেয়ে বেশী হয় হৃদয়ের ব্যাথা, আর চর্মচক্ষু খোলা থাকলে অনেক সময়ই আমি অন্তর্চক্ষু খুলতে পারিনা, দেহের এবং মনের চামড়া গন্ডারের চামড়ার মতো পুরত্বের হওয়ায় অন্য সুক্ষ্ম অনুভূতি গুলো ধরতে পারিনা, চিন্তার জগৎ দৃস্টিসীমায় আবদ্ধ হয়ে যায়; নিজের বোধের অক্ষমতা গুলোকে তাই এরুপ নানাবিধ কারণ দেখিয়ে তাদের উপর দোষ চাপাই!

আমি চোখ বন্ধ করেই বসে থাকি মাঝেমাঝে অনেক সময়ের জন্য। নিজেকেই নিজে সাইজির কথা শোনাই তখন, “চক্ষু অন্ধ দেলের ধোঁকায়, যেমন কেশের আড়ে পাহাড় লুকায়”……..

আমি মনোযোগ দেই সেই বৈঠা আর পানির সংযোজিত শব্দে।

এই নৌকার মাঝি আমায় অনেক দিন ধরে চেনে, তাই তাকে কিছু বলে দিতে হয়না – এখন সে প্রায় আমার মন বুঝতে পারে। যখন দরকার সে টুকটাক কথা বলে আবার যখন দরকার নেই সে একদম চুপচাপ হয়ে যায়। এই ঘনবসতিপুর্ন শহরের বুকের ভিতরে এমন নির্জন জায়গা যে আছে তা অনেকে জানেই না।

তাই আমি প্রায়ই আসি এখানে, জায়গাটা এখনো পিকনিক স্পট হয়ে যায়নি, হয়ে উঠেনি এই শহরের বিনোদনের অভাবে ভুগতে থাকা কোটি মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা, সেটাই আমাকে স্বস্তি দেয়!

এই মাঝি ও এখানকার স্থানীয় মানুষ, প্রথমে আমার এমন হুটহাট এসে চুপচাপ নৌকায় বসে থাকাটা তার কাছে অদ্ভুত লাগলেও, এখন নাকি সেও উপভোগ করে, সেও নাকি অনেক কিছু চিন্তা করতে পারে সেইসময়!

এই ছোট্ট হাওড়ের মতো জায়গাটা আমার অদ্ভুত আপন মনে হয়, আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি জানান দেয় এই জায়গাটা, তাছাড়া পৃথিবীর মানুষ যখন গৃহবন্দী হয়ে গিয়েছে তখন এই বেলা শেষের বেলায় সামাজিক দুরত্ব মেনেই আমি পা ছড়িয়ে গলুই তে বসে থাকতে পারি এখানে এসে, কখনো সন্ধ্যা অবদি আবার কখনো বা অনেক রাত অবদি, যতক্ষণ আমার ভালো লাগে!

এমনিতেই আশেপাশে জনমানব কম বলে চারিদিক বেশ চুপচাপ, এখন এই অবস্থায় সেটা আরো বেশী। এই পড়ন্ত বিকেল বেলাতে ও নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজ ও শুনতে পাচ্ছি। হাতের ভারী খাবারের ব্যাগ টা মাঝিকে দিয়ে ভারমুক্ত হয়ে গলুই তে বসে আছি অনেকক্ষণ; এমনিতেই বিকাল বেলায় মনটা অস্থির হয়ে থাকে, তারমধ্যে এখন বিশ্বব্যাপী এই অদ্ভুত হাহাকার! ভীষণ মন খারাপ হয়ে আছে, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে, সুন্দর এক হালকা রং এ ছেয়ে আছে চারিধার; মনের গহীন থেকে কেমন অদ্ভুত এক হাহাকার উঠছে। কোন কোন দুপুরে বিশাল লম্বা ভাত ঘুম দিয়ে উঠলে বুকের ভিতরে যেমন হাহাকার করে উঠে তেমন।

সেই হাহাকার কি এই পৃথিবী নামক সুন্দর ছোট্ট গ্রহটির আগামীর কুৎসিত রুপ হবে সেটা চিন্তা করে, নাকি এই গ্রহের ভবিষ্যৎ বাসিন্দাদের জন্য কতটা ভয়ংকর হবে সেটা ভেবে নাকি নিতান্তই নিজের জন্য আমি ঠিকভাবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনা বা বুঝতে চেস্টা করিনা!

