বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে সারা পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলকেই চমকে দিলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বোলপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে তিনি জানান, অনুব্রত মণ্ডল চাইলে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। হিংসার পথ ছেড়ে বিজেপিতে আসতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁর সেই আবেদন নাকি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখবেন বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।চাপেই হোক, বা অন্য কোনও কারণে, যদিও শাসক দলের সূত্রে প্রতিদিনই খবর পাওয়া যাচ্ছে, বিজেপি–সহ বাংলার সমস্ত বিরোধী দল থেকেই দলে দলে কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। যদিও তৃণমূলের এমন দাবিতে বিরোধী দলগুলি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং সেই দলবদল নিয়ে উদাসীনতাই দেখাচ্ছে তারা। বলা বাহুল্য, বিরোধী দলগুলির এমন মনোভাব তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের, বিশেষ করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাই দলে যোগ দিলেও নির্বাচনের সময় তাঁরা আন্তরিক ভাবে দলের পক্ষে থাকবেন কিনা, সেই নিশ্চয়তা কী করে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে, আপাতত সেই পথই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তৃণমূলের জেলা নেতারা।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের উদ্যোগে বিভিন্ন দল থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা ও কর্মীদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর প্রক্রিয়া রাজ্য জুড়েই চলছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরকে অনেকেই মুখের ওপর ‘না’ও বলে দিচ্ছেন। প্রশান্ত কিশোরের পাশাপাশি তৃণমূলের অন্য নেতারাও বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু তো পরিষ্কার বলেই দিচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে অনেক নেতা ও কর্মীদের নাকি বলা হচ্ছে, তৃণমূলে যোগ না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে গাঁজা, নারী পাচারের মামলা দিয়ে দেওয়া হবে। এমনকী, প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেও বিরোধী নেতা ও কর্মীদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দলবদল করাতে চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং প্রশান্ত কিশোর।ঠিক সেই সময় বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন মন্তব্য ঘিরে রীতিমতো চমকে গিয়েছে রাজনৈতিক মহল। বোলপুরে ‘বাংলা বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’ শীর্ষক বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে জয় বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, ‘২০২১ সালে বাংলার ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই। এ ব্যাপারে আর কোনও সংশয় নেই। শুধু তাই নয়, বীরভূমের ১১টি বিধানসভা আসনেই বিজেপি জয়লাভ করবে। তৃণমূলের পাশাপাশি পতন হবে অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষমতারও। তাই তিনি ইচ্ছে করলে নিজেকে বাঁচাতে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে তাঁর জন্য বিজেপির দরজা খুলে দেওয়া হবে।’ বোলপুর মহকুমা দফতরের সামনে অনুষ্ঠিত সেই কর্মসূচিতে যদিও জয় বলেছেন, ‘বিজেপিতে যোগ দিতে হলে অবশ্য স্বচ্ছ ও সৎ ভাবমূর্তির হতে হবে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের সেই ভাবমূর্তি মোটেও নেই।’
তা হলে অনুব্রত মণ্ডলকে কেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে বলছেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা যথেষ্ট বেশি। সংগঠক হিসেবেও তিনি যথেষ্ট ভালো প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু বীরভূমে তাঁর নিজের গড়ই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই যদি তিনি ভালো হতে চান, হিংসার পথ ছেড়ে যদি প্রেম ও ভালবাসার পথে আসতে চান, তা হলে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতেই পারেন। তিনি যদি সেই ইচ্ছে প্রকাশ করেন, তা হলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখবেন।’ বিষয়টি নিয়ে বিজেপির অন্য নেতারা মুচকি হেসেছেন। কিন্তু কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। তা হলে কি সত্যিই অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীদের জন্য দরজা খুলে দিতে চলেছে বিজেপি? এ বিষয়ে আপাতত মৌনতার পথই অবলম্বন করেছে গেরুয়া শিবির।কিন্তু যাঁকে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সেই অনুব্রত মণ্ডল কী মনে করছেন? জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রতিক্রিয়াই বা কী? তবে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর শিবিরের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। অবশ্য জয়ের এই একটি কথাতেই তৃণমূলের অভ্যন্তরে গোপনে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বীরভূমে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের তৎপরতা বাড়ার পর থেকেই যেন তৃণমূল শিবিরের কোনও কোনও নেতা সিঁদূরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন।