বছরের প্রথমে, ছেলে আমার দুই বিষয়ে ফেল!
স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির কাছে ঘুরাঘুরি করে, বাধ্য হয়ে ডোনেশন দিয়ে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করলাম ছেলে আমার মস্ত বড় হবে সে আশায়। সকালবেলা ছেলে স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ে স্কুলে যায়, দেখতে বাবার ভালোই লাগে, মনটা ভরে যায়। কিন্তু বাবা তো রিকশাচালক স্কুলের আশে পাশের এলাকার রাস্তাগুলোয় বাবা রিক্সা চালায়। তাই মাঝেমধ্যেই ছেলেকে স্কুলের কোনায় অথবা কোন খারাপ ছেলের সাথে বাবা দেখতে পায় বাবার মাথাটা নীচু হয়ে আর ভাবে, “ছেলে আমার মস্ত বড় হব”
এইতো আর কয়টা দিন একটু বড় হলে বুঝতে শিখবে, তখন আর আমার দুঃখ থাকবে না। মাস হয় ছেলে বলে বাবা স্কুলের বেতন লাগবে, পরীক্ষার ফি লাগবে, বাবা সেটা যত কষ্টই হোক মাসের বেতন, পরীক্ষার ফি ছেলের হাতে তুলে দেয়।কারণ একদিন ছেলে অনেক বড় হবে সেই আসায়।আবার কোন দিন রাস্তার পাশে ছেলেকে দেখতে পায় বন্ধুদের সাথে বিড়ি খাচ্ছে। হয়তো মনের অজান্তেই চোখ থেকে জল জল করে বেরিয়ে আসে দুফোঁটা অশ্রু জল।আবার ভাবে এই বয়সে একটু একটু এটা সেটা করবে বড় হলে আবার ঠিক হয়ে যাবে কারণ “ছেলে আমার মস্ত বড় হবে”এই যে সড়ক দিয়ে ছোট ছোট চকচকে করে গাড়ি চলে যায় এটা আমার ছেলের হবে কারণ “ছেলে আমার মস্ত বড় হবে”। এক মাস দুই মাস করে বছরের শেষ! ছেলে বলে বাবা সামনে ফাইনাল পরীক্ষা শুনে বাবার মনটা ভরে যায়।
এইতো প্রায় শেষ, সামনে দুই বছর পর ছেলের মেট্রিক পরীক্ষা। তা বাবা, কত টাকা পরীক্ষার ফিস? ছেলে বাবার হাতে একটি ছোট্ট কাগজ দিয়ে পালিয়ে যায় আর বলে হেডমাস্টার এর তোমাকে দেখা করতে বলেছে ছেলের মুখে হেডমাস্টার কথা শুনে মনটা আনন্দে ভরে উঠল।কারণ ছেলে আমার মস্ত বড় হবে।
শহরে কত দামি দামি লোকের সাথে মিশবে, কত কিছু শিখবে, ছেলে ঠিকি মস্ত বড় হবে। একদিন যায় দুই দিন যায় মাঝে মাঝেই সহপাঠী রিক্সাওয়ালার মুখে শুনতে হয় তোমার ছেলে মানুষ হবে না। এইতো সেদিন দেখলাম তারা তিনজন মিলে এক জনের মোবাইল ছিনতাই করেছে। বাবা বলল সত্যি আমার রুবেল ওই তিনজনের মধ্যে একজন ছিল! আমি নিজের চোখে দেখেছি। এই কথা শুনে বাবা বলল আজ ঘরে যাই ওর একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়ব।এদিকে আজকের ছিনতাইয়ের ঘটনা যে করিম চাচা দেখে ফেলেছে সেটা রুবেল জানে, তাই আজ আর সে ঘরে ফেরে নাই।এদিকে রুবেলের মা রাতে কিছুই খাইনি, আমি সকাল সকাল বেরিয়ে গেছি। রুবেলের মা বলে কিছু একটা খেয়ে যাও। বাবার মনতো, ছেলে রাতে ঘরে ফেরে নাই এটা ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি জমে যায়।আর ভাবে “ছেলে আমার মস্ত বড় হবে ”
বাবা এদিকে খালি পেটে রিকশা চালায় তার পা আর চলে না মাথাটা যেন ঘুরছে। এমন সময় পিছন থেকে কড়া ভাষায় বলছে এই ব্যাটা রিক্সা নিয়ে এদিকে আয়। বাবা পিছন ফিরে তাকাতে দেখতে দ পায় রুবেলের হাতে কড়া , সাথে দুজন পুলিশ। বাবা এক পলক তাকিয়ে থাকে রুবেলের দিকে। আর ভাবে ছেলে আমার অনেক বড় হবে। এই টা ভাবতে ভাবতে কখন যে পিচ ঢালায় পরে গিয়েছি খেয়ালই করি নাই। বাবা পরে যাওয়া দেখে,রুবেল পুলিশের হাতকড়া পরা অবস্থায় দৌড়ে ছুটে বাবার নিকট আসতে চায়, আর তখন রুবেলকে এনকাউন্টার করে একজন পুলিশ সদস্য। তখনও বাবা ভাবতে থাকে “ছেলে আমার মস্ত বড় হবে”