বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:যিনি সব সময় সকলকে নির্দেশ দিতে অভ্যস্ত, যাঁকে দলনেত্রী ছাড়া কেউই কিছু বলার সাহস পান না, সেই অনুব্রত মণ্ডলকে চমকে দিলেন দলের মহিলা কর্মীরাই। কর্মিসভায় তাঁরা নেতাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, কাজ না হলে ভোট নয়। আর বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত রীতিমতো হতবাক হয়ে গেলেন তাঁদের সেই স্পর্ধায়। তবে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এদিন মেজাজ হারাননি। মহিলা কর্মীদের কাছ থেকে ক্ষোভের কারণ জেনে নিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনেরও নির্দেশ দিলেন এলাকার নেতাদের।
২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এখনই রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন জায়গায় কর্মিসভা করছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে যে সব অঞ্চলে বিজেপির তুলনায় তৃণমূল অনেক কম ভোট পেয়েছে, সেইসব অঞ্চলের সভাপতিদের বকাঝকা করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন। শুক্রবার এমনই একটি সভা হয় সিউড়ির ১ নম্বর ব্লকের আলুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাকুরিয়া গ্রামে। ওই সভাতেই অঞ্চল সভাপতিকে নির্দেশ দিতে গিয়েই থমকে যান অনুব্রত। তাঁকে চুপ করিয়ে দেন দলের মহিলা কর্মীরা। স্পষ্ট বলেন, ‘আগে কাজ করে দেখান, তার পর ভোট পাবেন। আর কাজ না হলে ভোটও পাবেন না।’
মহিলা কর্মীরা যে তাঁকে এ ভাবে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন, তা ভাবতে পারেননি অনুব্রত। প্রথমে তিনি হতবাক হয়ে যান। তার পর নিজেকে সংযত করে তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনাদের কী সমস্যা? জল পাচ্ছেন না?’ মহিলা কর্মীরা জবাব দেন, ‘কল আছে। কিন্তু জল নেই।’ তার পর অনুব্রত জানতে চান, ‘আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন?’ মহিলা কর্মীরা জানান, ‘অধিকাংশ সাধারণ কর্মীরাই পাননি।’ তাঁদের কথা শুনে সমস্যাটা কোথায়, তা অবশ্য অনুব্রত বু্ঝতে পেরে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অঞ্চল সভাপতিকে নির্দেশ দেন, ‘কোনও কথা শুনতে চাই না। সকলের সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করো।’ তার পর তিনি মহিলা কর্মীদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।
অনুব্রত মণ্ডলের এ ভাবে প্রকাশ্যে দলের মহিলা কর্মীদের সামনে বিড়ম্বনায় পড়ার খবর মুহূর্তেই জেলা জুড়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি করে। সেই রেশ পৌঁছে যায় রাজ্য রাজনীতিতেও। জেলা বিজেপি অবশ্য এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে দ্বিধা করেনি। তারা অনুব্রত মণ্ডলের আশ্বাসে যে কোনও ভরসা নেই, তা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। তাদের বক্তব্য, সাড়ে ৯ বছরে যাঁরা কোনও কাজ করেননি, তাঁরা ৬ মাসে কিছুই করতে পারবেন না। সাধারণ মানুষ সব বুঝে গিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্য থেকে তৃণমূল মুছে যাবে।