বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পশ্চিমবাংলায় ফের বিতর্কে জড়ালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এবার তাঁর নিশানায় পুলিশ। রবিবার নিজের চা–চক্র কর্মসূচিতে পুলিশ আধিকারিক ও তাঁদের পরিবারকে যে ভাষায় তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন, তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। শাসক দল এবং তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। যদিও কোনও সমালোচনাকেই পাত্তা দেননি দিলীপ। পরিষ্কার উড়িয়ে দিয়েছেন সমস্ত সমালোচনাই।
রবিবার খড়দহের সোদপুর বোর্ডঘরে এবং ঘোলা বাসস্ট্যান্ডের চা–চক্রে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের মধ্যে যাঁরা তৃণমূলের পরামর্শে আমাদের কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দিয়ে পেশাগত দিক থেকে সরকারের কাছে থেকে প্রশংসা আদায় করছেন আর সেইজন্য আনন্দে আছেন, তাঁদের এই আনন্দ বেশিদিন থাকবে না। কারণ, তৃণমূল আর ক্ষমতায় থাকবে না। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আমরাই ক্ষমতায় আসব। তখন সব হিসেব কিন্তু আমরা করব। এই পুলিশ অফিসাররা তখন আর স্ত্রী–সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন কিনা, সন্দেহ আছে। যাঁরা এখন শাসক দলকে তুষ্ট করে পুরস্কার হিসেবে ছেলেমেয়েদের বেঙ্গালুরু পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছেন পড়াশোনা করতে, ছেলেমেয়েরা ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার হবে ভেবে স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের স্বপ্ন সফল হতে দেব না। তাঁদের পরিযায়ী শ্রমিক বানিয়ে ছাড়ব। তখন এই পুলিশ অফিসারদের কাঁদতে হবে।’
দিলীপ ঘোষের এমন মন্তব্যের পর রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্যে। অনেকেই তাঁর মন্তব্যের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। শাসক দলের অনেক নেতা এবং সরকারের মন্ত্রীও তাঁর রুচিবোধ নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলেছেন। আবার সমালোচকদের মধ্যে রাজ্যের শাসক দলের অনুগত কিছু বুদ্ধিজীবীও রয়েছেন। কিন্তু কোনও সমালোচনাকেই পাত্তা দেননি দিলীপ। এর আগেও রাজ্যের এই বুদ্ধিজীবীদের রীতিমতো ব্যঙ্গ করেছিলেন তিনি। তাই তিনি যে বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনাকে গুরুত্ব দেবেন না, তা অনুমানের বাইরে ছিল না। দিলীপবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যা বলছেন, তা মিথ্যে নয়। এই রাজ্যে সাধারণ মানুষ ভালো নেই। তাদের ভালো না থাকার কারণই হল এই রাজ্যের শাসক দল। আর এই দলের সমস্ত অপরাধকে আড়াল করে চলা এবং বিরোধী দল, বিশেষ করে বিজেপি কর্মী–সমর্থকদের ফাঁসিয়ে দেওয়াই এখন পুলিশের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর স্পষ্ট কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কখনও অন্যায় হতে পারে না।
উল্লেখ্য, এর আগে শুক্রবার বিজেপি নেতারা একই ভাবে হুমকি দিয়েছিলেন শাসক দলের পাশাপাশি পুলিশকে। সেই বিজেপি নেতাদের তালিকায় ছিলেন দিলীপ ঘোষ থেকে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারাও। সেদিন দলের তরফে রাজ্যে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তঁারা বলেছিলেন, সরকার বদল হয়ে যাওয়ার পর তৃণমূলের দাস হয়ে যাওয়া পুলিশকর্মীরা শান্তিতে থাকতে পারবেন না। আর রবিবার দিলীপবাবু বললেন, ‘যে সব অফিসার বেশি লাফালাফি করছেন, তাঁদের জীবনের সমস্ত শান্তি আমরা কেড়ে নেব। যে সব তৃণমূল নেতারা সবসময় আমাদের কর্মীদের চোখ রাঙাচ্ছেন, পুলিশকে দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, তাঁদের কেউ রেহাই পাবেন না। মনে রাখবেন, আমার হারানোর কিছু নেই। মানুষের জীবনের শান্তি নষ্ট করছেন যে সব পুলিশ অফিসার ও তৃণমূল নেতা, তার সব হিসেব আমরা নেব। কাউকে ছাড়ব না। কাল চাকা ঘুরবেই।’
এদিনের চা–চক্র থেকে তিনি দলের কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘ইঞ্চি–ফুট সাইজের নেতাদের নাম–ধাম লিখে রাখুন। আগামী বছর সমস্ত হিসেব কড়ায়–গন্ডায় বুঝে নেব।’ এখানেই থেমে যাননি তিনি। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনেক তো ভাঙার খেলা খেললেন। এবার একটু গড়ার চেষ্টা করুন। না হলে যে দিন সরকারটা ভেঙে দেব, সে–দিন কিন্তু সবাই অনাথ হয়ে যাবেন।’ রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে সরকারের দাবিকে বিদ্রূপ করে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, লন্ডন নয়, কলকাতা ভেনিস হয়ে যাচ্ছে!’ বিশ্বভারতীর পাঁচিল ভেঙে দেওয়ার ঘটনা এবং তাতে শাসক দলের নেতাদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে তিনি তালিবানি ব্যবস্থার সঙ্গেও তুলনা করেন।