বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:পশ্চিমবাংলায় ফের স্বমহিমায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বুধবার রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে ‘ভিখিরি’ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। এদিন বোলপুরে ‘চায়ে পে চর্চা’য় তিনি দলীয় কর্মী–সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথা বলেই। সেই সময়ই তিনি রীতিমতো তোপ দাগেন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে। স্পষ্ট বলেন, ‘এরা শুধু টাকা চায়। টাকা ছাড়া আর কিছু এরা জানে না। আবার, টাকা পেয়ে গেলে সেই টাকা কী খাতে খরচ হয়েছে, তার হিসেবও দেবে না।’ এর পরই তিনি রাজ্য সরকারকে ‘ভিখিরি’র সঙ্গে তুলনা করেন।
এদিন সকালে বোলপুরের রাস্তায় হাঁটতে বের হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বাঁধগোড়ার একটি চায়ের দোকানে তিনি ‘চায়ে পে চর্চা’ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন, সেই দোকান বন্ধ। তখনই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানান, শাসক দলই ভয় দেখিয়ে দোকানদারকে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। তখন তিনি পাশের অন্য একটি দোকানে চলে যান। সেখানেই বসে পড়েন। শুরু করে দেন জনসংযোগ। সেখানে তিনি পরিষ্কার বলেন, ‘যেখানেই আমি ‘চায়ে পে চর্চা’ করতে যাই, সেখানেই দেখি নির্দিষ্ট সময়ে দোকানটি বন্ধ রয়েছে। বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, ইচ্ছাকৃত ভাবেই সেইসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাওড়া থেকে ইকো পার্ক, গলফ ক্লাব —সব জায়গাতেই একই ঘটনা ঘটেছে। তার পরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাইক হাতে নিয়ে বড় বড় কথা বলে যান!’
সেই দোকানে বসেই তিনি রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন। রাজ্য সরকার যে জনসাধারণকে ঠিক তথ্য দিচ্ছেন না, তা–ও সকলকে বুঝিয়ে বলেন। শুধু তাই নয়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করেও তাঁর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি সব সময় হুমকি দেন। হুমকি দিতেই পছন্দ করেন। বারবার বলেন, কেন্দ্রের ট্রেন ঢুকতে দেব না, বিমান ঢুকতে দেব না। কিন্তু, কেন্দ্রের দেওয়া চাল, ডাল হাত পেতে তিনি নেবেন। কারণ, সে–সব নিলে লুঠ করা সহজ। পরে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া যায়। আবার কখনও সে–সবই নিজেদের নামে ত্রাণ হিসেবে বিলি করে দেওয়া যায়।’ রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাদের কাজই হল বিরোধিতা করা। তাই সব কিছুতেই তারা কেন্দ্র ও বিজেপির বিরোধিতা করে। কিন্তু টাকা চাই তাদের। আর দিতে হবে কেন্দ্রকেই। কিছু একটা হলেই কেন্দ্রের কাছে হাত পেতে বলবে, টাকা চাই, টাকা দাও। টাকার জন্য ভিখারির মতোই আচরণ করে এরা।’
এদিন বোলপুর থেকে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে চলে যান। সেখানে পৌঁছে রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ লকডাউনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। স্পষ্টই বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশ না মানার ফাঁক খুঁজে নিয়ে এই লকডাউন করা হচ্ছে। আর এই লকডাউন করা হচ্ছে করোনা আটকানোর জন্য নয়, বিজেপিকে রোখার জন্য। কিন্তু এতে যে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে, তা বোঝারও ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। রবিবার নিট পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার আগের দু’দিন টানা লকডাউন করার মানে কী? সরকারের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিকই শুধু নয়, অপরিণামদর্শীও।’
এদিন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক সম্বন্ধেও মুখ খোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, শোভনদা পুরো কাজের মধ্যে থাকুন। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান। আমাদের দল তাঁর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে লাভবান হবে। সেইজন্য আমরা তাঁকে পাশে চাইছি। তিনি যে ধরনের কাজ করতে চাইবেন, সেই কাজই তাঁকে আমরা দেব।’