বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:রাজ্যের কমিউনিস্ট নেতাদের দিকে নাকি নজর প্রশান্ত কিশোরের (পিকে)। বিশেষ করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সিপিএম নেতাদের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করতে চান তিনি। সেই চেষ্টা নাকি জোর কদমে শুরু করে দিয়েছে তাঁর দলের প্রতিনিধিরা।
এই মুহূর্তে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে বহুল চর্চিত নাম পিকে বা প্রশান্ত কিশোর। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অভূতপূর্ব জয়ের পর নিজেদের অবস্থা সামাল দিতে তাঁকে নাকি তৃণমূলের তরফে নিয়ে আসা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূলের কোনও নেতাই প্রকাশ্যে কখনও কোনও মন্তব্য করেননি, বা রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁর কথা স্বীকার করেননি। সূত্রের খবর, সেই পিকের দল নাকি তৃণমূলের ভিত মজবুত করতে এখন সারা রাজ্যে জোরদার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। প্রশান্ত কিশোরেরই পরামর্শেই রাজ্যে ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলার গর্ব মমতা’ প্রভৃতি কর্মসূচি চালু করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল।
শোনা যাচ্ছে, এই দলের টার্গেটে রয়েছেন এখন কমিউনিস্ট নেতারা। পূর্বতন বাম সরকারের যে সব নেতা বা মন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল, তাঁদের তৃণমূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করে চলেছে তারা। এ কথাও জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে পিকের দলের এখন বেশি নজর রয়েছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু বাম, বিশেষ করে সিপিএম নেতাদের দলে টানার ব্যাপারে এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি পিকের দল। এ ব্যাপারে উল্লেখ করা যায় সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোক্তার হোসেনের কথা। তাঁর কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, পিকে–র দলের তরফে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় তাঁর কাছে। কিন্তু ৭ বছর আগের পুরনো ঘটনার কথা এখনও তিনি ভুলতে পারেননি। তখন জলপাইগুড়ি লাগোয়া ভাঙামালি এলাকায় সিপিএমের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কর্মীরা।
সেই ঘটনার কথা তিনি পিকের দলকে জানিয়ে দেন। পিকের দলের তরফে তাঁকে বলা হয়, সেই ঘটনার জন্য তৃণমূলের নেতারা এসে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবেন। এর পরেও কিন্তু তিনি পিকের দলের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেননি। কিন্তু এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়। তিনি বলেছেন, ‘তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তাঁরাও এমন ঘটনা বহু ঘটিয়েছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, সেইসব ঘটনার জন্য তাঁরা কেউই ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী নন। তাই তাঁদের তৃণমূলে আসতে বাধা নেই। তাঁরা তৃণমূলে আসেন, তা হলে আমাদের আপত্তি নেই। সে ক্ষেত্রে আরও ভাল কাজ করার সুযোগ পাবেন তাঁরা।’
পিকের টিমের একই অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন বন প্রতিমন্ত্রী বনমালী রায়ের ক্ষেত্রেও। ফোন করলেও মুখের ওপর পিকে–র দলের প্রতিনিধিকে ‘না’ বলে দিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মহেন্দ্র রায়ও পিকে–র দলের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, পিকের দলের সঙ্গে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও। যদিও সিপিএম সাংসদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি ওই বিধায়ক স্বীকার করেননি।