আমি পায়ের নীচে ঠান্ডা পানির বইয়ে চলা অনুভব করি, বৈঠার প্রতিটি ধাক্কার সাথে সাথে যেন জীবন থেকে সব সরে যাচ্ছে।

আমি চারিদিকে মানুষের হাহাকার শুনি চোখ বন্ধ করে, মহামারী তে মানুষ মরছে প্রতিদিন, এত এত মানুষের মৃত্যু দিনে দিনে আমাকে স্থবির থেকে প্রায় জড় পদার্থ বানিয়ে দেয়; আমি শুধু নাম্বার দেখি এখন, এরাও যে কারো প্রিয়জন – প্রিয়মুখ তা ভুলে যাই।

আমি বাবা অথবা মা কে ১৪ দিন আইসোলেটেড থাকার কারনে বাচ্চাদের থেকে আলাদা থাকার কথা শুনি, পাশাপাশি রুমে থেকে ছোট বাচ্চাদের কে আদর করতে না পারার হাহাকারের কাছে তাদের কোভিট ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ায় কস্টের স্বল্পতার গল্প শুনি। সবাই যখন এই কোভিট ১৯ নিয়ে ব্যাস্ত সেই সময়ে আমি অন্য অসুস্থতায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া মৃতের স্বজনের কান্না শুনি; কোভিট আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা না করাতে পারার হতাশার আস্ফালন শুনি, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রিয়জনের হারিয়ে যাওয়ার খবরে ব্যাকুল হওয়া ভাষাশূণ্য চোখ দেখি, কোভিটে মারা যাওয়ায় লাশ দাফন করতে না পারাদের আর্তনাদ শুনি; ঘরে খাবার না থাকা কৃষক থেকে সম্ভান্ত্র মানুষের কষ্টের চাপা কান্না শুনি; এই মহামারীর মাঝেই ধষি’ত হওয়া বাচ্চাদের পরিবারের কান্না শুনি; যুদ্ধের দামামায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের আর্তনাদ শুনি; শুধুমাত্র বর্ন আর ধর্মের অমিলে মানুষে মানুষে সহিংসতার বিভৎস রুপ দেখি-

আমি অস্থির বোধ করি, নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য অস্থির হই, আংগুলের ফাঁকে পুড়ে যাওয়া সিগারেটের ছ্যাকা লাগে- আমি চোখ খুলি, শান্ত চোখে অস্থির মনে চারপাশে তাকাই – চারপাশের পৃথিবীটাকে দেখি – এমন শান্ত নীরব ই থাকার কথা ছিল সবকিছু, সব সময়!

আমি নৌকার মাঝির দিকে তাকাই, আলো আধারে তার মুখ দেখতে পাইনা তবুও আশ্বাসের স্মিত হাসি দেই, মুখ ঘুরিয়ে আবার চোখ বন্ধ করি।

কতবার ভেবেছি কেমন হয় যদি এই বন্ধ চোখ আর না খোলে? অদ্ভুত শুণ্যতা টের পাই বুকের ভিতরে, ভয় পেয়ে যাই কিন্তু তার পরপরই একসময় চোখ মেলে তাকাই, তবে সে শুধুই তাকিয়ে থাকা কিছুই আর দেখা হয় না,দেখতে চাই না আসলে৷ এই তাকিয়ে থাকা আর না থাকা সময়ের মাঝে একমনে খসড়া করে চলি আমার কর্তব্যের, প্রাপ্তির – অপ্রাপ্তির, আনন্দ – বেদনার; এর সবই একদিন লেখা হবে বলে আজ কিছুই লেখা হয়না! অথবা কে জানে, হয়তো ইতিমধ্যেই কোথাও না কোথাও সব লেখা গিয়েছে!

আমি উসকো খুসকো মন নিয়ে ভাবতে থাকি ডায়নোসরের এই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো কথা, ভাবতে থাকি মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার কথা, মহেঞ্জোদারো সভ্যতার কথা, মায়া সভ্যতার কথা, তারাও কি কখনো আমাদের মতো ভাবনা শুরু করেছিলো কিংবা আমরাও কি নিজেদের এই লোভ হিংসার মাঝে অথবা লোভ লালসার জন্য ই বিলুপ্ত হয়ে যাবো?

ভবিষ্যতের কেউ একজন খুঁজে বের করবে আমাদের করোটি অথবা পাঁজরের হাড়; তাচ্ছিল্য ভরে অন্যদের শোনাবে এক উচ্ছৃংখল মানব সভ্যতার কথা!

আমি ক্লান্তি বোধ করি, ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে থাকা ব্রেন আমার এরচেয়ে ভাবতে দেয় না; আমি শান্ত ভংগী তে খুব ধীরে পা নাড়তে থাকি। আমি টের পাই আমার ট্রাউজার ভিজে যাচ্ছে, আমি টের পাই আমি পড়ে যাচ্ছি নৌকার গলুই থেকে; আমি নিশ্চুপ হাসি – পারলামনা শেষ পর্যন্ত আঁকড়ে থাকতে। সবাইকে ই একদিন এভাবে পড়ে যেতে হয় সবকিছু দিয়ে আঁকড়ে ধরা জীবন থেকে।

আমি তলিয়ে যাচ্ছি স্বচ্ছ পানির নীচে, এখনি হয়তো আমার বুকে – মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনতে পাই -আমার কানে কানে কে যেন বলে উঠে –

আমি কোথাও থাকি না তো
তবুও ও থাকি সব প্রান্তরে;
নিজের মাঝেই নিজেই লুকাই/
আমায় তুমি খুঁজে পাবে নিজেরই অন্তরে…..

লেখক:মামুনুর রশীদ,লন্ডন

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..